সিরিয়ার জাতীয় সংসদের সদস্য জয়দা মিখাইল থালজা বলেছেন, আমেরিকার হেফাজতে থাকা হাজার হাজার আইএস জঙ্গিকে মুক্ত করে ওয়াশিংটন এই গোষ্ঠীকে সিরিয়ায় পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমেরিকা যখনই সিরিয়ায় নিজেকে অবরুদ্ধ বলে মনে করে তখনি আইএস জঙ্গিদেরকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এরিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আল-হাসাকা প্রদেশের গুয়িরান কারাগার থেকে বহু আইএস জঙ্গি কমান্ডারকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। এদের অনেকেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
গত ২১ আগস্ট মার্কিন সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান মাইকেল কুরিলা সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত আল হোল ও আল রোজ শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। সেখানে আইএস জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যদের বসবাস। সেখানে মার্কিন কমান্ডারের সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। আল হোল শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার শরণার্থী রয়েছে। এসব শরণার্থীর একটা অংশ হলো বিদেশি। বিদেশিদের কেউ কেউ ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের ধোকায় পড়ে সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে এসেছিল, অনেকে পরিবার নিয়ে হাজির হয়েছিল যাদের সন্তান-সন্ততিও এখন শরণার্থী শিবিরে বাস করছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, এই শরণার্থী শিবিরে অন্তত ৫৭টি দেশের নাগরিক রয়েছে। বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের নাগরিকও সেখানে শরণার্থী হিসেবে রয়েছে যাদেরকে ইউরোপ দেশে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। আল হোল শরণার্থী শিবিরটি সিরিয়ায় অবস্থিত হলেও ইরাক সীমান্ত থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স বা এসডিএফ নামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে এই শরণার্থী শিবির নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার আঙ্গুলের ইশারায় এই গোষ্ঠীটি পরিচালিত হয় এবং আমেরিকা এ ক্ষেত্রে খুব একটা রাখঢাক করে না। আল হোল শরণার্থী শিবিরে আইএস জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক মাসে সিরিয়ায় কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। মার্কিন ইশারায় আইএস জঙ্গি কমান্ডারদের মুক্তি দিয়ে এসব সন্ত্রাসী হামলা চালানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
আমেরিকা আইএস জঙ্গিদের পুনরুজ্জীবিত করে একদিকে মুসলিম রাষ্ট্র সিরিয়াকে আবারও অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে দখলদার ইসরাইলের নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে চায়, আর অন্যদিকে রাশিয়াকে সিরিয়ায় আরও বেশি ব্যস্ত রেখে ইউক্রেন যুদ্ধে ফায়দা লুটতে চায়। তবে এই কাজ করতে গিয়ে মিত্র শক্তি ইউরোপের জন্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ইউরোপের বহু নাগরিক আল হোল শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। আইএস পুনরুজ্জীবিত হলে এই নাগরিকেরা অস্ত্র হাতে ইউরোপে প্রবেশ করে গোটা অঞ্চলের জন্য বড় ধরণের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।#
342/