‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শনিবার

২২ জুলাই ২০২৩

৩:১০:৩৯ PM
1381334

সুইডেনে কোরআন অবমাননা: বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া

সুইডেনে পবিত্র কোরআন অবমাননার বিরুদ্ধে ইরান, ইরাক, লেবানন, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মুসলিম জনগণ বিক্ষোভ মিছিল করে এর বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা এবং নিন্দা জানিয়েছে।

গত ১০ দিনে ইউরোপীয় দেশগুলিতে ইসলামের পবিত্র জিনিসগুলোর প্রতি অবমাননা আরও প্রকট আকার ধারন করেছে। সুইডেন ও ডেনমার্ক সরকার আবারও পবিত্র কোরআন অবমাননার অনুমতি দিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো গত বৃহস্পতিবার সুইডেনে পবিত্র কোরআনের অবমাননাকারীরা দেশটির পুলিশের সবুজ সংকেতে আবারো পবিত্র অবমাননা করেছে। গতকাল ডেনমার্কের একটি উগ্র ডানপন্থী দল কোপেনহেগেনে ইরাকি দূতাবাসের সামনে কোরানের একটি কপি পুড়িয়ে দিয়েছে। 

সুইডেন এবং ডেনমার্কে পবিত্র কুরআনের অবমাননা দেখায় যে ইউরোপীয় সরকারগুলো তাদের ঘোষিত নীতিতে কুরআনের অবমাননাকে সমর্থন না করার দাবি করলেও বাস্তবে তারা এই অবৈধ এবং অবমাননাকর পদক্ষেপকে সমর্থন করে। ইউরোপীয় সরকার বিভিন্ন মুসলিম দেশে মুসলমানদের ক্ষোভ পর্যবেক্ষণ করার সময় মুসলমানদের ধর্মীয় পবিত্রতার অবমাননার মোকাবিলা না করে তারা এই জঘন্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ভিত্তি তৈরি করে।

যদিও এই দেশগুলো নিজেদেরকে বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে দাবি করে পবিত্র কোরআনের অবমাননাকে জায়েজ করার চেষ্টা করছে তারা স্কুলে হিজাব পরার এবং হলোকাস্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিরোধীতা করে। বরং এসব ক্ষেত্রে তাদের কাছে বাক স্বাধীনতার কোনো মূল্য নেই। সুতরাং, ইউরোপীয় দেশগুলিতে ইসলামের পবিত্র জিনিসগুলোর অবমাননা কেবলমাত্র তাদের কাছে বাকস্বাধীনতার অজুহাত এবং একটি সাধারণ বিষয় নয়, বরং ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের  একটি সুদূর প্রসারী ও সংগঠিত পদক্ষেপও বটে।

ইউরোপীয় সরকার এবং যারা পবিত্র কোরআনের ওপর হামলা চালাচ্ছে তাদের এই পদক্ষেপ ইসলামি দেশগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সুইডিশ দূতাবাসে হামলার পর ইরাকি বিক্ষোভকারীরা বাগদাদে ডেনিশ দূতাবাসেও হামলা চালিয়েছে। সুইডিশ দূতাবাসের কূটনীতিক ও কর্মচারীদের ইরাক থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পবিত্র কোরআনের অবমাননা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে এবং এই পদক্ষেপকে একটি "জঘন্য ঘটনা" বলে অভিহিত করেছে।

কুরআন অবমাননার বিরুদ্ধে লেবানন ও নাইজেরিয়াতেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বিক্ষোভকারীরা তাদের দেশ থেকে সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। গতকাল ইরানের বিভিন্ন শহরে পবিত্র কোরআনের অবমাননার নিন্দা ইরানি জনগণকে বিক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখা গেছে। ইরানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ শেষে প্রকাশিত বিবৃতিতে এ ধরনের অবমাননাকর তৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ইরানি বিক্ষোভকারীরা তাদের বিবৃতিতে সুইডিশ পণ্য বয়কটের জন্য বিশ্বের সকল মুসলমানের প্রতি আহ্বান জানান

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, সুইডেনে পবিত্র কুরআন অবমাননার মাধ্যমে যে ঔদ্ধত্য দেখানো হয়েছে তা অত্যন্ত তিক্ত ঘটনা যা ষড়যন্ত্রমূলক ও বিপজ্জনক। বিশ্বের সব আলেম এ বিষয়ে একমত যে, এই অপরাধের হোতার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য। সর্বোচ্চ নেতা তার বার্তায় আরও বলেছেন, সুইডিশ সরকারেরও জানা উচিৎ তারা পবিত্র কুরআন পোড়ানো ব্যক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে গোটা মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে সমরসজ্জা গ্রহণ করেছে। তারা নিজেদের জন্য সব মুসলিম জাতি এবং অনেক সরকারের ঘৃণা কুড়িয়েছে ও তাদেরকে শত্রু বানিয়েছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, পবিত্র কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে সুইডেনের নতুন রাষ্ট্রদূতকে তেহরান গ্রহণ করবে না। ইরানের নতুন রাষ্ট্রদূতকে স্টকহোমে পাঠানো হবে না। আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির নির্দেশে সুইডেনের নতুন রাষ্ট্রদূতকে ইরানে আসতে দেয়া হবে না।  তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পবিত্র কোরআন অবমাননা বন্ধে সুইডিশ সরকার আন্তরিক ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতকে আসার অনুমতি দেয়া হবে না। আমির আবদুল্লাহিয়ান অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন বা ওআইসির জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানও সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। লেবাননের গণমাধ্যম সুইডেনের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। পবিত্র কোরআন অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে তুরস্ক।#