‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শনিবার

২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

১২:১৭:১৯ AM
1439894

গাজায় যা ঘটছে তা সকল ঐশ্বরিক ধর্মের পরিপন্থী : আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি অমুলী

হজরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি অমুলীর সাথে সাক্ষাত করেছেন জর্জিয়ার আর্চবিশপ মালখাজ সানগুলাশভিলি এবং আমেরিকা ও ইউরোপের ব্যাপটিস্ট পরিষদের সদস্য।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): শিয়া বিশ্বের অন্যতম মার্জা-এ তাক্বলীদ হজরত আয়াতুল্লাহিল উযমা জাওয়াদি অমুলী, জর্জিয়ার আর্চবিশপ মালখাজ সানগুলাশভিলি এবং ইউরোপের ব্যাপটিস্ট পরিষদের সদস্যর সাথে সাক্ষাতকালে বলেন, নবী-রাসূলগণ সর্বসম্মতভাবে বর্তমান মানবজাতির সাধারণ চাহিদা সম্পর্কে অবগত করেছেন। যা কিছু গাজা এবং গাজার ন্যায় অন্যত্র ঘটছে, তা সকল ঐশ্বরিক ধর্মের পরিপন্থী। ধর্মসমূহের মধ্যে যা প্রচলিত রয়েছে তা হচ্ছে, নবীদের মধ্যে মর্যাদাগত পার্থক্য থাকলেও তাদের কোন মতপার্থক্য নেই। এখন যেমন হজরত ঈসা মসীহের (আ.) বানী সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের সংস্কার হবে, তেমনি ইসলামের নবীর (সা.) আলোকিত বানী বাস্তিবায়িত হলে বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, পবিত্র কুরআনের সূরা জাসিয়ায় একটি মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে, (وَ قالُوا ما هِیَ إِلاَّ حَیاتُنَا الدُّنْیا نَمُوتُ وَ نَحْیا وَ ما یُهْلِکُنا إِلاَّ الدَّهْر) অর্থাৎ এই তিনটি উপাদান (বৈশিষ্ট্য) সকল কাফিরদের মধ্যে কমন (সাধারণ)। এই তিনটি মূলতঃ ঐ সকল ব্যক্তিদের মূলনীতি, যারা ঐশ্বরিক ধর্মসমূহের বিরোধিতা করে। প্রথমত তারা বলে, এই দুনিয়া (পৃথিবী) ব্যতীত অন্য কোন জগত নেই, মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথেই তার সমাপ্তি ঘটে এবং মৃত্যুর পরে কোন হিসাব-কিতাব নেই। (وَ قالُوا ما هِیَ إِلاَّ حَیاتُنَا الدُّنْیا) দ্বিতীয়ত, পৃথিবীতে জীবন ও মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন বিষয় নেই। (نَمُوتُ وَ نَحْیا) তৃতীয়ত, দুনিয়ার সৃষ্টি হওয়া এবং জীবন-মৃত্যু নির্ধারণ করার পিছনে প্রকৃতি ব্যতীত অন্য কোন কিছুর হাত নেই। সূরা জাসিয়ায় বর্ণিত এই তিনটি উপাদান হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত নূহ (আ.), হজরত ঈসা (আ.) এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) পর্যন্ত সকল নবীদের বিরোধীতাকারীদের মূলনীতি এবং পবিত্র কুরআন এই অবাস্তব দাবির জবাব দিয়েছে।

সম্মানিত এই মার্জা বলেন, আল্লাহ বলেন যদি পৃথিবী ছাড়া অন্য কোন কিছুরই খবর না থাকতো এবং হিসাব-কিতাব বিহীন একমাত্র জগত বলতে শুধুই পৃথিবীকে বুঝানো হতো, তাহলে তা হতো অনর্থক ও বাতিল। কেননা তখন যে কেউই যা কিছু করতো না কেন, তার কোন হিসাব-কিতাব হতো না। আর আমরা কোন খেলার খেলোয়াড় নই। (ما بَیْنَهُما لاعِبین); যদি গাজার দখলকারীরা এবং রক্তপাতকারীরা, আর সমাজের সেবকদের সবাই, মৃত্যুর পর কোন সাজা বা পুরষ্কার না পায়, তাহলে তা হবে নিছক একটি খেলা। আর আল্লাহর বলেন, আমরা কোন খেলোয়াড় নই।

তিনি বলেন, জীবন এবং মৃত্যু হল বাস্তবতা; কিন্তু তা একজন প্রজ্ঞাবানের হাতে নিয়ন্ত্রিত। মানুষ যতক্ষণ বেঁচে থাকে, ততক্ষণ সে সুনির্দিষ্ট প্রাকৃতিক ও জ্ঞানগর্ভ কাজের অধীন থাকে এবং যখন তার মৃত্যু ঘটে, সে সুনির্দিষ্ট প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে চলে যায়। এগুলি কোন অতিরিক্ত ও মনগড়া কথা বা মরুভূমিতে ছড়িয়ে থাকা বস্তু নয়। এই প্রকৃতি বলতে আপনারা যা বলেন অর্থাৎ এই আকাশ ও জমিন; যা আল্লাহর সৃষ্টি। আর তাই এই আয়াতের শেষে তিনি বলেন, তারা জ্ঞানের ভিত্তিতে কথা না বলে শুধুমাত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে কথা বলে। এই বাতিল কল্পকথা যেমন হজরত আদমের (আ.) পথের বিরোধী তেমনি শেষ নবী (সা.) সহ অন্যান্য নবীদের পথের বিরোধী।

এই মার্জা-এ তাক্বলীদ বলেন, সকল নবী-রাসূল এসে বলেছেন, এই সুশৃঙ্খল পৃথিবী এতটাই শৃঙ্খলাবদ্ধ যে, যেখানে যেমনটি প্রয়োজন সেখানে তেমনটিই রয়েছে। এই কথা আমাদের মধ্যে অভিন্ন। এটি যেমন হজরত ঈসা মসীহের (আ.) কথা, তেমনি এটি অন্যান্য নবী-রাসূলেরও কথা। অবশ্য, তাদের মর্যাদাগত পার্থক্য রয়েছে কিন্তু এই কথা যদি প্রয়োগিকরূপ লাভ করে তাহলে পৃথিবী ফুলবাগানে পরিণত হবে। আর তাই কুরআনে কারীম হজরত ঈসা মসীহের (আ.) কতিপয় মুজিযাকে বৈশ্বিক মনে করে। অর্থাৎ এমনটি বলেনি যে, হজরত ঈসার (আ.) মুজিযা শুধুমাত্র খ্রিষ্টানদের জন্য, বরং বলেছে (وَ جَعَلْناها وَ ابْنَها آیَةً لِلْعالَمین -এবং আমি তাকে এবং তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন বানিয়েছি) অর্থাৎ হজরত ঈসা (আ.) ও হজরত মরিয়ম (আ.), যাদের একজন স্বামী বিহীন মাতৃত্ব লাভ করেছেন এবং অপরজন পিতা বিহীন জন্মলাভ করেছেন, তা একটি বৈশ্বিক মুজিযা(وَ جَعَلْناها وَ ابْنَه آیَةً لِلْعالَمین)। সেখানে এমনটি বলা হয়নি যে, (آیةً للمسیحی- খ্রিষ্টানদের জন্য নিদর্শন!)। আমরা আশাকরি যে, এই বানী একদিন বৈশ্বিকরূপ লাভ করবে, হোক তা জ্ঞানের রূপে বা প্রয়োগিকরূপে যাতে আমাদেরকে আর গাজার ন্যায় তিক্ত ঘটনা ও বদলি যুদ্ধের সাক্ষী না হতে হয়।

তিনি বলেন, ঐশী পথপ্রদর্শকরা পৃথিবীকে জানার এবং পৃথিবীকে গড়ে তোলার জন্য নিজেদেরকে জানার প্রতি তাগাদা দিয়েছেন, হে মানুষ! তুমি কোন বৃক্ষের ন্যায় নও যে, মরার পরে জ্বালানিতে পরিণত হবে  বরং তোমার উদাহরণ হল সেই পাখির ন্যায় যে গাংচিল হয়ে কুহে-কাফে উড়ে যেতে চায়।… আমরা আশা করি একদিন মানবসমাজ জেগে উঠবে, জাগ্রত হবে, বিপথে যাবে না এবং কারো পথ রুদ্ধ করবে না।

সবশেষে সম্মানিত এই মার্জা, জর্জিয়ার আর্চবিশপের করা প্রশ্নের উত্তর দেন।

জর্জিয়ায় আর্চবিশপ, আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি অমুলীর সাথে সাক্ষাতে নিজের আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, আমি আমার মন ও হৃদয় দিয়ে আপনার কথাগুলোকে সত্যায়ন করছি এবং আপনার এই কথাগুলোকে ভালোবেসে অন্তরে জায়গা দিয়েছি।#176A