‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শনিবার

৭ অক্টোবর ২০২৩

৬:৩১:৪৮ PM
1398768

‍“আহলে সুন্নাতের আলেমদের কিতাবসমূহ ও নথি-পত্র, মহানবীর (সঃ) মিলাদ-অনুষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্যাবলীতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে”।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন নাজমুদ্দিন তাবাসি, গত রাতে হযরত ফাতেমা মাসুমার (সাঃ আঃ) পবিত্র মাজার শরিফের শাবেস্তানে ইমাম খোমেনীতে (রহ.) অনুষ্ঠিত মহিলাদের শিক্ষা সমাবেশে, রাসুলুল্লাহ ও ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) এর মহান জন্ম-বার্ষিকীর কথা স্মরণ করে সবার প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) এবং ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর জন্মবার্ষিকীতে তিনি বলেন: অতীতে সুন্নি মুসলিমরা মহানবীর (সা:) বরকতময় জন্ম-বার্ষিকী, এক মাস ধরে উদযাপন করতেন; ঠিক যেভাবে আমারা মহররম মাসে দশ-দিন ব্যাপি শোক পালন করে থাকি।

ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওয়াহাবীদের বিচ্যুতি ও বিপথগামিতার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন: ওয়াহাবীরা সাধারণত যেসব বিষয়ে বক্র ও চরমপন্থি চিন্তাধারা অনুসরণ করছে, সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে- মহান আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত প্রতীকসমূহ, নবীর সূউচ্চ মাকাম ও মর্যাদার বিষয়গুলো এবং নবীর পিতা-মাতাকে মুশরিক বলা ইত্যাদি। এই সব বক্র-চিন্তাধারা এতটাই ভয়ানক যে, প্রকৃত অর্থে এগুলো ইসলাম ও মহানবীর (সা.) সাথে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।

বাহায়ী মতবাদের সাথে তুলনা করে নাজমুদ্দিন তাবাসি বলেন: ওয়াহাবী-মতবাদ মূলতঃ ইসলাম বহির্ভূত চিন্তাধারা; ঠিক যেভাবে বাহায়ী মতবাদকে মুসলমানদের সংশ্লিষ্ট বিষয় বলে গন্য করা হয় না বরং এরা নিছক একটি বিপথগামী আন্দোলন বা সন্ত্রাসবাদী দল। এদের লক্ষ্য ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা। এদের শিকড় ব্রিটেন এবং জায়নিস্ট শাসকদের দিকে প্রথিত।

জন্ম দিবসের আনন্দ অনুষ্ঠান বা উৎসবগুলোকে ঐতিহ্য হিসাবে উদযাপন করা যায়েজ নেই বলে ওয়াহাবীরা ব্যপক প্রচার ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে থাকে। অথচ বিষয়টির পক্ষে মুসলিম বিশেজ্ঞদের, বিশেষ করে সুন্নি আলেমদের বইগুলি দলিলে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। প্রায় ৬০০ বছর আগে আহমদ বিন মুহাম্মাদ আল-কাস্তলানির রচিত "আল-মাওয়াহিবুদ-দুনিয়া বিল-মানহিল মুহাম্মাদিয়া" বইটির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন: অতীতে মুসলমানরা রবিউল আউলের প্রথম দিন থেকেই আল্লাহর রাসূলের (সা.) জন্ম-বার্ষিকী উদযাপন শুরু করত।

শিক্ষা-সমাবেশে প্রদত্ত ভাষণে তিনি আরো বলেন: উল্লেখিত কিতাবে বলা হয়েছে; এই সব দিনগুলিতে, মুসলমানরা সাধারণতঃ আল্লাহর পথে দান করার পাশাপাশি, পরস্পরকে খাবার প্রদান করত এবং নতুন জামাকাপড় পরে আলোক সজ্জিত অনুষ্ঠানগুলিতে অংশগ্রহণ করত।

নাজমুদ্দিন তাবাসি তাঁর বক্তৃতায়, মুহাম্মদ মুস্তফার (সা.) জন্মদিনে আবু লাহাবের আনন্দ প্রকাশ এবং এই দিনে জাহান্নামের তার আযাব হ্রাসের কথা উল্লেখ করে বলেন: ‍“নিশ্চয়ই, মহানবীর (সাঃ) উম্মতের মধ্যে আল্লাহর মারেফাত জানে এমন কেউ যখন তাঁর নবীর (সাঃ) জন্মে খুশি হয়ে দান-সাদকা প্রদান করেন অথবা অন্যকে খাদ্য-খাবার খাওয়ায় নিঃসন্দেহে তিনি আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করবেন”।

ওয়াহাবি মতবাদের বিচ্যুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন- নবীর সাথে তাঁর উম্মাহর সম্পর্ক ছিন্ন করার লক্ষ্যেই মূলতঃ এই সব উৎসব ও অনুষ্ঠানসমূহ পালন করার বিষয়কে অনুৎসাহিত করা হয় এবং তা বাস্তবায়নে বাধা দেওয়া হয়ে থাকে।

ওয়াহাবিরা কঠিন সময়ে আমেরিকার নিকট ফিরে যায়। অথচ ইসলামের নবীর (সা.) দিকে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে, যা একটি ঐশ্বরিক নির্দেশ হওয়া সত্বেও, তারা নিষেধ করে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِیُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوک فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِیمًا

‍“বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছিল, তারা যদি আপনার কাছে আসত, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত”। (সুরা নিসা, আয়াত নং ৬৪)

তিনি তাঁর বক্তৃতার শেষ অংশে বলেন- ওয়াহাবিরা একটি সন্ত্রাসী গোষ্টি, ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা দল, যারা মুসলিম দেশগুলোতে প্রচুর লুটপাট করেছে ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওয়াহাবিরা বিচ্যুতি ও বিপথগামিতার চরম মাত্রাকে অতিক্রম করেছে, এমনকি তৌহিদের বিষয়েও তাদের ভুল ধারনা ও ভুল শিক্ষা রয়েছে।