‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বুধবার

৩ জানুয়ারী ২০২৪

৩:৩৩:২৫ PM
1426346

সালেহ আল-আরুরিকে হত্যার পেছনে ইসরাইলের আসল উদ্দেশ্য কি?

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে আসা দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের ড্রোন হামলায় হামাস নেতা সালেহ আরোহিসহ ছয় জন শাহাদাৎবরণ করেছেন। ইসরাইলের এই পাশবিক হামলার পেছনে এখানে কিছু কারণ বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

প্রথমত হামাসের রাজনৈতিক শাখার উপ-প্রধান সালেহ আল আরুরির হত্যাকাণ্ড অন্য কিছুর চেয়ে এখন যে বিষয়টি সর্বত্র আলোচনা চলছে তা হচ্ছে গাজা যুদ্ধে সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ইহুদিবাদীদের ব্যর্থতার হতাশা থেকেই তেল আবিব সরকার এ জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। গাজা যুদ্ধে ইহদিবাদী ইসরাইলের দুটি প্রধান সামরিক লক্ষ্য ছিল। একটি হচ্ছে গাজায় প্রতিরোধাকমী সংগঠনগুলোর হাতে আটক ইহুদিবাদী বন্দীদেরকে বল প্রয়োগ করে মুক্ত করে নিয়ে আসা এবং হামাসের শক্তি ও সামর্থকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া। এই দুটি লক্ষ্যের কোনোটিই ইসরাইল অর্জন করতে সক্ষম হয়নি এবং এর ফলে যুদ্ধবাজ এবং শিশু হত্যাকারী নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা দখলকৃত অঞ্চলের অভ্যন্তরে ব্যাপক চাপের মধ্যে ছিল। তাই এই যুদ্ধ থেকে নেতানিয়াহুর একটা অর্জন দরকার ছিল।

সালেহ আল-আরুরির হত্যাকাণ্ডকে এ দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। অন্য দিনগুলোতে আরো অন্যান্য নেতা বা ব্যক্তিকে হত্যা করা হতে পারে।

দ্বিতীয়ত সালেহ আল-আরুরির হত্যাকাণ্ড লেবাননের মাটিতে পরিচালিত হয়েছিল এবং এটি দেশটির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের একটি স্পষ্ট উদাহরণ।
অন্যদিকে, লেবাননে হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহর হুঁশিয়ারির পর এই অপরাধযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে যেখানে তিনি বলেছিলেন যে লেবাননের মাটিতে যেকোন ব্যক্তিকে হত্যা করা হলে তার পরিচয় ও জাতীয়তা নির্বিশেষে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। এই অপরাধযজ্ঞ চালানোর অর্থ হল ইহুদিবাদী ইসরাইলি সরকার গাজার সাথে যুদ্ধের ফ্রন্ট সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে এবং প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে বিশেষ করে লেবাননের হিজবুল্লাহকে আরও ব্যাপকভাবে যুদ্ধে জড়ানোর বাধ্য করার একই সময়ে দখলদার এই অবৈধ সরকার তার পশ্চিমা মিত্রদের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাতে এই যুদ্ধে জড়িয়ে  পড়ে তার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি হামলার নিন্দা জানিয়ে জোর দিয়ে বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড একটি ইসরাইলি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যা নিঃসন্দেহে দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদিনের এবং ক্রমাগত আগ্রাসনের পর লেবাননকে সংঘাতের একটি নতুন পর্যায়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সংঘটিত হয়েছে। 

তৃতীয়; ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধমূলক পদক্ষেপ চলমান গাজা যুদ্ধে প্রভাব ফেলবে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেখানে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এখন সালেহ আল-আরুরির হত্যাকাণ্ডের ফলে ইহুদিবাদীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে। হামাস আন্দোলন মধ্যস্থতাকারীদেরকে যুদ্ধবিরতি বা বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা স্থগিত করার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে ।

মিশরও গাজা যুদ্ধে তার মধ্যস্থতা স্থগিত করেছে। ইসরাইলি নিরাপত্তা প্রতিনিধিদল কায়রো ত্যাগ করেছে বলে জানা গেছে। সালেহ আল-আরুরির হত্যাকাণ্ড এবং তার আগে সিরিয়ায় ইরানের আইআরজিসির কমান্ডার সাইয়্যেদ রাজি মুসাভির হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করেছে যে ইহুদিবাদী শাসক গুপ্তহত্যা ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় পারদর্শী। প্রকৃতপক্ষে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো এই অপরাধী ইসরাইলের সন্ত্রাসী চরিত্রের প্রমাণ  দিচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ড আরো একবার প্রমাণ করল যে ইহুদিবাদী শাসক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।#