‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
বুধবার

২৫ মার্চ ২০২০

৬:৫৩:২১ AM
1020284

ফার্সি নববর্ষ উপলক্ষে মাজমা’র মহাসচিবের বাণী

মাজমা’র মহাসচিব বলেছেন: গত বছর মাজমার বিভিন্ন বিভাগে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সাধারণ পরিষদেও কাঠামোগত এ পরিবর্তন আসবে। যাতে এ সংস্থা নিজের বরকতময় তৎপরতার ৪০তম বছরের শুরুতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তদের (শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রীক) চাহিদা মেটাতে পারে।

হলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): ইরানি -১৩৯৯ সালের- নববর্ষ তথা নওরোজ উপলক্ষে বিশ্বের মুসলমানদের বিশেষ করে আহলে বাইত (আ.) এর প্রেমীদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা প্রদান করেছেন আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার (মাজমা) মহাসচিব আয়াতুল্লাহ রেজা রামাজানী।

গত বছরের (১৩৯৮ ফার্সি) সালে ঘটা বিভিন্ন তিক্ত ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করার পর তিনি বলেন: গত বছর বেশ কিছু বড় অর্জনেও সামর্থ হয়েছে বিশ্বের মুসলমানরা।

গত বছর মাজমার বিভিন্ন বিভাগে রদবদলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন: মাজমায় কাঠামোগত পরিবর্তন ও সাধারণ পরিষদকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তদের চাহিদা মেটানোর।

আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার মহাসচিবের বার্তার মূল অংশগুলো:

بسم لله الرحمن الرحیم

یا مُقَلِّبَ القُلُوبِ و الأبصار؛ یا مُدَبِّرَ اللَّیْلِ و النَّهَار؛ یا مُحَوِّلَ الحَوْلِ و الأَحوَال؛ حَوِّلْ حالَنَا إلی أحسَنِ الحال

সৌরবর্ষ হিসেবে ১৩৯৯ সনটির শুরু আরবি হিজরী (চন্দ্রবর্ষ) ১৪৪১ সনের রজব মাসের সমসাময়িক। বছরটি, আহলে বাইত (আ.) এর ইমামতের ধারার সপ্তম ইমাম হজরত মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর স্মরণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বছরটির শুরুতেই মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ আনন্দের দিন তথা মহানবি (স.) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি দিবস, বছরটিকে আরও বরকতময় করে তুলবে।

মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এই সামসময়িকতা আমাদের জন্য বরকত, ভালবাসা বয়ে আনবে এবং আমাদের প্রতি মহানবি (স.) ও তাঁর নিষ্পাপ বংশধরগণের খাস দৃষ্টির কারণ হবে। আমরা আশাবাদী যে, পবিত্র এই সত্ত্বাদের উসিলায় মুসলিম উম্মাহ’র রুদ্ধ দ্বারসমূহও উন্মুক্ত হবে।

গত বছর ১৩৯৮ (ফার্সি) সালে (যা ছিল ১৪ রজব ১৪৪০ হিজরী থেকে ২৪ রজব ১৪৪১ হিজরী এবং ২১শে মার্চ ২০১৯ থেকে ১৯ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত) বিশ্বের মুসলমান ও আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তদের জন্য বিভিন্ন কাঙ্খিত ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে।

প্রাকৃতি দূর্যোগের পাশাপাশি বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদও বিশ্বের মুসলমানদের জন্য সৃষ্টি করেছে নানান সমস্যা। যেসকল বিপর্যয় তারা সৃষ্টি করেছে সেগুলো মধ্যে রয়েছে:

১। ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনের অক্ষকে দূর্বল করার লক্ষ্যে ইরাক ও লেবাননে বিদেশী দূতাবাসসমূহকে উস্কানী প্রদান।

২। সারা বছর জুড়ে নাইজেরিয়াতে যা আমরা লক্ষ্য করেছি; অবৈধভাবে শাইখ যাকাযাকিকে সস্ত্রীক অবৈধভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। তাদেরকে তাদের ন্যায্য অধিকার চিকিৎসা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। বছরটিতে (সরকারি বাহিনীর হামলায়) শাইখের কয়েকজন সমর্থকের শাহাদাতের ঘটনাও ঘটেছে।

৩। ইরান ও ইরাকের দুই মহান ব্যক্তিত্ব লে. জেনারেল শহীদ হাজ কাসেম সোলেইমানি ও শহীদ জামাল জাফার আলে ইব্রাহিম ওরফে আবু মাহদি আল-মুহানদিস এবং তাদের সহযোগিদেরকে কাপুরুষোচিতভাবে হত্যার ঘটনা। ট্রাম্পের এ সন্ত্রাসী পদক্ষেপ অত্যন্ত তিক্ত হলেও বিশ্বে ইসলামি বিপ্লবের চেতনার মাঝে নতুন করে জীবনের সঞ্চার করেছে এ দুই ব্যক্তিত্বের শাহাদত।

৪। ২টি দেশের ৮টি শহরে দুই মহান ব্যক্তিত্বের ঐতিহাসিক জানাযা ও তাদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন, মার্কিন বাহিনীকে ইরাক থেকে বহিস্কারের বিষয়ে ইরাকি পার্লামেন্টে বিল পাশ এবং এর ধারবাহিকতায় বাগদাদে লক্ষ লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণে মিছিল এবং পার্লামেন্টের বিলের প্রতি তাদের সমর্থন -ইরান ও ইরাক দুই জাতির দৃঢ়তা ও অটলতাকে বিশ্ববাসীর সামনে আবারও প্রমাণ করেছে।

৫। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাহরাইনে আটককৃত ব্যক্তিদের কারাগারে মানবেতর অবস্থায় দিনাতিপাত, সৌদি আরবে গণহারে মৃত্যুদণ্ড, ইয়েমেনের উপর অমানবিক আগ্রাসন ও দেশটির অসহায় জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ফিলিস্তিনীদের উপর দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর পাষণ্ডতা, কোমোরোসে ‘সৈয়দ আহমাদ সামবি’কে অবৈধভাবে আটকে রাখাসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমান ও আহলে বাইত (আ) এর অনুসারীদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের বিপরীতে বিশ্বের মানবাধিকারের পতাকা বাহকদের (নিরবতা তাদের) মুখে কালিমা লেপন করেছে।

৬। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কাশ্মিরে এবং বছরের শেষে ভারত জুড়ে বিশেষ করে নয়া দিল্লিতে যে তিক্ত ঘটনার সাক্ষী আমরা তাতে গোটা বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয় ব্যথিত, তারা ক্ষুব্ধ।

৭। বছর শেষে মুসলিম উম্মাহসহ গোটা বিশ্বের মানুষের মাঝে করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ; যার কারণে এ নাগাদ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।

৮। ইরানের সাহসী জনগণের উপর নতুনভাবে অপরাধী মার্কিন সরকারের অবৈধ নিষেধাজ্ঞা গত বছরে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর অন্যতম। বড় শয়তানের (আমেরিকা) জনসাধারণ বিরোধী এ সকল পদক্ষেপ বর্তমান জরুরী অবস্থাতেও অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে ইরানে ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা মূলতঃ বিশ্ববাসীর মনে সাম্রাজ্যবাদের কুৎসিত চেহারাকে অধিক প্রকাশিত করেছে।

কিন্তু এ সকল তিক্ত অভিজ্ঞতার মাঝেও মুসলমানরা বেশ কয়েকটি বড় অর্জন হস্তগত করতে সক্ষম হয়েছে:

প্রতি বছরই আশুরার অনুষ্ঠান ও ইমাম হুসাইন (আ.) এর আরবাইনের (চল্লিশা) পদযাত্রায় লোক সমাগম বেড়েই চলেছে, অত্যাধুনিক মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোনকে ভূপাতিত ও সুসজ্জিত মার্কিন ঘাঁটি আইন আল-আসাদে ইরানের হামলার মাধ্যমে মার্কিনীদের দম্ভকে খর্ব করা হয়েছে, মুসলিম বিশ্ব কর্তৃক জায়নবাদী প্রকল্প ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ প্রত্যাখ্যান, আপদমস্তক সুসজ্জিত আগ্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে ইয়েমেনের প্রতিরোধী জনতার বিজয়, বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় লেবানন ও ইরাকে তৎপর প্রতিরোধ আন্দোলন গ্রুপগুলোর বিচক্ষণতা, সন্ত্রাসীদের কবল থেকে সিরিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকা মুক্ত করণ, হৃদয়সমূহের নেতা কাসেম সোলেইমানি’র জানাযায় লক্ষ লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ আন্দোলনের মনোবল আরও শক্তিশালী হওয়া এবং মুসলিম বিশেষজ্ঞদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন সফলতা ছিল এ সকল অর্জনের অন্যতম।

গতবছর ইরানের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল আরও একটি বৃহৎ অর্জন। ইসলামি ইরানের জাগ্রত ও সচেতন জনতা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভবিষ্যত রাজনৈতিক রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করেছে; যাতে এর মাধ্যমে সকল চাপ ও সংকটের মাঝে সমাজে নতুনভাবে আশার জীবন সঞ্চারিত হয়। এর বিপরীতে (ইরানি জাতির) শত্রু গণমাধ্যমগুলো বিরাট অংকের বাজেট ব্যয় করে ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে অক্ষম হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে এবং জনগণ যাতে ভোট কেন্দ্রগুলোতে উপস্থিত না হয় সে লক্ষ্যে তারা তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে।

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আত্মত্যাগের নতুন ও উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চিকিৎসক ও নার্সসহ এ অঙ্গনে তৎপর সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এবং স্বেচ্ছাসেবীরা।

গত বছর আমরা যে সকল কাঙ্খিত ও অনাকাঙ্খিত ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি সেগুলো ছিল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পরীক্ষা। যে পরীক্ষা মহান আল্লাহর সুন্নতের ভিত্তিতে অব্যাহত থাকবে এবং আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদেরকে এ পরীক্ষা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে মাথা উঁচু করে বেরিয়ে আসতে হবে। যাতে যুগের মহান ইমাম (আ.) এর আবির্ভাব এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব প্রস্তুত হতে থাকে।

গত বছর আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা (মাজমা)-এর কয়েকটি বিভাগের ম্যানেজিং এবং এক্সিকিউটিং সেক্টরে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সাধারণ পরিষদেও কাঠামোগত এ পরিবর্তন আসবে। যাতে এ সংস্থা নিজের বরকতময় তৎপরতার ৪০তম বছরের শুরুতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তদের (শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক) নতুন চাহিদাগুলো মেটাতে সক্ষম হয়।

আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তদেরকে সেবাদানের লক্ষ্যে আমার উপর আস্থা রেখে যে গুরুদায়িত্ব আমার উপর অর্পন করেছেন সেজন্য আমি আবারও ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁকে এ নিশ্চয়তা দিতে চাই যে, আমার নিয়োগের আদেশে আপনি যে নির্দেশনা দিয়েছেন সে অনুযায়ী, আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা নিষ্ঠার সাথে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা প্রসার ও মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবে।  

এছাড়া, আমি আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার (মাজমা) উচ্চতর পরিষদ, সাধারণ পরিষদ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাজমা’র সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থাসহ কেন্দ্রীয় অধিদপ্তরে কর্মরত আমার সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। যারা বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও সংকটের মাঝেও নিজেদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে এ সংস্থার তৎপরতা তথা আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তদের চিন্তা, সংস্কৃতি ও সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

সবশেষে, বসন্তের প্রাণবন্ত ও বরকতময় দিনগুলোতে সবাইকে অভিনন্দন জানাই এবং আশাবাদী যে, ১৩৯৯ (ফার্সি) সালটি হবে আন্তরিকতা, সহৃদয়তা, পারস্পারিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বছর। আর মহান আল্লাহর কৃপায়, ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা চলতি বছরকে ‘উৎপাদন বৃদ্ধি’র যে নাম করণ করেছেন তার নেতৃত্বে উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে ইসলাম ও ইরানের শত্রুদের মাথা আমরা নুইয়ে দিতে সক্ষম হব। যাতে এই কষ্ট ও সংকটের পেছন থেকে সম্মানিত ইসলামের পতাকা স্বমহিমায় আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

তিনি তার বার্তার শেষে এ দু’টি আয়াত উল্লেখ করেন : (﴿ إنَّ مَعَ العُسرِ يُسرا﴾) ‘নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।’ এবং (﴿ ألَا إِنَّ نَصرَ اللَّهِ قَرِيب﴾) ‘তোমরা শুনে নাও, আল্লাহর সাহায্য একান্তই নিকটবর্তী।’#176