‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বৃহস্পতিবার

৪ জানুয়ারী ২০২৪

১১:১৫:৩১ AM
1426627

ইরানে সন্ত্রাসী হামলার পেছনে কারা, উদ্দেশ্য কী

ইরানের জাতীয় বীর জেনারেল কাসেম সোলাইমানির সমাধিস্থলের অদূরে গতকাল দু'টি আলাদা বিস্ফোরণে শহীদের সংখ্যা পর্যালোচনা করা হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ওয়াহিদি জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে ৮৪ জন শহীদ হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ২৮৪ জন।

এর মধ্যে বর্তমানে ২২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর আগে ইরানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক ভাবে বলেছিল, শহীদ মানুষের সংখ্যা ১০৩। জানা গেছে, কয়েকজনের নাম ভুলবশত একাধিক বার লেখা হওয়ায় সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল।

শহীদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ বেশ কয়েক জন আহত ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল (বুধবার) জেনারেল সোলাইমানির চতুর্থ শাহাদাৎ বার্ষিকীতে এই মহান ব্যক্তিত্বের কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। যারা বোমা বিস্ফোরণে হতাহত হয়েছেন তারাও কবর জিয়ারতের জন্য পায়ে হেঁটে সেদিকেই যাচ্ছিলেন। ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাক সফরে যাওয়ার পর আমেরিকার সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর ড্রোন হামলায় কাসেম সোলাইমানি শহীদ হন।

কেরমান শহরে গতকালের সন্ত্রাসী হামলার পর ইরানের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলেছেন, খুনি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকেরা কড়া জবাব পাবে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, নিরপরাধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত যাদের হাত তাদের পাশাপাশি শয়তানি বুদ্ধি ও মস্তিষ্ক খাটিয়ে যারা তাদেরকে অন্যায় পথে নিয়ে গেছে তাদের সবাই ন্যায়সঙ্গত শাস্তি ও কঠোর দমনের সম্মুখীন হবে। শত্রুদের জানা উচিৎ ইনশাআল্লাহ এই বিপর্যয় সৃষ্টির কারণে কঠোর জবাব পাবে তারা। হামলার ঘটনার পরপরই ইরানের বিভিন্ন শহরে ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে জনগণ।

১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার পর থেকেই আমেরিকা ও তার মিত্রদের রোষানলে পড়ে ইরান। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় বিপ্লবের পর থেকে এ পর্যন্ত ইরানে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। শহীদদের তালিকায় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের বহু ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।

গতকালের সন্ত্রাসী হামলার পেছনেও ইহুদিবাদী ইসরাইল ও আমেরিকার হাত রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই সন্ত্রাসী হামলার আগের দিন লেবাননে ড্রোনের সাহায্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল আরুরি-কে হত্যা করে ইসরাইল। এর কয়েক দিন আগেই সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে ইরানের সামরিক কমান্ডার সাইয়্যেদ রাজি মুসাভিকে শহীদ করা হয়। এই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বকে হত্যার ধারাবাহিকতায় কেরমানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। এ কারণে গতকালের সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গেও ইসরাইল ও তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমেরিকা জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ইরানে বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই জড়িত নয়। এই বিস্ফোরণের পেছনে ইসরাইলের হাত রয়েছে- এটা বিশ্বাস করারও কোনো কারণ নেই বলে তিনি দাবি করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় যুদ্ধের ময়দানে ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের সঙ্গে পেরে উঠছে না দখলদার ইসরাইলি বাহিনী, এ কারণে তারা এ ধরণের সন্ত্রাসী হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ার আশঙ্কায় দখলদার ইসরাইল, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কেরমানে হামলার দায় স্বীকার না করছে না। কিন্তু আসলে এই হামলার পেছনে তারাই রয়েছে।

যাইহোক, গত ৪৩ বছর ধরেই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসেছে আমেরিকা ও তার মিত্ররা। তারা এর মাধ্যমে ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থার পতন ঘটাতে চেয়েছে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। ইসরাইল ও আমেরিকার নানা অন্যায় পদক্ষেপের পর ইরানি জনগণ আগের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং তাদের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।#