‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বুধবার

২১ জুন ২০২৩

৯:৪১:৩৩ AM
1374502

‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করাকে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী সংঘাত

পশ্চিমবঙ্গের রাজভবনে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ওই ইস্যুতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে আজ (মঙ্গলবার) সকালে  রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু এর এক দিন আগেই ফোন করে রাজ্যপালকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন না করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ থেকে রাজভবনে চিঠি পাঠিয়ে নিজের অনুরোধের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

মমতা রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে কখনও বাংলায় ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’-এর মতো কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়নি। দেশ বিভাজনের এই ঘটনাকে বাংলা সব সময় মনে রেখেছে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হিসেবে। কিন্তু ওই অনুরোধে কান না দিয়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি মতোই আজ ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। 

এ প্রসঙ্গে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নিশানা করে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা দিলীপ ঘোষ এমপি বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি ইতিহাসকে ঘেঁটে দিতে চাচ্ছেন। কেননা এটা ঐতিহাসিক সত্য, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নেতৃত্বে এটা হয়েছে বলে হিন্দু বাঙালি একটা হোমল্যান্ড পেয়েছে। তা না হলে আজকে যে কয়েক কোটি উদ্বাস্তু হয়েছেন, বাকিদেরও উদ্বাস্তু হতে হতো। উনি আপত্তি জানাবার কে? আজ আছেন কাল  থাকবেন না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থাকবে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ থাকবে, ইতিহাস থাকবে। সেজন্য উনি ইতিহাস পরিবর্তনের চেষ্টা যেন না করেন।’ 

বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের পাল্টা জবাবে আজ তৃণমূলের রাজ্য সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘ইতিহাসটা কারা ঘাঁটছে? কারা ভারতবর্ষকে শুধুমাত্র হিন্দুদের চোখ দিয়ে দেখছে? সেটা তো দিলীপ ঘোষরা। সমস্ত কলেজে, স্কুলে ইতিহাস বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে তো এই দিলীপ ঘোষের দল। আমি মনে করিয়ে দিই দিলীপ ঘোষকে যে, দ্বিজাতি তত্ত্বে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে ভাগ করার দাবি প্রথম তুলেছিলেন যিনি, তার নাম সাভারকর। এই ২০ জুন প্রাদেশিক আইনসভায় সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটা উদযাপনের সিদ্ধান্ত নয়, সেটা দুঃখের  সিদ্ধান্ত। সেই দুঃখকে বরং আজকে আমাদের শোক পালন করা উচিত যে আজকের দিনে বাংলা ভাগের সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়েছিল। বাংলার বুকের উপর দিয়ে কাঁটাতার তৈরি করতে হয়েছে। আর সেটাকে নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সেলিব্রেট করছে দিলীপ ঘোষ এবং তাদের এই বাংলা বিরোধী দল বিজেপি’ বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূলের সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। 

প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন অখণ্ড বাংলার প্রাদেশিক আইনসভার ভোটাভুটিতেই দুই বাংলা ভাগের বিষয়টি নির্ধারিত হয়। কিন্তু ইতিহাসবিদ ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুগত বসু বলছেন, ‘এই ভোটাভুটির আগেই ব্রিটিশ সরকারের দেশভাগের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। ৩ জুন ১৯৪৭-এই মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা সম্প্রচার হয়েছিল। দিল্লিতে ক্ষমতা নিতে অগ্রণী নেতারা পঞ্জাবের মতো বাংলা ভাগের পক্ষেও সায় দিয়েছিলেন। এর উদযাপনে গৌরব নেই বলেও মন্তব্য করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুগত বসু।    

অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজেপির পক্ষ থেকে দেওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, ২০ জুন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’। রাজ্যবাসীকে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের শুভেচ্ছা। পূর্ব পাকিস্তানের কবল থেকে পশ্চিমবঙ্গের উদ্ধারকর্তা, শ্রদ্ধেয় ড: শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম। এদিকে, ওই ইস্যুতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি এবং রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মন্তব্যে রাজ্য রাজনৈতিক মহলে উত্তাপের সৃষ্টি হয়েছে। #

342/