‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
মঙ্গলবার

১৪ জানুয়ারী ২০২০

৫:৫৮:৩২ AM
1002175

আইন আল-আসাদে হামলায় ব্যবহৃত ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো, সাধারণ রকেট ও মোর্টার শেলের চেয়ে ৩০০০ গুন বেশী শক্তিশালী। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশী ছিল যে, ৪ টনের একটি দেয়ালকেও উপড়ে ফেলে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): জেনারেল কাসেম সোলেইমানি, আবু মাহদি আল-মুহানদিস ও তার সাথীদেরকে কাপুরুষোচিতভাবে হত্যার জবাবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে পড়া ইরাকের আইন আল-আসাদ মার্কিন ঘাঁটিতে উপস্থিত হয়ে অবস্থানরত সেনাদের সাথে কথা বলেছেন সিএনএনের প্রতিবেদক। মার্কিন কর্তৃপক্ষ বারংবার ঐ হামলায় কোন সৈন্য হতাহত হয়নি বলে দাবী করলেও, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভয়ে মার্কিন সৈন্যদের আতঙ্কিত হওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে প্রতিবেদনে।
আইন আল-আসাদ ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের মুহূর্তের ভিডিও দিয়ে শুরু হওয়া ঐ প্রতিবেদনে সিএনএন প্রতিবেদক জানিয়েছেন: ‘মার্কিন বাহিনী হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়াতে অভ্যস্ত নয়, সাধারণত তারা হামলাকারীর স্থানেই থাকে’। হামলার মুহূর্তের অনুভূতি জানাতে গিয়ে এক মার্কিন সেনা জানিয়েছে, ‘মিথ্যা বলবো না, আমি ঐ মুহূর্তে ভয় পেয়েছিলাম’। অবশ্য মার্কিন প্রশাসনের মত তারও দাবী, ঐ ঘাঁটির বেশীরভাগ সৈন্যকেই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভয়ে আগেই বাংকারে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।
সিএনএন প্রতিবেদকের সংযোজন: মার্কিন বাহিনী ঐ রাতে হামলার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল যে, ইরান এ ঘাঁটিতে হামলার সময় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি স্থল পথে হামলা করবে এবং রকেট ও মোর্টারও ব্যবহার করবে।
প্রতিবেদনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ঐ মার্কিন ঘাঁটির চিত্র দেখিয়ে বলা হয়েছে: অন্য কোন রাতে এ হামলা হলে ঐ অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনী অথবা আমেরিকার মিত্রদের ২৫০০ সেনার একটি অংশ ঐ ঘাঁটি উপস্থিত থাকত এবং হামলার শিকার হত।
ঐ ঘাঁটিতে অবস্থানরত মার্কিন সেনা কর্মকর্তা টিম কারল্যান্ড জানান, ‘ইরানের রকেট হামলার ভয়ে সৈন্যরা ঘাঁটির বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে এবং তারা পরস্পর থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে, যাতে এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সৈন্যদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। এছাড়া বেশিরভাগ সৈন্যকেই বাংকারে সরিয়ে নেয়া হয়, যে বাংকারটি ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দামের সময় তৈরী করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১টার দিকে যাদের পক্ষে সরে যাওয়া সম্ভব ছিল তারা ঐ বাংকারগুলোতে আশ্রয় নিল যেগুলো তাদের পুরোনো শত্রু সাদ্দামের সময় তৈরী করা হয়েছিল।
ঘাঁটির অপর মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা স্টেসি কোলম্যান বলেন, ‘বাংকারগুলো ব্যালিস্টিক মিসাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবেই তৈরী করা হয়েছিল, কিন্তু হামলার তীব্রতা এতটাই বেশী ছিল যে, প্রতিটি আঘাতেই বাঙ্কারের দরজা ভেতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছিল। হামলা শুরু হওয়ার পর তখনও অনেকে উন্মুক্ত স্থানে তাদের পোস্টে ডিউটিতে ছিল। আর কেউ কেউ তুলনামূলক ছোট বাংকারে অবস্থান নিয়েছিল; যেগুলো রকেট ও মোর্টার হামলার জন্য তৈরী করা হয়েছিল, ব্যালিস্টিক হামলার জন্য নয়।
হামলার সময় ঘাঁটির বাইরে থাকা মার্কিন সেনা মার্ক রিজোন বলেন: ‘আমরা বালির উপর হাটছিলাম। হঠাত পূব আকাশ একটি হলুদ দাগ দেখতে পেলাম। তখন সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম এবং চিৎকার করে বলতে লাগলাম ‘আসছে’। এভাবে অন্যদেরকে সতর্ক করে দিতে চাইছিলাম। এর পরপরই [ক্ষেপণাস্ত্র] আঘাত হানে।
এরপর ঐ প্রতিবেদনে, মার্কিন বাহিনীর ড্রোন ইউনিটের সদস্যদের বিশ্রামস্থল দেখানো হয়। ঐ স্থানটি পুড়ে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
অপর এক সেনা ইরানের হামলাকে ভয়ংকর বলে আখ্যায়িত করে সিএনএন প্রতিবেদককে জানিয়েছে, যে বাসস্থানে তারা থাকতো তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।
আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঘাঁটির অন্যান্য রাতের থেকে ঐ রাতটি ছিল আলাদা। তারা প্রায় ২ ঘন্টা বাংকারে ছিল এবং এর মোকাবিলা বা জবাব দেয়ার ক্ষমতাও তাদের ছিল না।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের শক্তি সম্পর্কে ঐ প্রতিবেদক জানিয়েছে, যে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে সেগুলো সাধারণ রকেট ও মোর্টার শেলের চেয়ে ৩০০০ গুন বেশী শক্তিশালী। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশী ছিল যে, ৪ টনের একটি দেয়ালকে উপড়ে ফেলে।
প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, ইরান ও তার মিত্রদের ভয়ে ঘাঁটিতে এখনো জরুরী অবস্থা জারি রয়েছে। এরপূর্বে যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে তাদের ভাষ্যমতে এ [হামলা] অন্য কোন ব্যাটল ফিল্ডের সাথে এর তুলনা হয় না। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও শত্রুর সামনে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে মানুষ যে অসহায়ত্বের অনুভব করে তা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়েছিল। যে হামলার পূনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, যদিও তা আগের মত তীব্র নাও হয়।
প্রসঙ্গত, জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার জবাবে ইরানের আইআরজিসি’র এরোস্পেস ফোর্স কর্তৃক পরিচালিত ঐ হামলায় ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। যার সবকটি ইরাকের আইন আল-আসাদ মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত হানে। হামলায় প্রায় ১ শত সেনা নিহত এবং ২ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।#ফার্সনিউজ