‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
রবিবার

২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

৪:০৬:১৭ PM
1440239

১৫ শাবান: শেকল ভাঙার মহানায়কের জন্মদিন

ন্যায়বিচারের বসন্ত সমাগত। সামেরা থেকে বিশ্বের দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ছে ১৫ শাবানের অপূর্ব খুশবু। মাহদীর আলোকিত অস্তিত্ব প্রাণে প্রাণে জাগিয়ে তুলছে আনন্দের মহাসমীরণ।

পবিত্র শবে বরাত বা ১৫ শাবান বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই কিংবা অন্তত প্রায় ১২০০ বছর ধরে একটি বিশেষ পবিত্র ও আনন্দঘন দিন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। অনেক বিশিষ্ট সুন্নী মনীষী মনে করেন, সবচেয়ে মহিমান্বিত রাতগুলোর মধ্যে ১৫ শাবান অন্যতম। ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দিনে নানা ধরনের মিষ্টি বিতরণ ও ব্যাপক ইবাদত বন্দেগী করা হয়। আলেমদের অনেকেই মনে করেন এই রাতের ইবাদত-বন্দেগী কবুল হয় এবং মুসলমানের সব গোনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার এক উপযুক্ত সুযোগ দেয়া হয় এই রাতে।

চিন্তাবিদ ও দার্শনিকরা প্রাচীন যুগ থেকেই আদর্শ সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছেন। যেমন, প্লেটো তার কল্পিত ইউটোপিয়ায়, ফারাবী তার সূর্যের নগরে, টমাস ম্যুর তার কল্পিত পৃথিবীর স্বর্গে আদর্শ সমাজ বা দেশ গড়ার স্বপ্ন তুলে ধরেছেন। খোদায়ী ধর্মগুলোও মানুষকে ধ্বংস, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দানকারী সর্বশেষ ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের সুসংসবাদ সব সময়ই দিয়ে এসেছে। সর্বশেষ ত্রাণকর্তার শাসন ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, সবার মধ্যে উচ্চ শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়া, ন্যায় বিচার, নিরাপত্তা, শান্তি এবং সবার জন্য সুখ-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা।

সর্বশেষ ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের যুগকে শেষ জামানা বা এপোক্যালিপসি বলা হয়। অবশ্য প্রত্যেক ধর্ম ও সম্প্রদায় ইতিহাসের শেষ অংশকে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে চিত্রিত করে আসছে।  এসব বর্ণনার অধিকাংশের মধ্যেই অক্ষ শক্তি বা অসত্যের পক্ষের শক্তিগুলোর সাথে সর্বশেষ ত্রাণকর্তার অনুগত বাহিনীর রক্তাক্ত ও ভয়াবহ যুদ্ধ ঘটার এবং এসব ত্রাণকর্তার অনুগত বাহিনীর বিজয়ী হবার কথা বলা হয়েছে।
মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন ১৫ শাবান হল মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদী (আ.)'র পবিত্র জন্মদিন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের ১১তম সদস্য ইমাম হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.)'র পুত্র হিসেবে তাঁর জন্ম হয়েছিল ২২৫ হিজরিতে ইরাকের  বর্তমান রাজধানী বাগদাদের উত্তরে পবিত্র সামেরা শহরে। তাঁর মায়ের নাম ছিল নার্গিস। এবং তিনি আল্লাহর আদেশে এক পর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যান। তাঁর অদৃশ্য থাকার সময়ও দুই ভাগে বিভক্ত। স্বল্পকালীন সময়ের জন্য অদৃশ্য হওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদে অদৃশ্য থাকা। দীর্ঘ মেয়াদে অদৃশ্য থাকার পর উপযুক্ত সময়ে তিনি আবার আবির্ভূত হবেন এবং সব ধরনের জুলুম ও বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার ও ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর আগমনে সকল আঁধার দূর হয়ে বিশ্বে আসবে ঝলমলে ভোর।

তুমি আসবে জানি এই ধরাধামে করতে আঁধার দূর,

কাটাবে অমানিশা, দেখাবে আলোর দিশা,

আনবে ঝলমলে ভোর

সেই আশাতেই বুক বাধি,

তুমি আসবে জানি আসবে ইমাম মাহদী।

 

দিকে দিকে শুনি শুধু মজলুমের কান্না,

দেখি সব তাগুতি আয়োজন,

ভাঙগাতে মোদের নিদ,

কাঁপাতে জালিমের ভিত,

তোমাকেই আজ বড় প্রয়োজন

আলোকিত করবে এ সমাজ বিশ্ব

ছড়িয়ে কুরআনের নূর...... ঐ

 

ইসলামের ছায়াতলে মানুষেরা দলে দলে

আসবে তোমারই দাওয়াতে,

অন্যায় অবিচার দূর্নীতি অনাচার,

দুর হবে তোমারই ছোঁয়াতে,

ধ্বনিত হবেই জানি সকলেরই কণ্ঠে

আল্লাহ নামেরই সুর.......... ঐ

(গানের কথা, সুর ও কণ্ঠ : রফিকুল ইসলাম রিমন)

বাংলাদেশি গীতিকার ও সুরকার রফিকুল ইসলাম রিমনের গানে ইমাম মাহদী (আ.)-এর আগমনে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা কাসাসের পঞ্চম আয়াতে বলেছেন:

"এবং আমি ইচ্ছা করলাম যে, যাদের পৃথিবীতে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল , তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদের নেতৃত্ব দান করতে এবং তাদেরকে পৃথিবীর শাসন-ক্ষমতার উত্তরাধিকারী করতে।" 

এই আয়াতের তাৎপর্য অনুযায়ী এমন এক যুগ আসবে যখন বিশ্বব্যাপী ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। আর ওই ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিদেরই নেতা হবেন হযরত ইমাম মাহদী (আ.)। তিনি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন মানুষের প্রকৃত মর্যাদা।

মানব জাতির শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহাদী (আ.) এমন সময় বিশ্বে পুনরায় আবির্ভূত হবেন যখন বিশ্বব্যাপী অবিচার ও জুলুমের মাত্রা বাড়তে থাকায় একদিকে ঈমানদারদের ঈমান ও প্রতিরোধ বাড়তে থাকবে এবং দুর্বল চিত্তের অধিকারী জনগণ ক্রমেই মুক্তির ব্যাপারে বেশি আশাহীন হতে থাকবেন।

শিয়া ও সুন্নী সূত্রগুলোতে প্রসিদ্ধ এক বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম মাহদী (আ.)'র যুগে মানবজাতি অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কল্যাণ অর্জন করবে। ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর দানশীলতা ও মানব জাতির প্রতি তাঁর মমত্ববোধ এবং ভালোবাসাও এ রেওয়ায়েত থেকে স্পষ্ট। মহানবী (সা.) বলেছেন :

"মাহ্দীর যুগে আমার উম্মত এমন নেয়ামত লাভ করবে যে, তারা পূর্বে কখনই তা লাভ করেনি। আকাশ থেকে তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং তখন পৃথিবীর বুকে সব ধরনের উদ্ভিদই জন্মাবে।”

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুগে মানব সমাজ প্রথমে দারিদ্র্যমুক্ত ও অভাবমুক্ত একটি সমাজে পরিণত হবে। পৃথিবীর সমস্ত বিধ্বস্ত ও বিরাণ এলাকা তাঁর মাধ্যমে আবাদ হয়ে যাবে। 

যুগের নেতা ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কে বাংলাদেশি কবি ও ছড়াকার শাহ নওয়াজ তাবিবের একটি কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি এ রকম: