‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শুক্রবার

১২ জানুয়ারী ২০২৪

৩:২৭:৫৬ PM
1428733

ইয়েমেনে ইঙ্গ-মার্কিন হামলা, যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ও এর সম্ভাব্য পরিণতি

লোহিত সাগরে ইসরাইলগামী বা ইসরাইলি বাণিজ্য জাহাজগুলোর ওপর ইয়েমেনের হামলাকে আন্তর্জাতিক সাগরে স্বাধীন নৌ-চলাচলের ওপর আঘাত হিসেবে দেখিয়ে তা বন্ধ করার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন সরকারের প্রস্তাব পাশ হওয়ার এক দিন পর আজ (শুক্রবার) খুব ভোরে দেশটিতে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী।

ইয়েমেনের রাজধানী সান্‌আ ও হুদাইদা বন্দরসহ বেশ কয়েকটি শহরের অন্তত ৬০টি অবস্থানে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে আগ্রাসী ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী।  এতে অন্তত ৫ জন ইয়েমেনি শহীদ ও ৬ জন আহত হয়েছেন।  

লোহিত সাগরে চলমান তৎপরতা বন্ধ না করলে ইয়েমেনের ওপর আরও হামলা চালানো হবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন হুমকি দিয়েছেন বলে খবর এসেছে।

লোহিত সাগরে জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন সরকারের সেনাদের ইসরাইল-বিরোধী পদক্ষেপ ছিল ফিলিস্তিনের ও বিশেষ করে গাজার মজলুম জনগণের ওপর ইসরাইলের চলমান গণহত্যা বা জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের জবাবে বেশ বড় ধরনের মানবিক ও নৈতিক সহায়তার পদক্ষেপ। ইয়েমেনের এ পদক্ষেপ কেবল ইসরাইলি ও ইসরাইলি বন্দরগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত  বাণিজ্য-জাহাজগুলোর মধ্যে সীমিত থাকা সত্ত্বেও  ইসরাইলি গণহত্যার প্রধান দুই প্রধান সহযোগী মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকার পাশ্চাত্য এবং ইসরাইলের অর্থনৈতিক ও আগ্রাসী সামরিক স্বার্থ রক্ষায় জাতিসংঘের অনুমতি ছাড়াই ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানোর পদক্ষেপ নিল।

সম্প্রতি লোহিত সাগরে ইয়েমেনি নৌ-বাহিনীর ওপর মার্কিন হামলায় কয়েকজন ইয়েমেনি সেনার শাহাদাত এবং মার্কিন যুদ্ধ-জাহাজে ইয়েমেনের পাল্টা হামলার ফলে ইয়েমেনে পশ্চিমা আগ্রাসনের আশঙ্কা দেখা দেয়। ইয়েমেন কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল কোনো হামলা চালানো হলে তার ধ্বংসাত্মক জবাব দেয়া হবে। 

 নৈতিক ও মানবিক দিক থেকে দেউলিয়া হয়ে পড়া পশ্চিমা সরকারগুলো, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও হল্যান্ড ইয়েমেনের ওপর এই ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসনে শরিক হয়েছে সক্রিয় সমর্থক বা সহযোগী বাহিনী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে। লোহিত সাগরকে নিরাপদ রাখার কথিত মার্কিন নৌ-জোটে শরিক হয়েছে বাহরাইনের রাজতান্ত্রিক স্বৈর-সরকারও।  

পশ্চিম এশিয়ায় ইসলামী ইরানসহ প্রধান কয়েকটি প্রতিরোধ শক্তি যেমন লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাস এবং সিরিয়া ইয়েমেনে পশ্চিমা জোটের এই আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। নিন্দা জানিয়েছে ওমানও। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি বলেছেন, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যায় মদদ অব্যাহত রেখে আমেরিকা এবং ব্রিটেন চাচ্ছে বিশ্বদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে। আর সে কারণেই ইয়েমেনে এই হামলা চালিয়েছে তারা।

এদিকে রাশিয়া ইয়েমেনে ইঙ্গ-মার্কিন হামলার বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে।

ওদিকে ইয়েমেন বলেছে, তারা ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত লোহিত সাগরে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোতে হামলা অব্যাহত রাখবে। ইঙ্গ-মার্কিন হামলার জবাবে এরিমধ্যে ইঙ্গ-মার্কিন নানা টার্গেটে তারা হামলা চালিয়েছে বলেও খবর দিয়েছে। ইয়েমেনের বিভিন্ন শহরে লাখ লাখ ইয়েমেনি ইঙ্গ-মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনও নবায়ন করেছে। 

গাজার যুদ্ধ এভাবে নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের দাম আড়াই শতাংশ বেড়ে গেছে।  

এটা স্পষ্ট যে ইয়েমেনের জনপ্রিয় সরকারের বিরুদ্ধে মার্কিন ও পশ্চিমাদের বিদ্বেষ তাদের জন্যই বুমেরাং হয়ে দেখা দিবে, ঠিক যেভাবে  ইরাক ও আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েও শেষ পর্যন্ত সেখানে বিপর্যস্ত হয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী। ইহুদিবাদী ইসরাইলকে সর্বাত্মক সমর্থন ও সাহায্য যোগাতে গিয়ে এরিমধ্যে ইরাক ও সিরিয়ায় জনপ্রিয় গণবাহিনীগুলোর হামলার শিকার হচ্ছে মার্কিন ঘাঁটিগুলো।  

ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবকে প্রায় ৭ বছর ধরে চলা আগ্রাসনে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েও মোটেই সুবিধা করতে পারেনি পশ্চিমা সরকারগুলো। আসলে ইয়েমেনের বিপ্লবী জনগণ ও সরকার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রতিরোধের অন্যতম সফল আদর্শ ও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে। #