‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
বুধবার

৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

৬:৪৬:২৩ AM
1069028

পবিত্র কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে মাজমা’র মহাসচিবের বিবৃতি

সুইডেন ও ফ্রান্সে ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার মহাসচিব বলেছেন, সত্যিই আমরা অবাক হয়েছি যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ উন্নতির যুগে মাঝে মাঝে এ ধরনের মূর্খতাপূর্ণ পদক্ষেপ মানব সমাজকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সেটাও আবার ইউরোপে; যারা নিজেদেরকে নতুন শতাব্দির সভ্যতা ও সংস্কৃতির পতাকাবাহক বলে মনে করে।

হলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): সুইডেনে পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ এবং ফরাসি পত্রিকায় মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননার প্রতিবাদে গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি প্রদান করেছেন আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার মহাসচিব।

আয়াতুল্লাহ রেজা রামাজানি তার বিবৃতিতে এ ধরনের ঘৃণ্য, অসামাজিক ও মানবাধিকার বিরোধী পদক্ষেপকে নির্মূল করতে শান্তিপূর্ণ ও সাংস্কৃতিক পন্থা অবলম্বনের জন্যে বুদ্ধিজীবী সমাজ, মানবাধিকার সংস্থা এবং ইউরোপীয় সরকারগুলির প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন: ধর্মীয় উগ্রতা –যা ‘দায়েশ’ (আইএসআইএস) ও ‘বোকো হারামে’র মত গ্রুপগুলোর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে- এবং ধর্ম বিদ্বেষ কেন্দ্রীক উগ্রতা –যা পবিত্র কোরআনের অবমাননাকারী ইসলাম বিদ্বেষী গ্রুপ এবং মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননকারী পত্রিকা ‘চার্লি হেবদো’র মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে- উভয়ই এক ক্ষুরের দুই প্রান্ত। তারা মূলতঃ যৌক্তিকতা, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, শান্তি, স্বাধীনতা, আধ্যাত্মিকতা এবং মানব সমাজের প্রশান্তিকে টার্গেট করেছে।

 

বিবৃতির পূর্ণ অংশ:

بسم الله الرحمن الرحیم

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে

কয়েক দিন আগে দুঃখজনকভাবে ইউরোপের ২ দেশে ধর্ম ও মানবাধিকার বিরোধী দু’টি ঘটনা ঘটেছে। যা মুসলমানদেরকে মর্মাহত এবং মানবাধিকার বিষয়ে তৎপর ব্যক্তিদের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। ঘটনার একটি হল, সুইডেনে কয়েকজন উগ্র ড্যানিশ নাগরিক কর্তৃক পবিত্র কুরআনে অগ্নি সংযোগ এবং অপরটি হল ফরাসী পত্রিকা ‘শার্লি এবদো’তে মহানবি হজরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (স.) এর অবমাননা।

আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ উন্নতির যুগে মাঝে মাঝে এ ধরনের মূর্খতা পূর্ণ পদক্ষেপ মানব সমাজকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সেটাও আবার ইউরোপে; যারা নিজেদেরকে নতুন শতাব্দির সভ্যতা ও সংস্কৃতির পতাকাবাহক বলে মনে করে।

এরচেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হল এ ধরনের (অবমাননাকর) পদক্ষেপ ‘বাক ও চিন্তা স্বাধীনতা’র নামে নেয়া হচ্ছে। অথচ বাক ও আকিদাগত স্বাধীনতা কোন ধর্মের পবিত্র নিদর্শন এবং অন্যের আকিদাকে অবমাননার সম্পূর্ণ বিরোধী।

এ ক্ষেত্রে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার মহাসচিব হিসেবে -১০০ টিরও বেশী দেশের স্কলার যে সংস্থার সদস্য- নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বের বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও স্বাধীনতাকামীদের এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলোর –বিশেষতঃ ফ্রান্স ও সুইডেনের- দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:

১। সুইডেনের উগ্র ডানপন্থীদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ এবং ফরাসী পত্রিকার অন্যায় পদক্ষেপ; ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া ছাড়াও ঘৃণা সৃষ্টির স্পষ্ট উদাহরণ, যা মূলতঃ ধর্ম, চিন্তা ও আকিদাগত স্বাধীনতা লঙ্ঘনের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

২. এ দুই পদক্ষেপ এবং এর ন্যায় অন্যান্য পদক্ষেপ, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সনদের ১নং ধারার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ১নং ধারাতে বলা হয়েছে, ‘সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিৎ’।আর বিশ্বের ২০০ কোটির বেশী মানুষের নিকট পবিত্র এমন কিছুর প্রতি অবমাননা ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব প্রসূত আচরণ নয়।

৩. ফ্রান্স ও সুইডেনে যে দু’টি ঘটনা ঘটেছে তা মানবাধিকার সনদের ১৮নং ধারা বিরোধী। ঐ ধারাতে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখিত হয়েছে, ‘চিন্তাগত পার্থক্যের কারণে কোন ব্যক্তির অপর কারো অবমাননার অধিকার নেই’। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ধর্মীয় নির্দশনের প্রতি অবমাননার -ফ্রান্স ও সুইডেনে যা ঘটেছে- কারণে সৃষ্টি ইসলামভীতির ফলে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা পদদলিত এবং তাদের ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুষ্ঠানাদি সীমাবদ্ধ হওয়ার কারণ হয়েছে।

৪. ২৬নং ধারাতে শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বকে ‘সকল জাতি, গোত্র এবং ধর্মের মধ্যে সমঝোতা, সহিষ্ণুতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়াস’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সুইডেন এবং ফ্রান্সে যে অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটেছে তা মানবাধিকার সনদের এ ধারার পরিপূর্ণ বিরোধী। ফলে ‘শান্তি রক্ষা (ও প্রতিষ্ঠা)-য় জাতিসংঘকে সহযোগিতার যে কর্মসূচী গৃহীত হয়েছে তা কখনও ফলপ্রসু হবে না।

৫. সনদের ২৯নং ধারার ভিত্তিতে ‘প্রত্যেকেরই সমাজের প্রতি পালনীয় কর্তব্য রয়েছে’ এবং ‘আপন স্বাধীনতা ও অধিকারসমূহ ভোগ করার সময় প্রত্যেকে‌ই কেবলমাত্র ঐ ধরনের সীমাবদ্ধতা দ্বারা নিযন্ত্রিত হবেন যা অন্যদের অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ নিশ্চিত করা এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নৈতিকতা, গণশৃংখলা ও সাধারণ কল্যাণের ন্যায়ানুগ প্রয়োজন মেটাবার জন্য আ‌ইন দ্বারা নির্নীত হবে।’ অথচ সু্ইডেনে পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ‘মালমো’ শহরের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি শার্লি এবদো’র এমন অমানবিক পদক্ষেপ ইতিপূর্বেও ফ্রান্স ও ফ্রান্সের বাইরে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার জন্ম দিয়েছে।

৬. মানবাদিকার সনদ ছাড়াও (সুইডেন এবং ফ্রান্স উভয়েই এ সনদে স্বাক্ষর করেছে এবং এর প্রত্যেকটি ধারা বাস্তবায়ন তাদের জন্য আবশ্যক) ১৯৬৬ সালে পাশ হওয়া ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি’র দৃষ্টিতেও এ দুই দেশে যা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। এ চুক্তির ১৯নং ধারা অনুযায়ী ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিশেষ অধিকার ও দায়িত্ব এবং নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে হবে। ১৯নং ধারায় উল্লেখিত বিষয়াদির ২টি হল:

(ক) অন্যের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

(খ.) জাতীয় নিরাপত্তা অথবা জনশৃংখলা বা জনস্বাস্থ্য অথবা নৈতিকতার জন্য যেরূপ আবশ্যক কেবল সেরূপ হবে।

অতএব, সুইডেনওফ্রান্সেযেদু’টিঘটনাঘটেছেসত্ত্বাগতএবংসত্ত্বাবহির্ভূতউভয়অবস্থাতেই ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি’র বিরোধী।

উপরোক্ত ৬টি বিষয়ে যা কিছু উল্লিখিত হয়েছে তা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণিত হয়েছে, আর এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, যদি ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে এ ঘটনাগুলো যাচাই করা হয় তাহলে পৃথিবীর সকল ধর্ম একে প্রত্যাখ্যান করে। যার উপর স্বতন্ত্র ও বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন।

অতএব, উল্লিখিত বিষয়াদির ভিত্তিতে, প্রথমত বিশ্বের বুদ্ধিজীবী, স্বাধীনতাকামী ও আদর্শিক ব্যক্তিদের কাছে, দ্বিতীয়তঃ নাগরিক বিষয়ক সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থা প্রতি এবং তৃতীয়তঃ ইউরোপীয় সরকারগুলোর প্রতি এ ধরনের ঘৃণ্য, অসামাজিক ও মানবাধিকার বিরোধী পদক্ষেপকে নির্মূল করার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ ও সাংস্কৃতিক পন্থা অবলম্বনের আহবান জানাচ্ছি।

এবিষয়েরপ্রতিলক্ষ্যরাখাজরুরীযে, ধর্মীয়উগ্রতা –যা ‘দায়েশ’ ও ‘বোকোহারামে’রমতগ্রুপগুলোরমাধ্যমেপ্রকাশিতহয়েছে- ওধর্মবিদ্বেষকেন্দ্রীকউগ্রতা –যাপবিত্র কোরআনের অবমাননাকারী ইসলাম বিদ্বেষী গ্রুপ এবং মহানবি (স.) এর প্রতি অবমাননকারী পত্রিকা ‘চার্লি হেবদো’রমাধ্যমেপ্রকাশিতহয়েছে- উভয়ইএকক্ষুরেরদুইপ্রান্ত। তারামূলতঃযৌক্তিকতা, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, শান্তি, স্বাধীনতা, আধ্যাত্মিকতাএবংমানবসমাজেরপ্রশান্তিকেটার্গেটকরেছে।

মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (স.), পবিত্র কুরআন অথবা ইসলামি বিধান সম্পর্কে যে কোন প্রশ্নের উত্তর প্রদানে শান্তিপূর্ণ ও উগ্রতামুক্ত ইলমি ও সাংস্কৃতিক আলোচনা সভা আয়োজনের বিষয়ে আমি আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার প্রস্তুতির ঘোষণা করছি। কেননা এটা স্বয়ং আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ। তিনি বলেন:

ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالحِكمَةِ وَالمَوعِظَةِ الحَسَنَةِ وَجادِلهُمْ بِالتِي هِيَ أحسَن...؛

‘জ্ঞান-বুদ্ধি আর উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তুমি (মানুষকে) তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান জানাও আর লোকেদের সাথে বিতর্ক কর এমন পন্থায় যা অতি উত্তম।’ [নাহল: ১২৫]

রেজা রামাজানি

মহাসচিব, আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা

৪ সেপ্টেম্বর ২০২০