ইঙ্গ-মার্কিন সরকার বলছে, লোহিত সাগরে অবাধে যে কোনো দেশের জাহাজ চলাচলের সুযোগ রাখা জরুরি এবং হুউসিদের হামলার কারণে বিশ্ব-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে হুউসিরা বলছে, তাদের হামলার লক্ষ্য কেবল ইসরাইল ও তার সহযোগী ইঙ্গ-মার্কিন জাহাজ এবং ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলো, এ ছাড়া অন্য যে কোনো জাহাজ চলাচলে কোনো বাধা দিচ্ছে না ইয়েমেন। গাজার ওপর ইসরাইলের নির্মম আগ্রাসন ও অবরোধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের হামলা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেছে ইয়েমেনের হুউসিদের নেতৃত্বাধীন সরকার তথা আনসারুল্লাহ আন্দোলন ও এর অনুগত সশস্ত্র বাহিনী।
ইয়েমেনে হুউসি আনসারুল্লাহ আন্দোলন সমর্থিত সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালানোর প্রতিবাদে জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের বিরুদ্ধে কড়া নিন্দাসূচক বক্তব্য রেখেছে রাশিয়া ও চীন। তারা দাবি করেছে, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগে ইয়েমেনে সামরিক স্থাপনায় বেআইনিভাবে হামলা করেছে আমেরিকা ও ব্রিটেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ উপরাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পোলিনস্কি এবং চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের অনুমোদন কখনোই দেয়নি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
সম্প্রতি (গত বুধবার,১৪ ফেব্রুয়ারি) ইয়েমেনের হুদাইদা বন্দর অঞ্চলে ইঙ্গ-মার্কিন হামলার প্রতিবাদে জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিউনস্কি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভায় বলেছেন, এ অঞ্চলে সংকটের মূল কারণ হল গাজায় ইসরাইলের অমানবিক বা নির্দয় সামরিক অভিযান।
ইয়েমেনে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূতও লোহিত-সাগর অঞ্চলে সংঘর্ষ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
আসলে এটা স্পষ্ট বিশ্ব-সমাজ বা আন্তর্জাতিক সমাজের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এবং মার্কিন সরকারসহ পশ্চিমা সরকারগুলোর সর্বাত্মক সহায়তা নিয়ে দখলদার ইসরাইল গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে এবং এতে প্রায় ত্রিশ হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক শহীদ হয়েছেন যাদের প্রায় ৭০ শতাংশই হল শিশু ও নারী। এ অবস্থায় বলদর্পি শক্তিগুলোর মোকাবেলায় সরাসরি ফিলিস্তিনিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ ধর্মীয় ও মানবিক দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে।
অন্যদিকে ইয়েমেনের মোকাবেলায় সন্ত্রাসী, বর্ণবাদী, আগ্রাসী, দখলদার ও নব্য-উপনিবেশবাদী ইসরাইলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ইঙ্গ-মার্কিন সরকার। ইসরাইল গাজায় কয়েকটি পরমাণু অস্ত্রের সমপরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে এইসব সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কাছ থেকে বোমা ও অস্ত্রের সহায়তা নিয়েই। এদিকে বার বার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েও উন্নতমানের ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও নৌ-ড্রোনের অধিকারী ইয়েমেনকে লোহিত সাগর, আরব সাগর ও এডেন অঞ্চলের জলসীমায় বিন্দুমাত্র দুর্বল করতে পারেনি ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি। ফলে ইঙ্গ-মার্কিন ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোতে অব্যাহত রয়েছে ইয়েমেনি হামলা।
একই সময়ে ইরাক ও সিরিয়ার কোনো কোনো প্রতিরোধকামী গোষ্ঠীও সেখানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে ইসরাইল যখন গাজার রাফাহ অঞ্চলসহ নানা অঞ্চলের হাসপাতালসহ বেসামরিক অবস্থান ও বাড়িঘরে পৈশাচিক ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ জোরদার করেছে তখন প্রতিরোধ শক্তিগুলোর পাল্টা হামলার তৎপরতা ও তাদের অস্ত্রের ধার বৃদ্ধির বিষয়টিও লক্ষণীয়।
তাই এটা স্পষ্ট পশ্চিম এশিয়ায় ইঙ্গ-মার্কিন ও ইসরাইলি যুদ্ধকামিতার বিস্তার তাদের জন্যই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি বয়ে আনবে। ইঙ্গ-মার্কিন ও ইসরাইলি সেনা হতাহতের ঘটনা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিও বাড়তেই থাকবে। #