‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শুক্রবার

১৭ নভেম্বর ২০২৩

২:৪৮:৫২ PM
1412434

অনবরত যুদ্ধে উসকানি দিয়ে ইসরাইল এখন গাজায় যেসব লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যদিও ৪০ দিন বিলম্বের পর শেষ পর্যন্ত গাজায় অস্থায়ী ও মানবিক যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব পাস করতে সফল হয়েছে, কিন্তু ইসরাইল এই প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।

এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের এমন অনেক প্রস্তাব আছে যেগুলো মেনে চলতে সবাই বাধ্য হলেও ইসরাইল সেসবের তোয়াক্কা করে না এবং মেনেও চলে না। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন থামাতে নিরাপত্তা পরিষদ এর আগে চেষ্টা করলেও চতুর্থ দফার এই প্রচেষ্টায় এবার একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। এতে গাজা উপত্যকা জুড়ে অবিলম্বে মানবিক বিরতি পালন করার আহ্বান জানানো হয় যাতে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর পাশাপাশি আহতদের অন্যত্র সরিয়ে আনার সুযোগ পাওয়া যায়। এই প্রস্তাবটির পক্ষে ১২টি দেশ ভোট দেয় এবং রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ভোটদানের বিরত থাকে।

মাল্টা কর্তৃক পেশ করা প্রস্তাবে বেসামরিক নাগরিকদের বিশেষ করে শিশুদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সময় চেয়ে গাজা উপত্যকা জুড়ে করিডোর তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে তিনি গাজায় ইসরাইলি বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তিও দাবি করেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে,  গাজায় অবাধে জ্বালানি সরবরাহ করতে দিতে হবে এবং জাতিসংঘের মহাসচিবকে নিরাপত্তা পরিষদের পরবর্তী বৈঠকে এর বাস্তবায়নের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। জাতিসংঘে মাল্টার রাষ্ট্রদূত, তার দেশের খসড়া প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার আগে বলেছিলেন, 'এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হল গাজার বর্তমান দুঃসহ পরিস্থিতির অবসান ঘটানো এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের মধ্যে আশা জাগিয়ে রাখা।'

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলা এমন সময় ৪১তম দিনে প্রবেশ করেছে যখন গাজার হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর নীচ দিয়ে হামাসের সুড়ঙ্গ থাকার দাবি করে ইসরাইল এসব জায়গাকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।  অথচ সিএনএন নিউজ চ্যানেল জানিয়েছে  আল-শিফা হাসপাতালের নীচ দিয়ে হামাসের সুড়ঙ্গ থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

বাস্তবতা হচ্ছে, গাজার যুদ্ধ যতই অব্যাহত থাকছে ততই ইসরাইল তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নতুন নতুন অজুহাত বের করছে। গাজার উপর স্থল আক্রমণের জন্য ইসরাইলে লক্ষ্য সম্পর্কে এক নিবন্ধে, দৈনিক রাই আল ইয়াওম লিখেছে, ইসরাইল বহুদিন ধরে গাজার বিরুদ্ধে এমন সব উস্কানিমূলক কাজ করে আসছিল যাতে  একদিন ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজায় একটি বড়সড় হামলা চালানোর সুযোগ পায়। আর এখন সেটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দৈনিকটির মতে, হামাসের ধ্বংস একটি অজুহাত মাত্র। বরং ইসরাইলের মূল লক্ষ্য হলো ইসরাইলের দক্ষিণে ইহুদি বসতিগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গাজার ভেতরে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত একটি নিরাপদ জোন তৈরি করা, যাতে ফিলিস্তিনিদের যে কোনো স্থল অভিযান থেকে তারা নিরাপদ থাকে। এ কারণে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের সমস্ত অবকাঠামো ধ্বংস করে দিচ্ছে যাতে তারা কখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। ইসরাইলের লক্ষ্য হচ্ছে নিরাপদ জোন তৈরির জন্য ফিলিস্তিনিদের উর্বর জমির ৩০শতাংশেরও বেশি দখল করবে। বিশেষ করে বর্তমানে তাদের টার্গেট হচ্ছে বিভিন্ন অজুহাতে গাজার পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ফিলিস্তিনিদের কৃষিজমি ধ্বংস করা। এইসব কৃষিজমি থেকে গাজার বাসিন্দাদের বেশিরভাগ খাদ্য সরবরাহ করা হয়, কিন্তু সেগুলো এখন ধ্বংসের মুখে পড়বে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি ও জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়বে। 

অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর কেবলমাত্র হামাসের ধ্বংস একমাত্র লক্ষ্য নয়, বরং তিনি গাজা দখল করতে চান। কারণ গাজায় কোটি কোটি ডলার মূল্যের গ্যাসের মজুদ রয়েছে। চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর, গাজায় ইসরাইলি হামলার দুই সপ্তাহ আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকায় গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করার জন্য ছয়টি ইউরোপীয় কোম্পানিকে ১২টি অনুসন্ধানের অনুমতি দেন। এই জলাধারগুলোর সম্পদের মূল্য প্রায় ৫২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার এবং এই সম্পদগুলোর একটি অংশ গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের এলাকায় রয়েছে।

এ থেকে বোঝা যায় যে, আল-আকসা তুফান সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় গাজায় সর্বাত্মক হামলা চালানো হচ্ছে বলে ইসরাইল দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে এই ধ্বংসাত্মক আক্রমণের পরিকল্পনার ছক অনেক আগে থেকেই করা হয়েছিল এবং আল-আকসা তুফান অভিযান কেবল একটি অজুহাত মাত্র।#