‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : IQNA
শনিবার

৬ জানুয়ারী ২০২৪

৭:১৫:৪৩ AM
1426982

আরূরীর বোন , ভাইয়ের শাহাদাতের খবর শুনে বলেছেন : " মহান আল্লাহর সকল প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে শাহাদাতের মাধ্যমে আমাদের সালেহকে মাথা উঁচু ও অত্যন্ত সম্মানিত করেছেন।

আবনা ডেস্ক: তূফানুল আকসার জিহাদের ৮৮ তম দিবসে হামাসের রাজনৈতিক দফতরের উপপ্রধান সালেহ আল-আরূরী লেবাননের রাজধানী বৈরূতের দক্ষিণ অংশে ( আদ দ্বহীয়া আল - জুনূবীয়ায় ) স্বীয় বাসভবনে ঘাতক ইসরাইলী ড্রোনের হামলায় শহীদ হয়েছেন এবং তাঁর সাথে আরো ৬ জন শহীদ হয়েছেন।

সালেহ আল - আরূরীর বোন , ভাইয়ের শাহাদাতের খবর শুনে বলেছেন : " মহান আল্লাহর সকল প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে শাহাদাতের মাধ্যমে আমাদের সালেহকে মাথা উঁচু ও অত্যন্ত সম্মানিত করেছেন। শাহাদাত ছিল তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা যার অন্বেষণ সে সবসময় করেছে । "

আল - জাযীরার সাথে প্রদত্ত তার সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে শহীদ সালেহ বলেছিলেন : " (গাযায়) ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ ও সার্বিক ও চূড়ান্ত যুদ্ধ বিরতি না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবন্দী বিনিময় হবে না । "

তিনি ঐ সাক্ষাৎকারে আরও বলেছিলেন : " যুদ্ধ বন্ধ এবং সকল ফিলিস্তীনী বন্দী মুক্ত হওয়ার শর্তেই কেবল যায়নবাদী যুদ্ধবন্দীরা মুক্ত হবে । "

শহীদ সালেহ আল আরূরীর হত্যাকাণ্ডকে ২২০০০ গাযাবাসীকে বোমাবর্ষণ করে হত্যা এবং ৫২০০০- এর অধিক কে আহত করা এবং গাযার খানিকটা ভূখণ্ড দখলের সাথে যুদ্ধে ইসরাইলের এক বিরাট সাফল্যে বলে দেখানোর চেষ্টা করবে নেতানিয়াহু সরকার যাতে সে দুর্নীতির মামলা ও বিচারে জেলে যাওয়া থেকে রেহাই পেতে সক্ষম হয় !!!

আরো এক মাসও যদি এ যুদ্ধ ও আগ্রাসন চলে তাহলে তা ইসরাইলের জন্য অনেক মারাত্মক হবে । আর যুদ্ধ জয় এবং ঘোষিত চূড়ান্ত লক্ষ্য সমূহ অর্জন তো দূরের কথা ইসরাইল এ যুদ্ধে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সামরিক সাফল্য অর্জন করতে পারছে না। আর এ কারণেই ইসরাইল ফিলিস্তীনী প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতাদের বিশেষ করে হামাস ও ইসলামী জিহাদের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে হত্যার মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দিকে ঝুঁকেছে ।

এ ধরণের হত্যাকাণ্ড থেকে প্রতীয়মান হয় যে ইসরাইল আসলে যুদ্ধের ময়দানে ( রণাঙ্গনে ) পরাজিত ও ব্যর্থ হওয়ার দরুন নিরীহ বেসামরিক জনগণকে বোমাবর্ষণ করে গণ হত্যা এবং এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধের দিকে হাত বাড়িয়েছে। ইসরাইলের এ ধরনের হত্যাকান্ড ( হামাস , ইসলামী জিহাদ তথা প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতাদের হত্যা ) চালিয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক আলোচনা ও দরকষাকষিতে ( Political and diplomatic negotiations ) প্রভাব বিস্তার করতে এবং প্রতিপক্ষের ওপর নিজের শর্তাবলী চাপাতে সক্ষম হয়।

কিন্তু যেমনভাবে বিগত ৭৫ বছর যাবৎ ফিলিস্তীনীদের ওপর গণহত্যা , আগ্রাসন , জবরদখল , লুণ্ঠন , বৈষম্যের মতো অন্যায় অবিচার, অত্যাচার ও অপরাধ করেও ফিলিস্তীনীদের মধ্য থেকে প্রতিরোধ সংগ্রামের মনোবৃত্তিকে ধ্বংস করতে পারে নি ঠিক তেমনি

ইসরাইল বর্তমানেও এ ধরণের সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ফিলিস্তীনীদের প্রতিরোধ আন্দোলন ধ্বংস করতে পারবে না যদিও তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে এ যুদ্ধে ইসরাইল হামাস ও ইসলামী জিহাদকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে এবং গাযাবাসীদের গাযা থেকে উচ্ছেদ ও বের করে দিতে সক্ষম হবে । যে পর্যন্ত ফিলিস্তীনীরা বিদ্যমান থাকবে সে পর্যন্ত ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম অব্যাহত ও টিকে থাকবেই । কারণ ফিলিস্তিনি জাতি এবং দখলদার হানাদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম সত্য এবং সত্য ( হক ) কখনো ধ্বংস হয় না । অন্যায় অবিচার অত্যাচার , আগ্রাসন , জবরদখল , হত্যাযজ্ঞ ইত্যাদির মতো অপরাধ দিয়ে কোনো রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না । আর ইসরাইল হচ্ছে জালেম , জবরলখলকারী, দখলদার হানাদার, আগ্রাসী , ঘাতক গণহত্যাকারী , চরম বর্ণবৈষম্যবাদী , সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র , ( রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের এক উৎকৃষ্ট নমুনা হচ্ছে ইসরাইল নামক মেকি কৃত্রিম রাষ্ট্রটি ) যা অবশ্যই ধ্বংস ও বিলুপ্ত হতে বাধ্য যদিও মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , যুরা ( যুক্ত রাজ্য ) ও পাশ্চাত্য মেকি কৃত্রিম এ রাষ্ট্রটির পৃষ্ঠপোষক এবং বিভিন্ন ধরণের উন্নত ও অত্যাধুনিক ( আল্ট্রামডার্ন) বিধ্বংসী অস্ত্র ও হাতিয়ার দিয়ে ইসরাইলকে সুসজ্জিত করে রাখছে এবং তারা সবাই চায় ফিলিস্তিনি জাতির অস্তিত্ব মুছে ফেলতে।

সালেহ আল আরূরীর উপমা হচ্ছে ঐ সব ব্যক্তির উপমার মত যাদের ওপর মহান আল্লাহ শাহাদাতের সৌভাগ্য নির্ধারণ করেছেন এবং তারাও স্বেচ্ছায় নিজেদের শাহাদাত বরণের স্থলে পৌঁছে গেছেন । শাহাদাত ধ্বংস ও মৃত্যু নয় বরং তা উচ্চ পর্যায়ের জীবন যা পার্থিব জীবনে জীবিত ব্যক্তিরা বুঝতে ও অনুভব করতে পারে না ।

وَ لَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ یُقْتَلُوْا فِيْ سَبِیْلِ اللٌٰهِ أَمْوَاتٌ ج بَلْ أَحْیَاء وَلٰکِنْ لَّا تَشْعُرُوْنَ ( البقرة : ۱۵۴ )

যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছেন তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না , বরং তাঁরা জীবিত কিন্তু তোমরা তা বুঝ না । ( বাকারা : ১৫৪ )

মুমিনদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি আছেন যারা মহান আল্লাহর সাথে যে প্রতীজ্ঞা ( আহদ) করেছেন তা পালন ও পূর্ণ করেছেন তাঁদের মধ্য থেকে এমন কতিপয় ব্যক্তি আছেন যারা স্বীয় প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছেন ( শহীদ হয়েছেন ) এবং তাদের মধ্যে আরো কিছু আছেন যারা শাহাদাতের ইন্তিযার (প্রতীক্ষা) করছেন ; আর তারা কোনো ভাবেই স্বীয় প্রতিজ্ঞা পরিবর্তন করেন নি । ( সূরা - ই আহযাব : ২৩ )

من المومنین رجال صدقوا ما عاهدوا الله علیه ، فمنهم من فضیٰ نحبه و منهم من ینتظر ، و ما بدّلوا تبدیلاً .

--- এ আয়াতের প্রতিজ্ঞাকারী মুমিনদের এক বাস্তব নমুনা যারা শাহাদাত বরণ করেছেন মহান আল্লাহর পথে ।

মুমিনদের জন্য শাহাদাত হচ্ছে ইহদাল হুসনায়াইন্ ( إِحْدَی الْحُسْنَیَيْنِ ) দুটো সর্বোত্তম বিষয়ের ( জিহাদে বিজয় ও শাহাদাত ) একটি । পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে :

قُل هل تربّصون بنا إلّا إحدی الحسنیین ، و نحن نتربّص بکم أن یُصیبَکُم الله بعذاب من عنده أو بأیدینا فتربّصوا إنّا معکم متربّصون . ( التوبه : ۵۲ )

আপনি বলে দিন : তোমরা ( মুনাফিকরা ) আমাদের জন্য দুটো সর্বোত্তম বিষয়ের ( জিহাদে বিজয় ও বেহেশত ) মধ্য থেকে যে কোনো একটির প্রত্যাশা করছ কি ? কিন্তু আমরা তোমাদের ব্যাপারে প্রত্যাশা করছি যে মহান আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হাতে (অত্যন্ত কঠিন ) এক শাস্তি কবলিত করবেন ( আমাদের হাতে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে ) । অতএব তোমরা প্রতীক্ষা করতে থাক এবং আমরাও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি । ( সূরা -ই তওবা : ৫২ )

ইহদাল হুসনায়াইন্ ( দুটো সর্বোত্তম বিষয়ের একটি ) : যুদ্ধে বিজয় এবং শাহাদাত যা বেহেশতের যামানত ( বেহেশত সুনিশ্চিত করে ) বরং শাহাদাত হচ্ছে জান্নাতুল লিকা ( মহান আল্লাহর দীদার ও সাক্ষাতের বেহেশত অর্থাৎ সর্বোচ্চ পর্যায়ের বেহেশত ) ।

ইমাম খোমেইনী কত সুন্দর বলেছেন : "আমাদেরকে হত্যা কর তোমরা ( অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদীরা ) তাহলে আমাদের জাতি আরো অধিক জাগ্রত হবে ।" অতএব ঠিক যেমনভাবে গাযায় ইসরাইলের নির্বিচার বোমাবর্ষণে অগণিত শিশু , নারী ও পুরুষের শাহাদাত

 বিশ্বের জাতি সমূহকে ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায় ও গণহত্যার বিরুদ্ধে জাগ্রত করছে ঠিক তেমনি সালেহ আল আরূরীর শাহাদাত ফিলিস্তিনি জাতিকে আরো অধিক জাগ্রত করবে এবং অন্যান্য ঘুমন্ত জাতিকে করবে তা জাগ্রত ।

আল্লাহর রাহে শাহাদাত হচ্ছে সৌন্দর্য ( হুসন ) ও শোভা ( যীনাত ) ঠিক যেমন গহনা হচ্ছে নব বধুর সৌন্দর্য ও শোভা বর্দ্ধক ঠিক তেমন বা তাঁর চেয়েও অধিক আসলে তা চিন্তাই করা যায় অর্থাৎ অকল্পনীয় ও অতুলনীয়। শাহাদাত মৃত্যু নয় বরং তা জীবনের সর্বোচ্চ ও সর্বোন্নত পর্যায় যা আমরা যারা শাহাদাত বরণ করি নি তারা তা অনুভব করতে অপারগ।

সেজন্যই গাযার প্রতিরোধ যোদ্ধা ও মুজাহিদ তারা তূফানুল আকসা অভিযান সম্পর্কে যথার্থ ই বলেছেন :

" ইন্নাহূ জিহাদুন্ ইম্মা নাসর আও শাহাদাহ্। "

إِنّاَهُ - طُوْفَانَ الْأَقْصَیٰ - إِمَّا نَصْرٌ أَوْ شَهَادَةٌ .

নি: সন্দেহে এটাই - তূফানুল আকসা - হয় বিজয় নতুবা শাহাদাত।

   বলা হয় যে তূফানুল আকসা জিহাদের এক অন্যতম পরিকল্পনা প্রণয়নকারী এবং গাযা যুদ্ধের পরিচালনাকারী ছিলেন শহীদ সালেহ আল আরূরী । আর ঠিক যেমন ইসরাইল , মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) যুরা ( যুক্ত রাজ্য ) ও পশ্চিমা দেশ গুলো ভেবেছে ঠিক তেমনি তাঁর শাহাদাত বরণের মাধ্যমে ফিলিস্তীনীদের জিহাদ, যুদ্ধ ও প্রতিরোধ সংগ্রামের কখনও পরিসমাপ্তি ঘটবে না !!

এই শাহাদাত আবারও প্রমাণ করছে যে প্রতিরোধ সংগ্রামের নেতৃবৃন্দ ও ফিলিস্তীনী জনগণের মধ্যে কোনো তফাত ও পার্থক্য নেই। সাধারণ ফিলিস্তিনি জনগণ যেমন শহীদ হচ্ছেন ঠিক তেমনি তাদের সংগ্রামী নেতৃবৃন্দও কুদসের পথে শহীদ হচ্ছেন । কয়েক দিন আগে লেবাননের হিজবুল্লাহ আন্দোলনের এক নেতার মুজাহিদ পুত্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘর্ষে দক্ষিণ লেবাননে শহীদ হয়েছেন। মাস খানেক আগে হামাস প্রধান ইসমাইল হানীয়ার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ নিকট আত্মীয় যাদের মধ্যে তাঁর নাতনিও( grand daughter ) রয়েছেন তারা গাযায় এক বোমাবর্ষণে শাহাদাত বরণ করেছেন। এই সপ্তাহ খানেক আগে ইরানী জেনারেল সাইয়েদ রাযী মূসাভী সিরিয়ার দামেস্কে শহীদ হয়েছেন। আর সার্দরে দেলহ ( হৃদয় সমূহের সরদার ও নেতা ) জেনারেল কাসেম সুলাইমানীর ৪র্থ শাহাদাত বার্ষিকীর মাত্র এক দিন আগে মুজাহিদ হামাস নেতা সালেহ আল আরূরী শাহাদাত বরণ করলেন । ইরান , ইরাক , সিরিয়া ,লেবানন , ইয়ামান ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামের নেতৃবৃন্দের সর্বোচ্চ পদক ও উপহার হচ্ছে শাহাদাত যা মহান আল্লাহ তাদের জন্য বিশেষ ভাবে বরাদ্দ করে রেখেছেন ।

 ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান,