‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
বৃহস্পতিবার

১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

৭:৩৫:০৫ AM
1346810

আলেমদের নেতৃত্বে বাহরাইনে বিপ্লব বিজয়ী হবে : আল-দাক্কাক

আইম্মাহ আতহার হাওযা ইলমিয়ার অধ্যক্ষ বলেছেন: আমাদের মাঝে আয়াতুল্লাহ ঈসা কাসেমসহ অন্যান্য আলেম ও ফকীহদের নেতৃত্ব রয়েছে এবং রয়েছে বাহরাইনের শহীদদের রক্ত, তৃতীয় উপাদান হিসেবে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলেই কাঙ্খিত বিজয় অর্জিত হবে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন আব্দুল্লাহ আল-দাক্কাক বাহরাইনের বিপ্লবের স্বকীয়তা প্রসঙ্গে বলেন: বাহরাইনি জাতি ধর্মভীরু, তারা নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে নেমেছে। তাদের দাবী হল জনগণ সমর্থিত নতুন সংবিধান রচনা, সংসদকে পূর্ণ এখতিয়ার প্রদান এবং বিচার ব্যবস্থায় স্বাধীনতা। বাহরাইনের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা, আর তাই অপর সমস্যাগুলো গৌণ। অতএব, বাহরাইনের সমস্যা নিরসনে প্রথমে এ দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে হবে।

বার্তা সংস্থা আবনাকে দেওয়া এ সাক্ষাতকারে তিনি বলেন: বাহরাইনের সমস্যাগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সমস্যা অন্যতম। প্রচুর সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দরিদ্রতার কবলে এদেশের মানুষ। দেশের জাতীয় সম্পদ ভুল নীতি ও বৈষম্যের ভিত্তিতে বন্টন হয়। আলে খলিফা সরকার বাহরাইনে সাধারণ সুযোগ-সুবিধা ও পদ বন্টনের ক্ষেত্রে শিয়া ও সুন্নিদের মাঝে বৈষম্য রাখে। এছাড়া বিদেশিদেরকে বাহরাইনে এনে নাগরিকত্ব ও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়। বাহরাইনের প্রকৃত নাগরিক চাই তারা শিয়া হোক বা সুন্নি ঐ সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে বাহরাইনে লক্ষ্যণীয় হারে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, বেতন কাঠামো নিম্ন হওয়া এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মত সমস্যায় ভুগছে জনগণ। বর্তমানে বাহরাইনের ঋণের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

হাওযা ইলমিয়া আইম্মাহ আতহারের অধ্যক্ষ বলেন: আপাত দৃষ্টিতে বাহরাইনকে দেখলে এ ধারণার জন্ম দিতে পারে যে, এই দেশের মানুষ সুখ-সমৃদ্ধিতে বসবাস করে, অথচ বাস্তবতা অন্য কিছু। বাহরাইনের সম্পদ এই দেশের রাজা এবং তার আশেপাশের মানুষের কব্জায়। বাহরাইনের জনসাধারণ অভাবী, এমন কোনো বাহরাইনী নেই যে ব্যাংকের কাছে ঋণী নয়। বাহরাইনের রাস্তায় চলা গাড়িগুলো এবং ভবনগুলি এই দেশের বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না।

আল-দাক্বাক্ব বলেন: বাহরাইনের জনগণ চতুর্দিক থেকে আলে খলিফা প্রশাসন দ্বারা বেষ্টিত। স্বৈরাচারী এ সরকার একদিকে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশটির প্রকৃত নাগরিক শিয়াদেরকে উপেক্ষা করে, অপরদিকে নাগরিকদের জীবিকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে। এ কারণেই জনগণ আলে খলিফা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। বাহরাইনি জাতি এমন পরিস্থিতিতে পড়েও এ বিষয়টির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনি যে, তারা এমন এক দ্বীপে বসবাস করে যার একদিকে সমুদ্র আরেকদিকে সৌদি আরব। তারা তাদের সম্মান রক্ষার্থে বিপ্লব করছে, এক্ষেত্রে পার্থিব স্বার্থ বিশেষতঃ ভৌগোলিক অবস্থানের প্রতি তারা ভ্রুক্ষেপই করেনি।

তিনি বলেন: ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাথে আলে খলিফা সরকারের সম্পর্ক ২০০৯ সাল থেকেই।  বাহরাইনে ইহুদিবাদীদের একটি সদর দফতরও ছিল। কিন্তু যখন ইসরাইল দেখল যে, শুধু আমেরিকার উপর নির্ভর করলে চলবে না, তখন তারা তাদের সম্পর্ক প্রকাশ এবং এর মাধ্যমে ইরানের মোকাবিলারও সিদ্ধান্ত নেয়। বাহরাইন সরকারের জায়নবাদীদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার করতে গৃহীত পদক্ষেপের লক্ষ্যগুলোর একটি ছিল এদেশের জনগণকে দমন করা।

তার সংযোজন: আলে খলিফা প্রশাসন জায়নবাদীদের সাথে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।  সরকার ইহুদিবাদীদের সাথে সম্পর্ক জনগণের স্তরে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে এবং এ বিষয়ে দু’দেশের মাঝে শিক্ষা সফর ও মেডিকেল ট্যুরিজম চালু করার বিশেষ কর্মসূচীও হাতে নিয়েছিল, বাহরাইনের রাজধানীতে ইহুদিদের ঈদ উৎসবের আয়োজনও ছিল এই কর্মসূচীর আওতায়। কিন্তু জনগণ এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে এবং এই কর্মসূচী বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বাহরাইনে জনসম্মুখে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠান করার সাহস জায়নবাদীদের নেই এবং বাহরাইনের জনগণ জায়নবাদীদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোর বিরোধী। আর যা কিছু বাহরাইন ও জায়নবাদী সরকারের মধ্যে বিদ্যমান তা সংক্ষেপে বলতে গেলে অফিশিয়াল এবং রাজনৈতিক।

বাহরাইনি জাতিকে সদাজাগ্রত বলে আখ্যায়িত করে আল-দাক্কাক বলেন: এই জাতির মাঝে উলামা রয়েছেন এবং এই জাতি শহীদ দিয়েছে, ফিলিস্তিনের বিষয়টি বাহরাইনের জনগণের হৃদয়ে গেঁথে আছে, এ কারণে জায়নবাদী ইসরাইলের সাথে জনগণের স্তরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা অত্যন্ত দুরহ ব্যাপার। আমরা এ বিষয়টিও দেখেছি যে, একটি রেস্টুরেন্ট জায়নবাদী রেস্টুরেন্ট হিসেবে পরিচিত হওয়ার পর বাহরাইনের জনগণ ঐ রেস্টুরেন্টকে বয়কট করেছিল। এ কারণে জায়নবাদী প্রশাসন জায়নবাদীদেরকে বাহরাইনের বাজার ও জনগণের মাঝে উপস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছিল।

তিনি বলেন: বাহরাইনি জাতি পারস্য উপসাগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ছোট দেশে বসবাসকারী একটি ছোট জাতি। যা সৌদি আরবসহ পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলি দ্বারা বেষ্টিত এবং আলে খলিফা সরকারও আমেরিকা এবং ব্রিটেনসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো দ্বারা সমর্থিত। ফলে বাহরাইনে বিপ্লবের বিষয়টি কঠিন হয়ে গেছে। এছাড়া একটি বিপ্লবে চূড়ান্ত বিজয়ী হতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন।  এ জন্য এ বিপ্লবে বিজয় দীর্ঘায়িত হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে বাহরাইনের জনগণ হতাশ হয়নি এবং আয়াতুল্লাহ ঈসা কাসেমের নেতৃত্ব তারা তাদের অবস্থানে অটল।

আইম্মাহ আতহার হাওযা ইলমিয়ার অধ্যক্ষের সংযোজন: আমাদের মাঝে আয়াতুল্লাহ ঈসা কাসেমসহ অন্যান্য আলেম ও ফকীহদের নেতৃত্ব রয়েছে এবং রয়েছে বাহরাইনের শহীদদের রক্ত, তৃতীয় উপাদান হিসেবে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলেই কাঙ্খিত বিজয় অর্জিত হবে। জয়ের জন্য আমাদের ধৈর্য ও অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োজন, বাহরাইনের শহীদ পরিবারগুলো অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী এবং আয়াতুল্লাহ ঈসা কাসেমও একজন দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব।#176