‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বুধবার

২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

৮:২৪:২৬ AM
1232528

বিজেপি নেতাদের বক্তব্যে 'শ্মশান-কবরস্থান'-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘সন্ত্রাসবাদ’

ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে জাঠ, মুসলিম ও যাদব অধ্যুষিত এলাকার পর হিন্দুত্ববাদী বিজেপির নির্বাচনী ইস্যু ও বক্তব্যের সুর তৃতীয় পর্ব থেকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) : ২০১৭ সালের নির্বাচনেও একই ধরণের রাজনৈতিক বিন্যাস দেখা গিয়েছিল, যখন তৃতীয় দফার ভোটের দিন প্রধানমন্ত্রী মোদি 'শ্মশান, কবরস্থান, রমজান'-এর মতো ইস্যুতে বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনী হাওয়াকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিলেন।  

বিশ্লেষকদের মতে, এবারও তৃতীয় দফার ভোটের দিন 'সন্ত্রাস' নিয়ে সমাজবাদী পার্টিকে নিশানা করে নির্বাচনী আখ্যান সাজানোর চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির শীর্ষস্থানীয় সব নেতার বক্তব্যের ধরণ একইরকম। প্রশ্ন হল, ২০১৭ সালের বিজেপির জয়ের ফর্মুলা কি ২০২২ সালেও একই ফলাফলের পুনরাবৃত্তি করতে পারবে?   

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ অঞ্চলের আসনগুলোতে ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল এবং তৃতীয় দফায়, অওধ অঞ্চলের আসনগুলোতে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী প্রচারের চতুর্থ পর্বের জন্য ফতেহপুরে পৌঁছেছিলেন এবং তিনি একটি বক্তব্য দিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপট সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 'রমজানে বিদ্যুৎ এলে দীপাবলিতেও আসা উচিত। ‘কবরস্থান’ থাকলে ‘শ্মশান’ও হওয়া উচিত। শাসনের মন্ত্র বৈষম্য নয়, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ বা সবার সাথে সবার উন্নয়ন হওয়া উচিত।    

২০১৭ সালের নির্বাচনে চলেছিল কবরস্থান-শ্মশান, রমজান-দীপাবলি ইস্যু     

মোদির ‘কবরস্থান-শ্মশান এবং রমজান-দীপাবলি’র বক্তব্য এমন একটি নির্বাচনী এজেন্ডা তৈরি করেছিল যে পুরো নির্বাচনী সমীকরণই পাল্টে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যের ইস্যু তুলে একটি নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যার ফলে অন্যান্য সমস্ত ইস্যু পিছনে চলে গিয়েছিল। উত্তর প্রদেশের বাকি চার ধাপের নির্বাচনী প্রচারণায় শুধু কবরস্থান-শ্মশান এবং রমজান-দীপাবলির প্রসঙ্গ ছিল। এ ভাবে প্রধানমন্ত্রী অওধ, বুন্দেলখণ্ড এবং পূর্বাচলের আসনগুলোর রাজনৈতিক হাওয়াকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছিলেন।            

২০১৭ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী মোদি ধর্ম ও জাতির ভিত্তিতে বৈষম্যের ইস্যু তুলে সরাসরি সমাজবাদী পার্টিকে টার্গেট করেছিলেন। ওই বক্তব্যের পরে নির্বাচনী ময়দানে ব্যাপক ঝড় ওঠে এবং বিরোধীরা নির্বাচনে ভোটের জন্য হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের অভিযোগ করেছিল। একইসঙ্গে, এই নির্বাচনেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্যে একই সুর রয়েছে এবং তৃতীয় দফার ভোটের দিন  'সন্ত্রাসবাদ' ইস্যুতে সমাজবাদী পার্টিকে নিশানা করায় রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী মোদি থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ পর্যন্ত প্রত্যেক বড় নেতা এখন তাদের সমাবেশে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে একটি আখ্যান তৈরি করতে শুরু করেছেন। বিজেপি নেতারা বলার চেষ্টা করছেন, সমাজবাদী পার্টি ‘সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা’ দেয়,  সমাজবাদী পার্টির সরকার গঠিত হলে সমস্ত সন্ত্রাসীদের মামলা প্রত্যাহার করা হবে।       

আসলে, বিজেপি ২০১৭ সালের রাজনৈতিক কৌশল অনুসরণ করে বর্তমান রাজনৈতিক এজেন্ডা নির্ধারণ করছে এবং তৃতীয় দফার ভোটের দিন সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি যেভাবে প্রবেশ করেছে, তার পেছনে একটি সুচিন্তিত কৌশল রয়েছে। উত্তর প্রদেশে বাকি পর্বের যে আসনগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেখানে জাত সমীকরণ প্রাধান্য পায়। বিজেপি ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের পিচে আক্রমণাত্মক হলেও জাতপাতের পিচে আটকে রয়েছে। এই কারণেই বিজেপি এখন জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি ‘সন্ত্রাসবাদ’ ইস্যুতে সমাজবাদী পার্টিকে নিশানা করা শুরু করেছে যাতে এ থেকে ফায়দা তোলা যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপির এই রাজনৈতিক বাজি এবার কতটা সফল হয় সেটাই দেখার বিষয়। #         

342/