‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
রবিবার

১০ এপ্রিল ২০২২

১২:৪০:৪৮ PM
1246692

পাকিস্তানে নতুন ভোরের সূচনা হল, আমরা প্রতিশোধ নেব না: শাহবাজ শরিফ

অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর পাকিস্তান মুসলিম লীগ-পিএমএল (এন) সভাপতি ও বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, আমরা কোনো প্রতিশোধ নেব না। আইন ও বিচার প্রক্রিয়া নিজের গতিতে চলবে।

শনিবার দিনগত রাত ১টায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা ভোটে জিতে যায় পিএমএল (এন) নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট। অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির আগে স্পিকার আসাদ কায়সার তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। স্পিকারের পদত্যাগের পর প্যানেল স্পিকার, পিএমএল (এন) নেতা আয়াজ সাদিক পরিচালনা করেন পুরো প্রক্রিয়া। ভোট শেষে আয়াজ সাদিক ঘোষণা করেন, ১৭৪ জন সদস্য এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফলে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পার্লামেন্টে পাস হয়েছে।

ভোটের ফল ঘোষণার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফকে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান আয়াজ সাদিক। শাহবাজ তার ভাষণের শুরুতে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। এরপর জাতীয় নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানে আজ নতুন ভোরের সূচনা হল, আমরা পাকিস্তানকে নতুন করে গড়ে তুলব।‘ 

শাহবাজ বলেন, ‘পাকিস্তান যে সংবিধান ও আইনের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তা আবার ফিরে এসেছে। আমি অতীতের তিক্ততায় ফিরে যেতে চাই না। আমরা তাঁদের ভুলে যেতে ও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা প্রতিশোধ নেব না ও অবিচার করব না। আমরা অকারণে মানুষকে কারাগারে পাঠাব না। আইন ও বিচার প্রক্রিয়া তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কিংবা বিলাওয়াল অথবা মাওলানা ফজলুর রেহমান আমরা কেউ হস্তক্ষেপ করব না। আইন বহাল থাকবে এবং আমরা বিচার বিভাগকে সম্মান করব।’ ভাষণের শেষে তিনি নতুন স্পিকারের দায়িত্ব নেওয়া সাদিককে ধন্যবাদ জানান। 

শাহবাজের পর বক্তব্য দেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো। তিনি বলেন, ‘আমি পুরো জাতি ও এ সংসদকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এ পর্যন্ত কোনো অনাস্থা ভোট সফল হয়নি। এবারই হলো। আজ ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল। আমরা আপনাদের পুরানা পাকিস্তানে স্বাগত জানাই।’ 
পাকিস্তানের তরুণদের উদ্দেশে বিলাওয়াল বলেন, ‘কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। তাদের স্বপ্ন ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। গণতন্ত্র সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিশোধ।’ 

এসময় তিনি ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় পার্লামেন্ট সদস্যদের অভিনন্দন জানান। 

পার্লামেন্টে তেহরিক-ই ইনসাফ দলের এমপি মোহাম্মদ আলী খান বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন। ভবিষ্যতে তিনি আবারও এই পার্লামেন্টের নেতৃত্ব দিতে আসবেন।’

গত ৭ মার্চ জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এরপর ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার। প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির জন্য ৩ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব 'অসাংবিধানিক' ঘোষণা দিয়ে খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। একইসঙ্গে অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন তিনি।

টানা ৫ দিনের দীর্ঘ শুনানি শেষে ওই অনাস্থা ভোট খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতভাবে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের বেঞ্চ। একইসঙ্গে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর শনিবার ভোট গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা না করা অবধি পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না।

আদালতের নির্দেশে শনিবার সকালে জাতীয় পারিষদের অধিবেশন বসার পর দফায় দফায় তা মুলতবি করা হয়। স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট শুরু না করায় বিরোধীদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে পার্লামেন্টে। টান টান উত্তেজনা চলে প্রায় ১৪ ঘণ্টা ধরে। 

এদিকে পার্লামেন্টের বাইরে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়, সেনাপ্রধানকে অপসারণের গুঞ্জন ওঠে। সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া রাতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতও করেন। 

ইমরান রাত ৯টায় মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডাকলে পরিস্থিতি আরও জটিলতার দিকে গড়ানোর ইঙ্গিত আসতে থাকে। সম্ভাব্য সামরিক শাসন ঠেকাতে গভীর রাতে আবেদন জমা পড়ে সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, শনিবার মধ্যরাতের আগেই আস্থা ভোটের নিষ্পত্তি করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার আগে আগে পদত্যাগ করেন স্পিকার আসাদ কায়সার। তার পদত্যাগের পরই শুরু হয় অনাস্থা ভোভোটের প্রক্রিয়া।#

342/