‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
মঙ্গলবার

১৬ জানুয়ারী ২০২৪

৬:১১:৫১ PM
1429915

গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ কি?

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধের ১০০ দিন পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও এই যুদ্ধের সমাপ্তির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

কানাডিয়ান চিন্তাবিদ মাইকেল ব্রেচার তার "ক্রাইসিস ইন ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স" বইয়ে একটি সংকটকে এমন একটি পরিস্থিতি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যেখানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ এবং স্বার্থ হুমকির সম্মুখীন হয় এবং যখন সংকট দেখা দেয় তখন সরকারগুলো বিস্ময়ের নীতির মুখোমুখি হয়। মাইকেল ব্রেচার সংকটের তীব্রতা এবং ব্যাপ্তি নির্ধারণের জন্য ছয়টি সূচক বিবেচনা করেন। সেগুলো হল ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব, সংকটের বিষয়, বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সহিংসতা,পক্ষগুলোর বহুত্ব, ভিন্নতা এবং বৃহৎ শক্তির হস্তক্ষেপের মাত্রা।

গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে মাইকেল ব্রেচারের তত্ত্বের প্রয়োগ করলে দেখা যাবে যে প্রাথমিক ধারণার বিপরীতে এই যুদ্ধ চলতে থাকবে এবং এর শেষ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

প্রথম কারণ গাজার ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব। গাজা একটি ছোট উপত্যকা যেটি অধিকৃত ফিলিস্তিনের আশেপাশে অবস্থিত এবং পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই গাজায় ইহুদিবাদী শাসকের পরাজয় এই সরকারের জন্য অগ্রহণযোগ্য।

দ্বিতীয় কারণ সংকটের বিষয়টি। বাস্তবতা হল গাজা যুদ্ধের মূল ইস্যু হল ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা। এই শাসক গোষ্ঠীর উচ্চ সামরিক এবং গোয়েন্দা বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সামগ্রিক প্রতিরোধের বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল কিন্তু আল-আকসা তুফান অভিযান এসব কিছুকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এদিকে ইসরাইলের সরকার গত ১০০ দিনে হামাসের হাত থেকে তার বন্দীদের মুক্তি করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে যা তেল আবিবের বুদ্ধিমত্তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

তৃতীয় কারণ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সহিংসতা। আল-আকসা ঝড় অভিযানে দেড় হাজারেরও বেশি ইহুদিবাদী নিহত হয়। এই সমস্যাটি ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর জন্যও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ অবৈধ এই রাষ্ট্রটি  জনসংখ্যার সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং অধিকৃত অঞ্চলে জনগণের সমর্থনকে তার সামরিক মতবাদের অন্যতম স্তম্ভে পরিণত করেছে। একই সময়ে, ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজার বিরুদ্ধে যে পরিমাণ সহিংসতা ব্যবহার করেছে তা নজিরবিহীন স্তরে উপণিত হয়েছে। কার্যত তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে সহিংসতা এবং গণহত্যা অব্যাহত রাখতে ভয় পায় না।

চতুর্থ কারণ হচ্ছে বিভিন্ন পক্ষ এই সংঘাতে জড়িত রয়েছে। যদিও যুদ্ধের প্রধান দুই পক্ষ ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী এবং হামাস আন্দোলনকে ধরা হয় তবে তাদের সবাইকে এই যুদ্ধের মূল পক্ষ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। আমেরিকা এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ নিয়েছে।  ইয়েমেন এবং লেবাননের হিজবুল্লাহও এই যুদ্ধে গাজা ও হামাসকে সমর্থন করছে। যখন একটি সঙ্কটে পক্ষগুলোর সংখ্যা বেশি হয়, তখন সংকটের অবসানের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম। যাইহোক পক্ষগুলোর সংখ্যা গাজা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার প্রধাণ কারণ নয়, তবে ইহুদিবাদী সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক লক্ষ্যগুলো উপলব্ধি করতে ব্যর্থতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

পঞ্চম কারণ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে শক্তির ভারসাম্যহীনতা। ইহুদিবাদী শাসক ও হামাসের সামরিক শক্তি কেবল  অসম তো নয়ই কাছাকাছিও নয়। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ দ্বারা সম্পূর্ণ সমর্থিত, সরঞ্জামের দিক থেকে হামাস আন্দোলনের সাথে তুলনীয় নয়। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য দলগুলোর সামরিক শক্তির অসঙ্গতি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

অবশেষে, ষষ্ঠ এবং শেষ কারণ হলো যুদ্ধে বৃহৎ শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের মাত্রা। গাজা যুদ্ধে বৃহৎ শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ কেবলমাত্র ঘোষণা এবং রাজনৈতিক সমর্থনের আকারে ছিল না।  আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি এবং ফ্রান্স গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষ হয়ে উঠেছে এবং গাজার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকের অপরাধকে আত্মরক্ষার একটি উদাহরণ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমাদের এই আচরণের মডেলটি গাজা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অবশেষে এটা বলা যায়  যে গাজার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর যুদ্ধ  ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হবে না যতক্ষণ না এই শক্তিগুলো যুদ্ধ শেষ করার জন্য আন্তরিক ইচ্ছা দেখায়।#