‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
শনিবার

৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

৭:০৩:১৩ PM
1434838

গাজায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের তীক্ত স্বীকারোক্তি

জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে যে গাজার অর্থনীতি ২১ শতকের শেষ নাগাদ যুদ্ধ-পূর্ব পর্যায়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থ্যাৎ গাজার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানক খারাপ যে তা যুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরে আসতে চলতি একুশ শতকের শেষ নাগাদ বা ২১০০ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার ১১৮ দিন পেরিয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে যে, অবরুদ্ধ এই উপত্যাকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক হামলা অব্যাহত থাকায় যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শহীদের সংখ্যা ২৭ হাজার ১৯ জন এবং আহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬ হাজার ১৩৯ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স এবং জরুরী ত্রাণ সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস গত বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ফিলিস্তিনি পরিস্থিতি নিয়ে এক পর্যালোচনায় বলেছেন,  প্রতিটি দিন চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  গাজার জনগণের দুর্দশা ও দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন যে খান ইউনিসের চারপাশে তীব্র লড়াই হাজার হাজার মানুষকে রাফাহের দিকে বাস্তুচ্যুত করে চলেছে। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই অঞ্চলটিতে এখন গাজার ২.২ মিলিয়ন জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বাস করে। গ্রিফিথস আরো বলেন, গাজার দক্ষিণে যুদ্ধের আরও সম্প্রসারণের ফলে এই এলাকার জনগণের ক্রমবর্ধমান বঞ্চনা এবং হতাশা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোতে  আরো ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। 

এসব পরিস্থিতি গাজার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর যুদ্ধের মানবিক পরিণতিগুলির মধ্যে একটি।তবে এই যুদ্ধ গাজার জন্য মারাত্মক অর্থনৈতিক পরিণতিও বয়ে এনেছে। ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড) এক প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছে যে ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনের কারণে যে পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তা গাজা উপত্যকাকে বসবাসের অযোগ্য এলাকায় পরিণত করেছে। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ করা হয়েছে যে জানুয়ারির শেষ নাগাদ ইসরাইলের হামলায় ৩৭ হাজার ৩৭৯ টি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা গাজা উপত্যকার মোট ভবনের ৫০ ভাগ এর সমান। "এই আন্তর্জাতিক সংস্থার  অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ রামি আলাজে যিনি এই প্রতিবেদন তৈরিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি বলেছেন, "নতুন তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে গাজা উপত্যকায় ৫০ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে, মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন যে ৬০ ভাগের চেয়ে বেশি  আবাসিক ইউনিট ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ধ্বংসপ্রাপ্ত এসব ভবনের মধ্যে রয়েছে আবাসিক বাড়ি, চিকিৎসা, শিক্ষা ভবন ইত্যাদি। মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, "গাজার ৩৬ টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৪ টি সক্রিয়, এবং এই হাসপাতালগুলো সম্পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করতে পারছে না।" ভবন ছাড়াও গাজার অবকাঠামো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল থেকে যুদ্ধের আগ পর্যন্ত এই উপত্যকাটি ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সর্বাত্মক অবরোধের অধীনে ছিল এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছিল। এই পরিস্থিতির কারণে এই অঞ্চলের প্রায় ৮০ ভাগ অধিবাসীর আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। গাজার বিরুদ্ধে ৪ মাসের যুদ্ধ পরিস্থিতিকে সম্ভাব্য আরো খারাপ দিকে নিয়ে গেছে। বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘের সম্মেলন ঘোষণা করেছে যে গাজার অর্থনীতি ২০২৩ সালের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে ৪.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।  এছাড়া এর জিডিপি  এবং মাথাপিছু আয় ২৬.১ % হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া গাজায় বেকারত্বের হারও বেড়েছে ৮০%।

এই পরিস্থিতির কারণে, জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে যে এই শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত গাজার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নাও হতে পারে। ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (UNCTAD) এর অর্থনীতিবিদ রামি আলাজেহ বলেছেন যে গাজা উপত্যকার অর্থনীতি ২০০৭ সাল থেকে গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার গণনা করে ২০২২-এর স্তরে ফিরে আসতে ২০৯২ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। #