‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শুক্রবার

২০ আগস্ট ২০২১

৮:১৯:৪৯ AM
1171289

দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দাপট

দেশের বিভিন্ন জেলায় গত দু’দিনে সরকারি দল এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং বিরোধী বিএনপি’র কর্মীরা।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : বরিশাল

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলা এবং  পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ১২ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ ওরফে বাবু,  ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে ফিরোজ,  জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি অলিউল্লাহ অলি।

বরিশাল সদরের ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে গতকাল রাতে হামলার ঘটনা ঘটে। গতকাল রাতে দুই দফায় জেলা ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী ইউএনওর বাসভবনে হামলা চালান। হামলায় ইউএনওর বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। ছাত্রলীগের দাবি, এ সময় তাদের অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

ইউএনও মুনিবুর রহমান বলেন, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে  পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার-পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসেন। এসময় ইউএনওর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা রাতে  লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাদের সকালে আসতে বলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা ইউএনও কে  গালিগালাজ করে এবং তার সরকারী বাসাভবনে  ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে তাদের ওপরও চড়াও হয় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা।  একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়।

রাতে গুলিতে ও পুলিশের লাঠিপেটায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিভাগীয় মহানগর থেকে অভ্যন্তরীণ ও  দূরপাল্লার সব রুটে  বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়ে। পরে আজ  দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে।

বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এরামুল হক গণমাধ্যমকে বলেন,  ইউএনওর অফিস ও বাসভবন সংরক্ষিত এলাকা। এ এলাকায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা আইনত অপরাধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যা করণীয় সেটাই করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।

এ ঘটনায় পুলিশ ও ইউএনও বাদী হয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৩০ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

মনোহরদীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে হামলা

গতকাল বুধবার দুপুরে নরসিংদীর মনোহরদীতে একটি রেস্তোরাঁয় স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে হামলায় সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় দুটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়।

ওই হামলায় আহত হয়েছেন চ্যানেল আইয়ের জেলা প্রতিনিধি সুমন রায় এবং যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আইয়ুব খান সরকারের ব্যক্তিগত ক্যামেরা পারসন ইসমাইল মিয়া। এ ছাড়া ওই হামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১৩ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

অনুষ্ঠান আয়োজকদের অভিযোগ, মনোহরদী উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী এই হামলায় অংশ নেন। তবে ছাত্রলীগ এই অভিযোগ নাকচ করেছে।

অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপির উদ্যোগে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ড্যাবের সহযোগিতায় সারা দেশের মতো মনোহরদীতেও করোনা হেল্প সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলছিল। করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য এসব অক্সিজেন সিলিন্ডার ও বিভিন্ন সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

হামলার সময় দুই সাংবাদিক রেস্তোরাঁটির রান্নাঘরে লুকিয়ে পড়েন। হামলাকারীরা ওই রান্নাঘরে ঢুকে সাংবাদিক সুমন রায় এবং ক্যামেরা পারসন ইসমাইল মিয়াকে লোহার রড দিয়ে পেটান। তারা দুজনের হাত থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন।

পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় তাঁদের দুজনকে উদ্ধার করে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও হামলাকারীরা গিয়ে ইসমাইলকে ঘিরে ধরেন। তাঁর কাছ থেকে ক্যামেরার মেমোরি কার্ড চাওয়া হয়। না দেওয়ায় হাসপাতাল চত্বরেই তাঁকে আবার মারধর করা হয়। আহত ব্যক্তিদের নরসিংদী সদর হাসপাতাল, মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বলেন, এমন একটি অনুষ্ঠান হবে, এই ব্যাপারে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। হামলার খবর শুনে তিনি ঘটনাস্থলে যান। পরে দুই সাংবাদিকসহ আহত ব্যক্তিদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। এই ঘটনায় তাঁরা এখনো কোনো অভিযোগ পাননি। তবে কে বা কারা এই হামলা করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে।

যশোরে বিএনপি অফিসে হামলা ভাংচুর

যশোরে বিএনপি কার্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় জেলা বিএনপি নেতা গোলাম রেজাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যশোর শহরের লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত বিএনপির কার্যালয়ে  এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা বিএনপির উদ্যোগে দুপুরে দলের খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলামের নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

যশোর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি কার্যালয়ে এক মাস ধরে বিনা মূল্যে করোনার টিকা নিবন্ধনের কাজ চলছে। মঙ্গলবার  সকালে সেখানে ছাত্রদলের উদ্যোগে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ বঙ্গবাজারের দিক থেকে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের একদল উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালান। তারা প্রথমে কার্যালয়ের দরজা ভাঙেন। এরপর তারা কার্যালয়ে থাকা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টেলিভিশন ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে।

চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিকের ওপর দু’দফা হামলা

চুয়াডাঙ্গায় মটর সাইকেলের সাথে ধাক্কা লাগার মত তুচ্ছ ঘটনায় সাংবাদিক সোহেল রানা ওরফে ডালিমকে (৩৮) ছুরিকাঘাত করে আহত ছাত্রলীগের সশস্ত্র কেডাররা । ছুরিকাঘাতে আহত সাংবাদিকের শরীরে সেলাই চলাকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে হামলাকারীরা দ্বিতীয় দফায় ধারালো ক্ষুরের উপর্যুপরি আঘাতে  তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করেছে।

সাংবাদিক সোহেল রানা  চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও আমাদের নতুন সময় পত্রিকার চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি। বর্তমানে তিনি সদর হাসপাতালের চিকিৎসাধীন। সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে দু’দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। সাংবাদিক সোহেল রানাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তাঁর ভাই মো. আরিফ বাদী হয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সদর থানায় একটি মামলা করেছেন।

আসামিরা হলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলবিষয়ক রাজু আহম্মেদ (২৯) এবং জান্নাত হোসেন (২৫) ও আল মোমিন (২৫)। পুলিশ এজাহারভুক্ত তিনজন আসামিকেই গ্রেপ্তার করেছে।

সাংবাদিক সোহেল রানার ওপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার  শোকালে দৈনিক সময়ের সমীকরণ কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক নাজমুল হকের সভাপতিত্বে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মানিক আকবরসহ সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তারা সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।##

342/