‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Prothom Alo
বুধবার

২৫ অক্টোবর ২০২৩

১:৩৯:০২ AM
1404798

এক দিনে এত মৃত্যু আগে দেখেননি গাজাবাসী

আবনা ডেস্ক: ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহত শিশু সন্তানটাকে বুকে আঁকড়ে রেখেছিলেন আবদুল্লাহ তাবাস। রক্তাক্ত মরদেহটি দাফনের জন্য তাঁর কাছ থেকে নিতে পারছিলেন না কেউ। আহাজারি করতে করতে অসহায় বাবা বলছিলেন, ‘এ আমার মেয়ে, আমি ওকে যতবার খুশি দেখতে চাই।’

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত নিমর্মতা–নৃশংসতার মাত্র একটি চিত্র এটি। মঙ্গলবার সারা দিনে ও আগের দিন রাতভর হামলায় উপত্যকাটিতে শত শত মানুষ তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় বোমার আঘাতে ৭০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩০৫টিই শিশু।

৭ অক্টোবর ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর থেকে এক দিনে এত মৃত্যু দেখেননি গাজার বাসিন্দারা। এর মধ্য দিয়ে উপত্যকাটিতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৯১। আহত ১৬ হাজার ২৯৭ জন। অপরদিকে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি।

ইসরায়েল বলছে, হামাসকে নির্মূল করতেই তাদের এ জোরদার হামলা। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টোটা। গাজায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে কোনো বাছবিচার করছে না তারা। অবিরাম বোমাবর্ষণে নিমেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে আবাসিক ভবন, শরণার্থীশিবির, মসজিদ, গির্জা, হাসপাতালসহ নানা অবকাঠামো। মঙ্গলবারও ইসরায়েল জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় তারা গাজার ৪০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিটি বোমার আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে গাজার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে আহত, চিরতরে পঙ্গু হওয়া মানুষের ভিড়। চিকিৎসকেরা বলছেন, বোমায় আহত ব্যক্তিদের ক্ষত দেখে মনে হচ্ছে যেন তাঁদের ত্বক গলে যাচ্ছে। এই ক্ষত চিকিৎসায় কোনো ওষুধ হাসপাতালে নেই। এই অবস্থায় ইসরায়েল কী ধরনের মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে, তা খতিয়ে দেখতে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

ইসরায়েলের নির্বিচার ও টানা হামলায় গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল–কুদরা। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ দিনে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৬৫ চিকিৎসাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ২৫টি অ্যাম্বুলেন্স। এ ছাড়া ১২টি হাসপাতাল ও ৩২টি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, গাজার প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

হামাস কেমন আচরণ করেছে, জানালেন জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলি নারী

এদিকে গতকাল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে পবিত্র আল–আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল পুলিশ। মসজিদ চত্বরেও মুসলিমদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে মসজিদটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া মঙ্গলবার পশ্চিম তীর থেকে অন্তত ৩২ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েল। এ নিয়ে গত ১৮ দিনে সেখানে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করা হলো। একই সময়ে ইসরায়েলের হামলায় এখানে নিহত হয়েছেন ৯৬ জন।