‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
রবিবার

১৪ জানুয়ারী ২০২৪

৬:০৯:০৫ AM
1429203

কেরমানে সন্ত্রাসী হামলার তদন্তের ২য় প্রতিবেদন:

আত্মঘাতী হামলার ৩৫ সহযোগী গ্রেপ্তার

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক কেরমানে সন্ত্রাসী হামলা সংক্রান্ত দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে “দেশের বাহিরে কেরমান সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িত বেশ কিছু কমান্ডার এবং পরিকল্পনাকারীদের অনুসরণ” এবং "আত্মঘাতী সন্ত্রাসীদের সহযোগী ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার”-এর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক কেরমানে সন্ত্রাসী হামলা সংক্রান্ত দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে “দেশের বাহিরে কেরমান সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িত বেশ কিছু কমান্ডার এবং পরিকল্পনাকারীদের অনুসরণ” এবং "আত্মঘাতী সন্ত্রাসীদের সহযোগী ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার”-এর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

কেরমানে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে:

বিসমিহি তা’আলা। আবারো অত্যন্ত কষ্ট ও শোকের সাথে কেরমানে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নির্যাতিত শহীদদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আহতদের পূর্ণ সুস্থতার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি। গত ৫ জানুয়ারি এই মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের সূত্র ধরে, প্রাপ্ত তথ্য এবং ইমাম জামান (আ.)-এর অজ্ঞাত সৈনিকদের গৃহীত পদক্ষেপের অপর একটি অংশ ইরানের সম্মানিত জনগণের নিকট তুলে ধরছি:

১) বিস্ফোরণের মুহূর্ত থেকে শুরু হওয়া নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ, অভিযান ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা,  ব্যাপকভাবে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সাথে একটি সমন্বিত এবং পরিপূরক পদ্ধতিতে বিভিন্ন এলাকার উপর সার্বক্ষণিক নিরীক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।

২) এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, এই সন্ত্রাসী অপারেশনের মূল পরিকল্পনাকারী এবং সহযোগী “আব্দুল্লাহ তাজিকি” নামক একজন তাজিকিস্তানের নাগরিক। এই ভাড়াটে সন্ত্রাসী, এক মহিলা এবং একটি শিশুর সাথে “আশ্রয় গ্রহণের উদ্দেশ্যে”, বেআইনিভাবে দেশে প্রবেশ করে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে স্থানীয় চোরাকারবারিদের মাধ্যমে কেরমান প্রদেশে স্থানান্তরিত হয় এবং কেরমান শহরের উপকণ্ঠে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। সন্ত্রাসী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি সে ঘরে বসে বোমা তৈরিতেও পারদর্শী। তাই বিভিন্ন বিস্ফোরক ও বৈদ্যুতিক উপাদান একত্রিত করে বোমা তৈরির কাজ সম্পন্ন করার পর, মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার দুই দিন আগে দেশ ত্যাগ করে।

৩) আত্মঘাতী সন্ত্রাসীদের একজনের পরিচয় সম্পূর্ণরূপে শনাক্ত করা গেছে। সে আমানুল্লাহর পুত্র বাজিরুফ "বুজিরুফ" ইসরায়েলি, ২৪ বছর বয়সী এবং তাজিকিস্তানের নাগরিক। সে টেলিগ্রামের মাধ্যমে আমেরিকার তৈরি সন্ত্রাসী-গোষ্ঠী দায়েশের সাথে পরিচিত হয় এবং এতে যোগদান করে। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে এই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী, তুরস্কের ভ্যান শহরে যায় এবং সেখান থেকে দেশের পশ্চিম ও পূর্ব সীমান্তে অবস্থানরত চোরাকারবারিদের সহায়তায় ইরানের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে চলে যায়। সেখানে বাদাখশান প্রদেশে দায়েশ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্যাম্পে যায়। তাদের নিকট বিপথগামী তাকফিরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হওয়ার পর বিভিন্ন অভিযান ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এর কয়েক মাস পর তাকে ইরানে পাঠানো হয়। এই সন্ত্রাসী স্থানীয় চোরাকারবারিদের সাহায্যে সারাভান শহরের কাল্লেগান সীমান্ত দিয়ে ইরানে প্রবেশ করে এবং খাশ, ইরান-শাহর এবং জিরোফত শহর পেরিয়ে অবশেষে কেরমানে পূর্বে উল্লেখিত একই বাড়িতে গিয়ে উল্লেখিত সন্ত্রাসীর সাথে যুক্ত হয়।

৪) দ্বিতীয় আত্মঘাতী সন্ত্রাসীর পরিচয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া গেছে, যা তার বিষয়ে সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়ার পর জানানো হবে।

৫) ঘটনার দিন, ১৩:০৩ এবং ১৩:১৪ মিনিটে-এ, সন্ত্রাসীরা পৃথকভাবে বাসা থেকে বের হয়ে কেরমানের গোলজার শোহাদার দিকে যায়। বিস্ফোরণের প্রধান লক্ষ্য ছিল দায়েশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মহান নেতা, শহীদ জেনারেল হজ কাসেম সোলেইমানির কবর। কিন্তু সন্ত্রাসীরা কঠোর ও বহু-স্তরীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনী মোতায়েন দেখে তাদের শয়তানি পরিকল্পনাকে গুলজার শোহাদা থেকে তুলনামূলকভাবে দূরে, নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে এবং তল্লাশী গেটের নিকটে নিয়ে যায়। এভাবে, প্রথম সন্ত্রাসী কেরমান গোলজারে শোহাদা থেকে ৭০০ মিটার দূরত্বে ১৪:৫৫ মিনিটে এবং দ্বিতীয় সন্ত্রাসী ১০০০ মিটার দূরত্বে ১৫:১৫ মিনিটে আত্মঘাতী ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়।

৬) যেমনটি এই মন্ত্রণালয়ের প্রথম প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, সন্ত্রাসীদের শনাক্ত ও ট্র্যাক করার অভিযান এবং ইরানের অভ্যন্তরে ও বাইরে থেকে তাদেরকে সহযোগিতাকারীদেরকে সম্পর্ক তথ্য সংগ্রহ, বিস্ফোরণের পরপরই শুরু করা হয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীদের মদদ দাতাদের গ্রেফতারে প্রথম অভিযান চালানো হয়। পরের দিন সকালে, সন্ত্রাসীদের মধ্যে এক তাজিকিস্তানের নাগরিকের পরিচয় শনাক্ত করা হয় এবং দায়েশের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত বাড়ি চিহ্নিত করা হয়, পাশাপাশি অপর দুই সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

৭) ব্যবহৃত আত্মঘাতী ভেস্ট ছাড়াও, সন্ত্রাসীরা আরও দুটি বিস্ফোরক ভেস্ট তৈরির জন্য বিস্ফোরক সরঞ্জাম ও কাপড় তৈরি করে বাড়ির উঠানে পুঁতে রেখেছিল এবং উঠানকে পুরোপুরি মসৃণ ও স্বাভাবিক করে রেখেছিল যাতে এটি খুঁজে না পাওয়া যায়।

৮) দেশের অভ্যন্তর ও বাহিরে তাকফিরি কার্যক্রম পরিকল্পনাকারী, পরিচালনাকারী এবং এ সকল কর্মকাণ্ডের সাথে সংযুক্তদের শনাক্তকরণ অব্যাহত রয়েছে। এখনো পর্যন্ত দেশের মধ্যে ৩৫ জনকে কেরমান, সিস্তান ও বেলুচিস্তান, খোরাসানে রাজাভি, ইসফাহান, তেহরান এবং অজারবাইজান প্রদেশ হতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও, কেরমান ট্র্যাজেডির সাথে জড়িত বেশ কয়েকজন অপরাধীকে সীমান্তের অপর প্রান্তে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং গুরুত্বের সাথে তাদের অনুসরণ করা হচ্ছে। এটা সুস্পষ্ট যে, তথ্য মন্ত্রণালয় অপরাধী ও শতাধিক নিরপরাধ মানুষের রক্তপাতকারীদের গ্রেপ্তার এবং দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তাদের ব্যাপারে ন্যায়বিচার বাস্তবায়নকে নিজেদের অধিকার ও সুনির্দিষ্ট কর্তব্য বলে মনে করে এবং এটা পরিপূর্ণরূপে হস্তগত না করা অবধি ক্ষান্ত হবে না।

৯) সাম্প্রতিক দিনগুলিতে, শহীদ সোলেইমানির (রহ.) শাহাদাত বার্ষিকীর আগে অসংখ্য বোমা হামলার ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশিত হয় এবং সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আলোচিত সংবাদে বিস্ফোরক আবিষ্কারের সংখ্যা ও সময় কোনটিই যথাযথ ছিলনা। অবশ্য এ বছর শহীদ সোলেইমানির সমাধিতে বিস্ফোরণসহ বেশ কিছু বোমা হামলার ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু তাদের সবকটিই অন্তত ৫ মাস আগের এবং সমস্ত ষড়যন্ত্র আহলে বাইতের মাসুমীন (আ.)-গণের সাহায্যে আবিষ্কৃত হয়েছে এবং সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও অফিসিয়ালভাবে সম্মানিত ইরানী জাতির নজরে আনা হয়েছে। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯ অক্টোবর ও ৩০শে আগস্ট মিলে মোট ২৮জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২৪শে সেপ্টেম্বর তেহরানে একযোগে ৩০টি বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার বিষয়টি ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু গত মাসে, দুই আত্মঘাতী সন্ত্রাসীর মধ্যে শুধুমাত্র একজন তাজিকিস্তানি তাকফিরি সন্ত্রাসী পবিত্র নগরী মাশহাদে সন্ত্রাসী অভিযান চালানোর উদ্দেশ্যে দেশে প্রবেশ করে এবং কোন ধরনের পদক্ষেপের আগেই ইমাম জামান (আ.)-এর অজ্ঞাত সৈন্যদের ম্যাধমে চিহ্নিত ও আটক হয়।

১০) ইরানের অনুগত ও সচেতন জনগণ, বিশেষ করে কেরমানের প্রিয় অধিবাসীরা, সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্কিত উপাদান শনাক্তকরণে তাদের সেবকদের সহায়তা অত্যন্ত উৎসাহজনক এবং সহায়ক ছিল। তাই, সম্মানিত কেরমান এবং ইরানের সমগ্র জনগণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং তাদের মহানুভবতা ও দায়িত্ববোধের প্রতি শীর অবনমিত করছি। এই সহায়তা অব্যাহত রাখতে এবং সন্দেহজনক তথ্য জানাতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ কেন্দ্র (১১৩ নাম্বার)-এ যোগাযোগ করার আহবান জানাচ্ছি।

অন্যদিকে, তথ্য সমন্বয় পরিষদের সম্মানিত সদস্যদের সাহচর্য, সহানুভূতি এবং সমন্বয় উল্লেখিতদের শনাক্ত করতে ও খুঁজে পেতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। ইতিমধ্যে, মাননীয় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান এবং তার ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সংস্থা, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের গোয়েন্দা বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন এবং কেরমানের মাননীয় গভর্নরের সমর্থন ও সহায়তা অত্যন্ত কার্যকর ও নির্ণায়ক ছিল। ইন শা আল্লাহ, এই হৃদ্যতা এবং সহানুভূতির ধারাবাহিকতায়, তাকফিরি সন্ত্রাসের দূর্গন্ধময় পচা মৃতদেহকে পুনরুজ্জীবিত করা অশুভ লক্ষ্যকে পণ্ড এবং সন্ত্রাসী এ গোষ্ঠীর অবশিষ্টাংশগুলিকে দমন করা হবে।#176A