‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
মঙ্গলবার

১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

৫:০০:৪১ PM
1421704

আত্ম-পরিচিতি, খোদা পরিচিতি এবং কার্যকর সামাজিক ভূমিকা পালন যুবকদের কর্তব্য সমূহের অন্তর্গত: আয়াতুল্লাহ রামাজানী

আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব বলেন, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুবকদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। তদ্রূপ প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে মেয়েদের ভবিষ্যৎ মা এবং সমাজকর্মী হয়ে উঠতে হবে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): আয-যাহরা (সা.আ.) কলেজের একদল শিক্ষার্থী কোমে অবস্থিত আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থায় উপস্থিত হয়ে সংস্থার মহাসচিব আয়াতুল্লাহ রেজা রামাজানীর সাথে সাক্ষাত করেন।

এই সাক্ষাতে আয়াতুল্লাহ রামাজানী বলেন, বর্তমান সময়ে যুব-সমাজের আবশ্যকতার প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত এবং তাদের আবশ্যকতার অন্যতম একটি হচ্ছে, জীবনের প্রকৃত দর্শনকে উপলব্ধি করা। এক্ষেত্রে সমাজে নারীদের প্রতি উদাসীনতা বিবেচনায়, নারীদেরকে তাদের অবস্থান ও জীবন দর্শনের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

বেঁচে থাকাকে জীবন যাপন করা হতে পৃথক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জীবন যাপন করা মূলতঃ মানুষের সৃষ্টির লক্ষ্য এবং মানব পরিচয়ের সাথে সম্পর্কিত; কেননা শত্রুরা বর্তমানে বিশ্বাসী মানুষের মানব পরিচয় এবং স্রষ্টার সাথে তার পারস্পারিক সম্পর্ক নষ্টের প্রচেষ্টা করছে এবং তাকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যাতে সে ধর্ম, বিশ্বাস ও স্বীয় দায়িত্বের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে।

আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব একজন যুবকের অন্যান্য আবশ্যকতা সম্পর্কে বলেন, একজন যুবকের সম্মান ও মর্যাদার প্রয়োজন রয়েছে এবং সে চায় তার মর্যাদা রক্ষা হোক এবং অন্যরা তাকে সম্মান করুক। এটি তার অধিকার এবং সে প্রশংসা ও ধন্যবাদ পেতে, স্বাধীনতা অর্জন করতে এবং তার নিজের বিষয়গুলি নিজে সম্পাদন করতে চায়।

একক উদ্যোগে কাজ কোন ফলাফল বয়ে আনবে না তাই সম্মিলিত কাজ করার প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন এবং একজন যুবকের অন্যান্য আবশ্যকতার বিষয়ে বলেন, যুবকদের মানসিক নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে এবং এমনটি না হলে হতাশা ও নিরুৎসাহিত হবে। তদ্রূপ, যুবকদের ভালবাসার প্রয়োজন রয়েছে, অবশ্য এটি সকল বয়স শ্রেণীর জন্য প্রয়োজন, তবে যুবকদের মধ্যে বিষয়টি অধিক সুস্পষ্ট।

হাউযার উচ্চ-স্তরের এই শিক্ষক তার আলোচনার অপরাংশে ইমাম খোমেনীর (রহ.) বিপ্লবের পর ইসলামী ইরানের পরিচয় পাবার বিষয় উল্লেখ করেন এবং হজরত ইমামের দৃষ্টিতে যুবকদের বৈশিষ্টসমূহ সম্পর্কে বলেন, ইমামের দৃষ্টিতে, একজন যুবকের মধ্যে ত্যাগের মনোভাব থাকতে হবে এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে অগ্রগামী হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ইমাম বিশ্বাস করতেন, আল্লাহ যুবকদেরকে পছন্দ করেন। আল্লাহ ফেরেশতাদের সামনে যুবকদের দোয়া নিয়ে গর্ব করেন, সে চাইলে গোনাহের বৈঠকে থাকতে পারতো কিন্তু সে আমার সাথে কথা বলছে এবং তাদেরকে যুবকের দোয়া শুনতে বলেন।

আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব যুবকদের প্রতি আরও বেশি নজর দেয়ার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, একটি রেওয়ায়াতে সুপারিশ করা হয়েছে যে, علیکم بالاحداث যুবকদেরকে তাদের সহজাত গুণাবলী এবং তার বিশুদ্ধতার জন্য খুঁজে বের করুন।

ইমামের দৃষ্টিতে একাগ্র প্রচেষ্টাশীলতাকে যুবকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে উপস্থাপন করে তিনি বলেন, যুবকরা প্রচেষ্টাশীল হয় এবং একাগ্রতার সাথে কাজ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানের যুবকরা বন্যা ও ভূমিকম্পের মত সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখে এবং আল্লাহর জন্য প্রচেষ্টা করে এবং যুবকদের এরূপ কাজের মূল্য অনেক।

আয়াতুল্লাহ রামাজানী গুরুত্বারোপ করে বলেন, ইমামের দৃষ্টিতে যুবকরা কোমল, ঐশী এবং দিকনির্দেশনা গ্রহণকারী হৃদয়ের অধিকারী। তাদের হৃদয় না অহংকারী আর না নিষ্ঠুর। অপরদিকে যুবকদের শারীরিক শক্তিমত্তা এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকায়, তারা উচ্চ লক্ষ্যে অর্জনের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে।

তিনি সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিকোণ থেকে সমসাময়িক যুবকদের কর্তব্য সম্পর্কে বলেন, বিপ্লবের নেতার দৃষ্টিতে, বর্তমান যুব-সমাজকে ধার্মিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন হতে হবে এবং তার মানদণ্ড হওয়া উচিত মানবিক ও ঐশ্বরিক মূল্যবোধ, না বস্তুগত মূল্যবোধ।

আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব যুবকদের অন্যান্য কর্তব্য সম্পর্কে বলেন, বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিকোণ থেকে, যুব-সমাজকে ধর্মীয় জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চারণের জন্য অধ্যয়ন করা উচিত। এভাবেই সমাজের উন্নতি সাধিত হবে। যে সমাজ যত জ্ঞানশূন্য সেই সমাজ ততই দুর্বল। এক সময় জ্ঞানচর্চার দিক থেকে মুসলিম দেশগুলো ছিল উৎকৃষ্ট এবং পশ্চিমারা আমাদের নিকট থেকেই বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করেছে। অতএব, ভবিষ্যতে মুসলমানদের অবশ্যই জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম স্থান অর্জন করতে হবে এবং এটিই বিশ্বে মুসলমানদের উন্নতির কারণ হবে।

রাহবারের দৃষ্টিতে অন্তর্দৃষ্টি-পূর্ণ এবং সচেতন থাকাকে যুবকদের অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে মুসলমানদের সাথে ঘটে যাওয়া বিশ্বাসঘাতকতা, শত্রুতা ও হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়ে যুবকদের সচেতন থাকতে হবে। কেননা আজকাল কিছু মানুষ মুসলমানদের হেয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে, এজন্য পৃথিবীর খবরা-খবর সম্পর্কে জানতে হবে। বর্তমানে গাজা একটি আন্তর্জাতিক কারাগারে পরিণত হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে ইহুদিবাদীদের আক্রমণে ১৭ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছে, ৫ হাজার শিশু শহীদ হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

হাউযা ইলমিয়া কোমের উচ্চ-স্তরের এই শিক্ষক কার্যকর সামাজিক ভূমিকা পালনকে যুবকদের কর্তব্য হিসেবে উল্লেখপূর্বক বলেন, আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব বলেন, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুবকদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। তদ্রূপ প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে মেয়েদের ভবিষ্যৎ মা এবং সমাজকর্মী হয়ে উঠতে হবে।

তিনি আল্লাহর প্রতি ভরসা করা, আল্লাহর আউলিয়াগণ ও আহলে বাইত (আ.) গণকে ওসীলা করা এবং জ্ঞানার্জনকে যুবকদের অন্যতম কর্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, সঠিকভাবে দ্বীনকে শেখা ও শেখানো প্রয়োজন। অন্যদিকে, যুব-সমাজকে নিজেদের আদর্শ সম্পর্কে জানা উচিত যে, তারা কাদের অনুসরণ করছে। বর্তমানে আমাদের অনুকরণীয় অনেক রয়েছে যাদেরকে আদর্শ নির্ধারণ করা উচিত। অন্যদিকে শিক্ষা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সকল নারীর আদর্শ হলেন হজরত যাহরা (সা.আ.) ও হজরত জয়নাব (সা.আ.)।

তিনি যুবকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, জ্ঞান, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জিহাদের ক্ষেত্রে যুবকদের অবস্থান এবং অক্লান্ত তৎপর হওয়া প্রয়োজন।

পরিশেষে আয়াতুল্লাহ রামাজানী বলেন, প্রকৃত বিশ্বাসী হবার জন্য একজন যুবকের উচিত আত্ম-পরিচিতি ও খোদা পরিচিতি অর্জন করা নিজেকে এবং আল্লাহকে সঠিকভাবে জানা।#176A