'তেহরান হোটেল' অ্যাকশানধর্মী চলচ্চিত্রে ইসরাইলের ইরানবিরোধী গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতাকে আড়াল করে বরং ইরানের বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইসরাইলের জন্য বিজয় হিসাবে তুলে ধরা হবে। 'হোটেল তেহরান'-এর শুটিং আগামী মে মাসে শুরু হবে। এমন সময় এই ফিল্ম তৈরির কাজ শুরু হতে যাচ্ছে যখন এর পরিচালক গাই মোশে তার চতুর্থ সিনেমার শুটিং-এর কাজে ব্যস্ত এবং ইসরাইলের বাইরে তার কোন খ্যাতি নেই।
ইসরাইলের চলচ্চিত্র নির্মাতা গাই মোশে 'তেহরান হোটেল' ফিল্মের-এর চিত্রনাট্য লিখেছেন 'বাযেল বাসি'-এর সহায়তায়। 'বাজেল বাসি' নিজেকে চিত্রনাট্যকার হিসেবে দাবি করলেও এর আগে তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর বিশেষ অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তাদের একজন ছিলেন।
দৃশ্যত, চারটি স্বাধীন চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে জড়িত, যারা সবচেয়ে অখ্যাত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থাগুলোর মধ্যে পড়ে। 'তেহরান হোটেল' ফিল্মের প্রযোজনা প্রক্রিয়ায় এই অজানা ও অখ্যাত বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি এবং বাযেল বাসির মতো সিআিইএর কর্তাব্যক্তির উপস্থিতি থেকে বোঝা যায়, চলচ্চিত্রটি মোসাদের নির্দেশনায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি হবে।
চলচ্চিত্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ছবিটি সম্ভবত কেবলমাত্র ইসরাইলে উগ্র ও চরমপন্থী এবং যুদ্ধবাজরাই পছন্দ করতে পারে এবং ইসরাইলের বাইরে এটির দর্শক জনপ্রিয়তা থাকবে না। তারা এও বলেছেন যে, 'হোটেল তেহরান' ফিল্ম তৈরির খবর কিছু অজানা ও অখ্যাত সিনেমা সাইট ও ম্যাগাজিনে অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়া বিভিন্ন জনপ্রিয় প্রকাশনা, যেমন ভ্যারাইটি, স্ক্রিন ডেইলি এবং হলিউড রিপোর্টারগুলোতে প্রকাশিত হয়নি। এ থেকে বোঝা যায়, সিনেমার দিক থেকে এর মান, বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নেই।
প্রকৃতপক্ষে, ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ শক্তিগুলো বিশেষ করে ইরানকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হওয়ার পর ওই ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। ফিল্ম তৈরি করে বিশ্ব জনমতের কাছে তারা ইরানকে একটি যুদ্ধবাজ দেশ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
এর আগে, ড্যানিয়েল সিরকিনের তৈরি সিরিজ নাটক 'তেহরান' ২০২০ সালে অ্যাপল টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারিত হয়েছিল। এরপর এরান রিকলিস পরিচালিত 'তেহরানে লোলিতা খনি' চলচ্চিত্রটি ২০২৩ সালে তৈরি হয়েছে যদিও তা এখনো মুক্তি পায়নি। আর সর্বশেষ 'হোটেল তেহরান' হচ্ছে তৃতীয় মুভি যা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজধানীর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে নির্মিত হচ্ছে এবং এর কাহিনী সংলাপের মাধ্যমে ইরানকে টার্গেট করা হয়েছে।
'হোটেল তেহরান' চলচ্চিত্র নির্মাণ করে মোসাদ মূলত ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তিতে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে একটি সীমারেখা তৈরি করতে চায় এবং এ ক্ষেত্রে ইরানের অধিকারকে অস্বীকার করতে চায়। অথচ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পরমাণু ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার আদায় করতে গিয়ে ইরান গত দুই দশকে সবচেয়ে কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে এবং ইরানের জনগণ এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।
ইরানের সরকার ও জনগণের এই কঠোর প্রতিরোধের কারণে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এবং ইসরাইলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ সম্মিলিতভাবে ইরান বিরোধী এমন সব চলচ্চিত্র ও সিরিয়াল তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে বিশ্ব জনমতের কাছে ইরানের বিশ্বাসযোগ্যতা ও ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করা যায়। #