‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শনিবার

৬ জানুয়ারী ২০২৪

৭:০১:৩৫ AM
1426977

পাকিস্তান মুসলিম ঐক্য পরিষদের সহকারী সাধারণ সম্পাদকের সাক্ষাতকার:

প্রসঙ্গ; “পাকিস্তান ও ইরানকে অনিরাপদ করতে আমেরিকার ভূমিকা” ও “ইমরান খানের পার্টির সঙ্গে জোট”

সৈয়দ নাসের আব্বাস সিরাজি: আমরা ঐক্য পরিষদের চুক্তিবদ্ধগণ ইমাম খোমেনী এবং শহীদ আরেফ হোসেন হোসাইনির আদর্শ ও চিন্তাধারার অনুকরণে একটি বৃহৎ শিয়া ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দল হিসাবে ইমরান খানের বড় দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছি।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): পাকিস্তান মুসলিম ঐক্য পরিষদ (MWM) হচ্ছে পাকিস্তানের শিয়া রাজনৈতিক দলসমূহের একটি যা ২০০৯ সালে গঠিত হয়। যাদের মূল লক্ষ্য ইসলামের প্রসার, পাকিস্তানের ভূখণ্ড রক্ষা, ইসলামী কর্তৃত্ব রক্ষা, বঞ্চিতদের সহায়তা এবং ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতি সমর্থন করা। এছাড়াও পাকিস্তানের মুসলিম ঐক্য পরিষদ মসজিদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ এবং এতিমখানা পরিচালনার মত জনসেবামূলক কাজ করে থাকে।

২০১০ সাল হতে দলটির মহাসচিব পদে রয়েছেন রাজা নাসের আব্বাস জাফরি। পাকিস্তান মুসলিম ঐক্য পরিষদের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এর সুপ্রিম কাউন্সিল, যারা দলটির নীতি প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করে থাকে। দলটির সদর দপ্তর পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত। তাছাড়া প্রতিটি রাজ্যে প্রাদেশিক কার্যালয় রয়েছে। এমনকি ইরানেও মুসলিম ঐক্য পরিষদের শাখা গঠিত হয়েছে।

সামাজিক সেবা ও রাজনৈতিক কার্যক্রম

মুসলিম ঐক্য পরিষদের, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রমও রয়েছে। খাইরুল আমাল সংস্থা এবং দলের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এ জাতীয় দায়িত্ব পালন করে থাকে। মসজিদ নির্মাণ ছাড়াও এ দলের সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে দুস্থ ও এতিমদের সাহায্য, গণ-বিবাহের আয়োজন, সুপেয় পনির পাইপ বসানো এবং যুব-প্রশিক্ষণ।

মুসলিম ঐক্য পরিষদ, গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পাকিস্তানে শিয়াদের অধিকার রক্ষা করে। মুসলিম ঐক্য পরিষদের অন্যতম লক্ষ্য হল ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করা যাতে সকল ইসলামি মাজহাব পাকিস্তানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এই শিয়া সংগঠনটি পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং দলটির সাথে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের জোট অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত।

পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং আসন্ন দেশটির জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আহল বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান মুসলিম ঐক্য পরিষদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নাসের আব্বাস সিরাজির দেশটির সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং শিয়া দলগুলোর অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ আবনা পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিম্নে তুলে ধরা হল:

আবনা: আসন্ন পাকিস্তানের নির্বাচনে রাজনৈতিক অবস্থা এবং শিয়া ও মুসলিম দলগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে বলুন। নির্বাচন কোন দিকে গড়াবে এবং নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

-শুরুতেই বলতে চাই, পাকিস্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র; এদেশে ২৫ কোটি মানুষের বাস, এর মাঝে ৬ কোটি শিয়া ও আহলে বাইতের (আ.) অনুসারী রয়েছে। ভৌগলিকভাবে চীন, ইরান এবং আফগানিস্তানের সাথে সীমান্তবর্তী এবং রাশিয়ার নিকটবর্তী অবস্থানের কারণে ভূ-রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের পরিবর্তন শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং তা এই অঞ্চল ও বিশ্বে প্রভাব ফেলে। দুর্ভাগ্যবশত, পাকিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পিত ‘সরকার পরিবর্তন অভিযান’ পরিচালনার মাধ্যমে সাংবিধানিক ধারায় পরিচালিত ইমরান খানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং একটি জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই পাকিস্তানকে চরম সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে। যে দেশে রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয় তখন নিশ্চিতরূপে দেশটি অর্থনৈতিক সংকট ও নিরাপত্তা সংকটের দিকে ধাবিত হয়। দুর্ভাগ্যবশত, পাকিস্তানে এখন এই তিন ধরনের সংকট বিদ্যমান। বর্তমানে সেখানে কোন রাজনৈতিক সংহতি নেই। সম্প্রতি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে লাখো মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে এসেছে। এছাড়া, বাণিজ্যিক সমস্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সর্বশেষ সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের দুটি প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান চরমপন্থিদের চাপের মুখে রয়েছে। সম্প্রতি, এই দুটি প্রদেশে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনায় শতাধিক সেনা সহ অনেকে নিহত হয়েছে। এসব ঘটনার কারণে সীমান্ত অঞ্চলে ইরানও নিরাপত্তা সংকটে ছিল।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলব, পাকিস্তানে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে; ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু ইউরোপ, সৌদি আরব ও আমেরিকার চাপ এতটাই বেশি যে, এখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই সমস্যা মূলতঃ রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও বিভক্তির কারণে, কেননা ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ সমস্যার সম্মুখীন এবং এ দলের নেতৃবৃন্দ সহ কয়েক হাজার মানুষ কারাগারে রয়েছে। এছাড়াও, জনগণকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ায়, এই মুহূর্তে জনগণ রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে।

আমরা চীনের সীমান্তবর্তী; চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতির এবং তেলের বৃহত্তম ক্রেতা। চীন অতীতে সৌদি আরব এবং পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে সমুদ্রপথে দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিয়ে তেল ক্রয় করতো। পরে চীনারা "চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর [CPEC]" নামে একটি রুট তৈরি করে, যা ইরান থেকে মাত্র আধা ঘণ্টা দূরত্বে। ইরান বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির একটি এবং চীন তেলের বৃহত্তম ক্রেতা। এই করিডোর ব্যবহার যেমন চীনাদের খরচ আর সময় কমাবে, তেমনি চীন ও পাকিস্তানের অর্থনীতি মজবুত করবে। কিন্তু আমেরিকা এটা চায় না। পাকিস্তানের নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে কাজ করছে এবং সমস্যা সৃষ্টির পায়তারা করছে।

আমেরিকা পাকিস্তানের কাছে দু’টি জিনিস চায়, প্রথমটি চীনকে সহযোগিতা না করা এবং অন্যটি ইরানের সাথে সম্পর্ক না রাখা। ইরান-পাকিস্তান গ্যাস পাইপলাইন হওয়ার কথা ছিল। ইরান চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত লাইন নির্মাণ করে। কিন্তু পাকিস্তানের ভিতরের অংশে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আমেরিকা পাকিস্তানকে তার দেশে গ্যাস পাইপলাইন তৈরি করতে দেয়নি।

আবনা: বর্তমানে পাকিস্তান নিরাপত্তা সমস্যায় ভুগছে, কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হল এবং এটা কি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে?

-নিরাপত্তা ইস্যুতে পাকিস্তান ও ইরান পরস্পর সম্পর্কিত। পাকিস্তানে বেলুচিস্তান মুক্ত করন আন্দোলন যেমন ইরানের জন্য হুমকি, তেমনি ইরানের চরমপন্থিরা শক্তিশালী হলে তা পাকিস্তানের জন্য হুমকি। এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি চরমপন্থি গোষ্ঠী আমেরিকা এবং তাদের মিত্র দেশগুলির সাথে কাজ করছে এবং ইরান-আফগানিস্তান-পাকিস্তানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বেশকিছু সমস্যা চলছে।

মোটকথা, একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও নিরাপত্তা পুনরায় ফিরে আসবে। অবশ্য আমি আশাবাদী নই; কারণ এতদিন যা ঘটেছে, তাতে আমরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি।

আবনা: ইমরান খানের দলের সাথে কি মুসলিম ঐক্য পরিষদের জোটবদ্ধ রয়েছে?

হ্যাঁ, এই জোট চলমান রয়েছে।

আবনা: আপনি কি মনে করেন, ইমরান খান কারাগারে থাকায় শিয়ারা অন্য কোন দলের সাথে জোটবদ্ধ হবে?

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রথমত, যখন ইমরান খানের সরকার নেমে যায়, আমরা মুসলিম ঐক্য পরিষদ এবং তেহরিক-ই-ইনসাফের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করি। পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো কোন প্রধান শিয়া ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠন, ইমরান খানের দলের সাথে বৈঠক করে। সেখানে উভয় দলের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এই চুক্তির সাতটি মূলনীতি রয়েছে। চুক্তিতে আমরা যে বিষয়গুলি যোগ করেছি তা ইমাম খোমেনী এবং শহীদ আরেফ হোসেন হোসাইনির আদর্শ ও চিন্তা থেকে নেয়া হয়েছে। আরেফ হোসেন হোসাইনির শাহাদাতের পর ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর পক্ষ থেকে প্রেরতি করা বার্তায়, তাকে প্রিয় পুত্র বলে অভিহিত করেন। স্বাক্ষরিত সাতটি নীতির মধ্যে রয়েছে: পাকিস্তানের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, পররাষ্ট্রনীতি, ফিলিস্তিনসহ অন্যান্য বিষয়।

অবশ্য, আমাদের সামনে দু’টি সমস্যা আসে। প্রথমটি পাঞ্জাবে তাকফিরি দলগুলি একত্রিত হয়ে একটি শিয়া বিরোধী বিল স্বাক্ষর করে এবং পাঞ্জাব বিধানসভায় পাস করে। এই বিলটি চূড়ান্ত অনুমোদনের রাজ্যের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়। এর বিরুদ্ধে আমরা তেহরিক-ই-ইনসাফের সাথে যোগাযোগ করি এবং অবশেষে বিধানসভায় অনুমোদিত বিলটি পুনরায় বিধানসভায় ফিরে আসে। পুনরায় বিলটি উত্থাপিত হলে, ৮০ জন প্রতিনিধি এই বিলে অসম্মতি জানায়। এটি মুসলিম ঐক্য পরিষদ এবং তেহরিক-ই-ইনসাফ জোটের অন্যতম ফলাফল।

অপর সমস্যাটি ছিল, ইমরান খানের সরকার ভেঙ্গে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধনে বিরোধী দলগুলো একটি জোট গঠন করে। তারা "নবুয়ত ও আহলুল বাইত ও সাহাবিদের অবমাননার জন্য শাস্তি সংক্রান্ত আইন" শিরোনাম আরেকটি বিল উত্থাপন করে। বিলটি ছিল শতভাগ শিয়াদের বিরুদ্ধে। এই বিলের শিরোনামটি ভাল, তবে এর ফলাফল ভাল না। বিলটি পাশ হলে দেশজুড়ে হাজার হাজার শিয়াকে কারারুদ্ধ করা হত। বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বিল জাতীয় পরিষদ ও সিনেটে পাস করায় এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। এবারও আমাদের জোট সক্রিয় ভূমিকা রাখে এবং তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের সমর্থিত রাষ্ট্রপতি এই বিল প্রত্যাখ্যান করেন। যদিও সারাদেশে চরমপন্থিরা ঐদিন বিজয়ের দিন হিসেবে চিহ্নিত করে, তবে ফলাফলে তারা খুবই হতাশ হয়। আলহামদুলিল্লাহ, এক্ষেত্রেও আমরা বিজয় অর্জন করি।

আবনা: অতীতের নির্বাচনে আমরা চরমপন্থি সিপাহ সাহাবার অবশিষ্টাংশ এবং অনুরূপ দলের উপস্থিতি দেখেছি। এক্ষেত্রে আপনাদের জোটের নির্বাচন ভাবনা কি এবং আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলি কারা?

বাস্তবতা কঠিন হলেও, নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হলে তাকফিরিরা পরাজিত হবে। তারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত দলগুলোর সাথে জোট বেঁধেছে। এটা খুবই মজার যে, সকল চরমপন্থি গোষ্ঠী যে কোন ইস্যুতে ফতোয়া জারি করার জন্য বিখ্যাত ছিল, কিন্তু ফিলিস্তিনের ব্যাপারে তারা কিছুই করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি তদন্ত করেছে, যার মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সেনা কমান্ডাররা রয়েছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংগঠন ISI, MI, এবং IB শাহবাজ শরীফের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বলেছিলেন, আমেরিকা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে এবং একটি নথিতে স্বাক্ষর করেছে।

চরমপন্থিরা আমেরিকার শরণাপন্ন হয়েছে। আমরা তেহরিক-ই-ইনসাফের সাথে চুক্তি করেছি, উগ্রপন্থী দলগুলো সংসদে থাকবে না। যদি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে তারা সংসদে আসতে পারবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাদের সরকারের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া তাদের দ্বারা অবৈধ পথে আসাও সম্ভব।

মুসলিম লীগের দেখানো পরিসংখ্যানে দেখায়, আশি শতাংশেরও বেশি মানুষ তেহরিক-ই-ইনসাফের পক্ষে এবং তারা পাকিস্তানে আমেরিকার উপস্থিতি চায় না।

এখন রাজনৈতিক দলগুলোর যুদ্ধ না থাকলেও রাজনীতির ময়দানে আমেরিকা-পন্থী এবং আমেরিকা বিরোধীদের মধ্যে যুদ্ধ চলমান। আমরা আমেরিকার বিরুদ্ধে অবস্থান করছি এবং নির্বাচন ও জনগণের ভোটের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করব।

আবনা: আমরা তুফানুল আকসা অভিযানের সময় পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিশাল জনসমাবেশ দেখেছি। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে পাকিস্তানের নীতি সংক্ষেপে বলুন।

পাকিস্তান অনেক আগে ফিলিস্তিন রক্ষা এবং ইসরায়েলে বিরুদ্ধে ময়দানে প্রবেশ করেছে। ফিলিস্তিন পাকিস্তানের আদর্শের সাথে জড়িত। ফিলিস্তিনকে প্রথম সমর্থন করে মুসলিম লীগ এবং কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এই নীতি ঘোষণা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান এখনো ইসরায়েলকে একটি দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

আবনা: ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্য অনেক শোরগোল ফেলেছে।

-জি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমেরিকা সমর্থিত এবং দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কায়েদে আজমের নীতির বাহিরে গিয়ে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিল।

মুসলিম ঐক্য পরিষদ সর্বপ্রথম তুফানুল আকসার সমর্থনে সারা দেশে কাজ করে। আমরা ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি। মানুষের উপস্থিতি সত্যিই অসাধারণ ছিল। তারা ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন করার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক।

দুর্ভাগ্যবশত, মার্কিন চাপের কারণে পাকিস্তান সরকার তার অতীত অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাই আমরা মুসলমানেরা বাধা দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, শিয়া-সুন্নি ও ধর্মীয় দলগুলো এ বিষয়ে একমত।

আবনা: সম্প্রতি পাকিস্তানের পারাচিনারের ঘটনা এবং ইরানে তথাকথিত জইশ আল-আদল গ্রুপের হত্যাকাণ্ড অনিরাপদ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে আপনি কি মনে করেন?

-আমেরিকা পাকিস্তানকে বিভক্ত বা দুর্বল করতে চায়। তারা পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান প্রদেশে কাজ করে। জইশ আল-আদল শুধু ইরানে নয় বরং পাকিস্তানের নুশকি, জোব, গোয়াদর, পাসনিসহ  বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। ফলে শতাধিক সেনা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার দুর্বল হয়ে পড়ায় এই সন্ত্রাসীরা শক্তিশালী হয়েছে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইরানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারলে তা পাকিস্তানের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তারা ইরান-পাকিস্তানের সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়।

কিন্তু পারাচিনারের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এখানে তিনটি দিকে সীমান্ত। আফগানিস্তান সরকারও দুর্বল। আমরা এ বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোল্লা আমিরের সাথে বৈঠক করেছি। মূল সমস্যা আফগানিস্তান-পাকিস্তান উভয় দেশেই চরমপন্থিদের অবস্থান।

পাকিস্তান সরকার এখনো বেশ কয়েকজন শিয়া শিক্ষক ও কর্মী হত্যার অপরাধীদের গ্রেফতার করেনি। সরকার কেন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করছে না, তা নিয়ে পৃথক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

পারাচিনারের এই সমস্যা শুধু অভ্যন্তরীণ নয় বরং এখানে নাশকতার পিছনে বিদেশীদের ইন্ধন রয়েছে। পারাচিনার শিয়ারা খুবই শক্তিশালী, যখনই বাইরে থেকে কোন হামলা হয়েছে তারা জবাব দিয়েছে। এই মুহূর্তে পারাচিনারের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় খুব ভাল।

পারাচিনারের মেয়র আমাদের মুসলিম ঐক্য পরিষদের। সেখানে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখি। এখান থেকে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। ইনশাআল্লাহ, এবার নির্বাচনে পারাচিনার থেকে আমাদের একজন প্রতিনিধি সংসদে আসবে।

আবনা: আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।