‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : PARSTODAY
বৃহস্পতিবার

১৩ অক্টোবর ২০২২

৬:০০:৩৪ PM
1313368

তেল ইস্যুই সৌদি আরব এবং আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনার মূল কারণ

রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সৌদি আরব।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নানা উত্থান-পতনে ভরা। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালিন সময়ে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের মধ্যে সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এই সময়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক সর্বোচ্চমাত্রায় বৃদ্ধি পায় যখন ট্রাম্প সৌদি আরবকে দুধদানকারী গাভী হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন।

জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য সৌদি আরবের প্রতি আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে খাটো করে দেখেছে ঠিকই কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন রিয়াদকে প্রকাশ্য সমালোচনা করতে দেখা যায় নি। এরপর বাইডেনের সময়কালে সৌদি আরবের প্রতি মাার্কিন প্রশাসনের সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি দুই দেশের সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। সৌদি আরব এবং বিশেষ করে মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল সেদেশের মানবাধিকার ইস্যু।  

যাইহোক এক পর্যায়ে রিয়াদের প্রতি ওয়াশিংটনের এই সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। তবে সৌদি আরবের প্রতি বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের বিশ্বাসের পরিবর্তন হয়েছে রিয়াদ থেকে ওয়াশিংটনের তেলের প্রয়োজনীয়তা থেকেই অন্যকোনো কারণে নয়। প্রকৃতপক্ষে, রিয়াদের প্রতি ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কারণ ছিল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং বিশ্ববাজারে তেলের  সংকট নিয়ে। বিশ্ববাজারে তেল জাতীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকায় তা জো বাইডেন প্রশাসনের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়ায়। 

আর এই কৌশলগত প্রয়োজনের প্রতি  মনোযোগ দিয়ে জো বাইডেন সৌদি আরব ভ্রমণ করেন এবং দেশটির রাজা এবং যুবরাজ সালমানের সঙ্গে দেখা করেন, কিন্তু সেই বৈঠক থেকে কাঙ্খিত কোনো ফলাফল বের করে আনতে পারেন নি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মূলত দুই দেশের সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং কথাবার্তা কয়েক মাস আগে জো বাইডেনের সৌদি আরব সফরের ব্যর্থতার প্রতিই ইঙ্গিত দেয়।

এটা পরিষ্কার যে দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা তেলের কারণেই সৃষ্টি হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশা করেছিল যে সৌদি আরব তার তেল উৎপাদন বাড়াবে। কিন্তু সৌদি আরব ওপেক প্লাস সিদ্ধান্তের কাঠামোর আওতায়  তেলের উৎপাদন দুই মিলিয়ন ব্যারেল কমাতে সম্মত হয়। সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি  সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে এই পদক্ষেপের ফলে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে কিছু মার্কিন কর্মকর্তা সৌদি আরবের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক পর্যালোচনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন।

এদিকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে রিয়াদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার সম্পর্ককে কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে  দেখার পাশাপাশি দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হিসেবে দেখে কিন্তু আমেরিকার কোনো হুকুম বা নির্দেশনা তারা মেনে চলবে না। যাইহোক, সৌদি মন্ত্রণালয় আরো বলেছে যে তেল উৎপাদন কমানো সৌদি আরবের সিদ্ধান্ত নয়, বরং তা ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত। আর ওপেকের এই সিদ্ধান্ত এ সংস্থার সকল সদস্য দেশের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে কোনো একক দেশের মাধ্যমে নয়। 

342/