‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
বুধবার

২৮ জুন ২০২৩

৩:৩০:৩৯ PM
1375909

নামিবিয়ার জাতীয় গণমাধ্যমে শিয়া আলেমের উপস্থিতি

হুজ্জাতুল ইসলাম সাবুরি একজন ধর্ম বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেশটির জাতীয় গণমাধ্যমে উপস্থিত হয়ে বলেছেন, গণমাধ্যমে আমার উপস্থিত হওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে ঐক্য ও সংহতির প্রসার ঘটানো।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): কোবা ইসলামিক সেন্টারের পরিচালক হুজ্জাতুল ইসলাম আবুল ফাদ্বল সাবুরি, আফ্রিকান দেশ নামিবিয়ার NBC চ্যানেলের ‍“গুড মর্নিং” অনুষ্ঠানের প্রদত্ত এক সাক্ষাতকারে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার তাবলীগি কার্যক্রম এবং দেশটিতে এ পর্যন্ত যে সকল কার্যক্রম করেছেন, তা উল্লেখ করে বলেন: আমি ২০১০ সাল থেকে গুরুত্ব সহকারে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচারকার্য শুরু করি এবং তখন আমার দরসে খারিজে অংশগ্রহণের ৬ষ্ঠ বছর চলছিল।

তিনি আরও বলেন যে, প্রথমে পোল্যান্ড অতঃপর  নিউজিল্যান্ডে তাবলীগি কার্যক্রম পরিচালনার পর বর্তমানে তিনটি দেশ যথাক্রমে নামিবিয়া, বোতসোয়ানা এবং অ্যাঙ্গোলায় আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং পাশাপাশি নামিবিয়ার রাজধানী উইন্ড হোয়েকে অবস্থিত মসজিদে কুবার খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

তার সংযোজন, সরাসরি উপস্থিত হয়ে তাবলীগের ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ার আগে তিনি তিন ভাবে তাবলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন: অনলাইনের মাধ্যমে, পর্যটন খাতে এবং আন্তর্জাতিক ফিল্ডকে সামনে রেখে কন্টেন্ট উৎপাদনের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত তিনি ইংরেজি ভাষায় ১৫টি বই লিখেছেন।

হুজ্জাতুল ইসলাম সাবুরি ইতিপূর্বে ১৫ বারের অধিক নামিবিয়ার জাতীয় মিডিয়ায় উপস্থিত হয়েছেন এবং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, দর্শকরাও তার আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন: নামিবিয়ায় আসার প্রথম থেকেই আমার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ছিল; এসব পরিকল্পনার মধ্যে ছিল মসজিদ সংস্কৃতির উন্নয়ন ও ফান্ড গঠন, অন্যান্য মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং অমুসলিমদের নিকট ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়া।

 

মসজিদে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাবে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কমেছে

তিনি অন্যান্য মসজিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন, তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং ধর্মীয় বই-পুস্তক আদান-প্রদানের মাধ্যমে, ধীরে ধীরে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কমে আসার প্রতি ইশারা করে বলেন: বর্তমানে, অপর সুন্নি মসজিদের মুসল্লিগণ মসজিদে কোবায় আহলে বাইত (আ.)-এর স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন এবং এমনকি খাবার আয়োজনে আর্থিক সহায়তাও দিচ্ছেন।

তিনি দেশটির উত্তরাঞ্চলে আহলে বাইতের (আ.) দ্বিতীয় মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে বলেন: এতদিনে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্থানীয় মুসল্লি আহলে বাইতের (আ.) মাযহাবের অনুসরণ শুরু করেছেন। যাদের মধ্যে একজন সক্রিয় মুবাল্লিগ ও ওয়াহাবিদের ইমামও রয়েছেন; বর্তমানে তিনি উত্তর নামিবিয়ার মসজিদের খতিব এবং বর্তমানে তার দায়িত্বে থাকা মসজিদটি নামিবিয়ায় আহলে বাইতের (আ.) অনুসারীদের দ্বিতীয় মসজিদ।

দেশটিতে তার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মধ্যে ছিল অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন। এ বিষয়ে তিনি বলেন: প্রথমত, অন্যান্য ধর্মের সক্রিয় সংগঠনগুলির সাথে আন্তঃ ধর্মীয় সম্মেলন আয়োজন করা হয় এবং তাদেরকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাছাড়া সারা বছর জুড়ে এতিম ও বয়স্কদের সাহায্য করার লক্ষ্যে আমাদের বেশ কয়েকটি যৌথ কর্মসূচি থাকে।

 

টিভিতে শিয়া আলেমের প্রতি রবিবারের দোয়া তেলাওয়াতকে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বিরা সাদরে গ্রহণ করেছে

এ বিষয়ে উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: নামিবিয়ার ইতিহাসে এটি ছিল খুবই বিরল একটি ঘটনা। করোনা মহামারী শুরু হওয়ার কিছুদিন পর, যখন নতুন ঢেউ শুরু হয় এবং মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, তখন দেশটির সরকার ১৫ দিনের সম্পূর্ণ কোয়ারেন্টাইন ঘোষণা করে। এমতাবস্থায় রবিবার দিনগুলিতে যখন সকলে একসাথে ঘরে বসে টিভি দেখত, তখন আমাকে রবিবারের দোয়া তিলাওয়াতের দায়িত্ব দেয়া হয়। আমি সেই টেলিভিশন প্রোগ্রামে সহিফা সাজ্জাদিয়ার সপ্তম দোয়ার অনুবাদ পাঠ করতাম। এরপরে, তারা অনুষ্ঠানের সময় বাড়ালে, আমি প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করি এবং তার আর্বিভাবের জন্য দোয়া করতে থাকি। এই প্রোগ্রামের পরে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে বেশিরভাগ মানুষ ঐ অনুষ্ঠান সম্পর্কে তাদের সন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করে। তবে অনেকে নামিবিয়ান টিভি চ্যানেলে কুরআন এবং নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কথা প্রচারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

একজন ধর্ম বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেশটির জাতীয় গণমাধ্যমে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, আমার গণমাধ্যমে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে ঐক্য ও সংহতির প্রসার ঘটানো। এছাড়াও, তিনি খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ব, বাইবেল এবং তাওরাতে উপরে তার দক্ষতা দেশটির জাতীয় গণমাধ্যমে তার গ্রহণযোগ্যতার কারণ হয়েছে এবং এ কারণে শ্রোতারাও তার বক্তব্যকে সানন্দে স্বাগত জানায়।

 

একজন শিয়া আলেমের দীর্ঘদিন সক্রিয় উপস্থিতি এ অঞ্চলের মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৎপর এ মুবাল্লিগ বলেন: এই দেশের মিডিয়া এবং জনগণের মধ্যে আমার সফল বিচরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল নামিবিয়াতে আমার দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতি। এই দেশে প্রায় তিন বছর স্থায়ী উপস্থিতির পরে এই সুযোগ এসেছে। মূলতঃ এই স্বীকৃতি ও বিশ্বাস অর্জনে তিন বছর সময় লেগেছে।#176