‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শনিবার

২৪ জুন ২০২৩

১২:৪৬:৪৮ PM
1375034

ব্রিক্স সম্মেলনে ম্যকরনের উপস্থিতি কেন চায় না রাশিয়া?

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন যে মস্কো মনে করে না যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস গ্রুপের আসন্ন বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন।কারণ প্যারিস এখনো মস্কোর বিরুদ্ধে বৈরী নীতি গ্রহণ করা অব্যাহত রেখেছে।

তিনি আরো বলেছেন, নিঃসন্দেহে এই বৈঠকে অংশ নেয়া অতিথিদের আমন্ত্রণ করা ব্রিকস বৈঠকের আয়োজকেরই দায়িত্ব। তবে এ বিষয়ে সংস্থার সদস্যদের সাথে আলোচনা করে নেয়াটাই ভালো এবং মঙ্গলজনক। 

সের্গেই রিয়াবকভ বিষয়ে জোর দিয়ে বলেছেন, যেসব দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে বৈরী ও অগ্রহণযোগ্য নীতি অবলম্বন করছে বা যারা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মস্কোকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় এবং উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা বা ন্যাটোর সদস্য এবং তার চেয়েও খারাপ যে বিষয়  যারা রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় চেয়েছে এবং যারা বৃহৎ শক্তির পরিমন্ডল থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা ব্রিকস বৈঠকে যোগ দেওয়ার যোগ্য নয়। 

দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে ম্যকরনের উপস্থিতির জন্য ফ্রান্সের পক্ষ থেকে জোর দেয়ার বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রথমত, ফ্রান্স সহ পশ্চিমা দেশগুলো ব্রিকস, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নের মতো উদীয়মান প্রতিষ্ঠানগুলো উপস্থিতি উপেক্ষা বা বিবেচনা না করা সত্ত্বেও বিশ্ব পরিমণ্ডলে তাদের গুরুত্ব ও মর্যাদা এবং ক্রমবর্ধমান ভূমিকা সম্পর্কে ভালভাবে সচেতন।

ব্রিক্স-এ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে এই সংস্থায় যোগদানের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। ডলারের আধিপত্যের অবসান এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একক মুদ্রা ব্যবহার করা এই গ্রুপের অন্যতম লক্ষ্য যা পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। অতএব ম্যাকরনের মতো রাজনীতিবিদ অনেক ইউরোপীয় ও পশ্চিমা নেতাদের বিপরীতে যিনি সবসময়ই উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিয়েছেন  ব্রিকসের মতো প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে তাকানোর পরিবর্তে  ব্রিকস বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের নীতি এবং সিদ্ধান্তগুলোকে  প্রভাবিত করার জন্য ম্যকরন সেখানে সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালাবেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ব্রিকস সম্মেলনে যোগদানের জন্য ম্যাকরনের আরেকটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে যে এই আন্তর্জাতিক গ্রুপের সদস্যরা বেশিরভাগই উদীয়মান অর্থনীতির দেশ যারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নীতি ও পদক্ষেপের সঙ্গে একমত নয়। এই বিষয়ে প্যারিসের লক্ষ্য হল ব্রিকস সদস্যদের মধ্যে বিভাজন এবং পার্থক্য তৈরি করা।  রাশিয়ার বিরুদ্ধে  তীব্র  চাপ সৃষ্টির জন্য আলাদাভাবে এর সদস্য রাষ্ট্রের প্রধানদের সাথে পরামর্শ করা।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টসহ পশ্চিমাদের দাবি, ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়া আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে এবং মস্কোকে এর জন্য শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন। যদিও ম্যকরন পশ্চিমা নেতাদের একজন হিসাবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পদক্ষেপের কারণগুলো সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত আছেন।  মস্কো বারবার ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য পশ্চিমাদের প্রচেষ্টা সম্পর্কে সতর্ক করেছে এবং এটিকে তার জাতীয় নিরাপত্তার রেড লাইন হিসাবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু পশ্চিমারা পূর্বে ন্যাটোকে সম্প্রসারিত করার নীত অব্যাহত রেখেছে  এবং রাশিয়াকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে এমনকি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি বড় আকারের যুদ্ধ শুরু করার মূল্যেও এই নীতি অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ইউক্রেনে সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্রের বন্যা বইয়ে দিয়ে তারা এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ইউক্রেনীয় সৈন্যের সাথে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং কিয়েভ সৈন্যদের হতাহতের বিষয়ে তারা মোটেও চিন্তিত নয়।#

342/