‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
সোমবার

২৫ মার্চ ২০২৪

২:০৫:৪৭ PM
1446728

ধর্ম মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিকে শক্তিশালী করে: আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর চিন্তাদর্শন

ইতিহাস জুড়ে, মানুষ সব সময় তার প্রয়োজন মেটানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে, কারণ মানুষকে প্রাকৃতিকভাবে একটি পরনির্ভরশীল সত্ত্বা হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ যে মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন তা হলো, একদিকে সে তার চাহিদাগুলিকে ভুলভাবে নির্ণয় করে এবং অন্যদিকে এই চাহিদাগুলি মেটানোর ক্ষেত্রে ভুল পথ অবলম্বন করে।

এই বিপজ্জনক অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়ে তাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠানো হয়েছে এবং নবী-রাসূলগণ ওহী বা আল্লাহর বাণী দিয়ে মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন; পবিত্র কুরআন একটি অনন্য, নিরাময়কারী, মূল্যবান ও পথপ্রদর্শনকারী উপহার যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে সর্বশক্তিমান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছে।

এই মহাগ্রন্থের কার্যকর ব্যবহার ছাড়া মানুষ এই পৃথিবীতে শান্তি, স্থিরচিত্ত ও সন্তুষ্টির জীবন লাভ করতে পারে না।

পবিত্র কুরআন মানুষকে এমন বাস্তবতা শিক্ষা দেয়, একবিংশ শতাব্দীর মানুষ, সমস্ত বস্তুগত অগ্রগতি অর্জন করা সত্ত্বেও যে বাস্তবতা জানার ক্ষমতা বা সম্ভাবনা কখনই ছিল না এবং ভবিষ্যতেও নেই। এসব বাস্তবতা মানুষের কাছে প্রকাশিত হলে এবং মানুষ যদি সেগুলি মেনে চলে তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে এবং তার শক্তিমত্তা বেড়ে যাবে।  

সুতরাং, যাদেরকে আল্লাহর কিতাব দ্বারা শিক্ষা দেয়া হয়েছে, তারাই সুস্পষ্ট বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।

আল-কুরআন নামক এই আলোর উৎসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই কুরআন থেকে উপকৃত হওয়া সম্ভব।

আলোচনার অব্যাহত অংশে আপনি পড়বেন তা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর বই ‘আউটলাইন অফ ইসলামিক থট ইন কুরআন’ থেকে নেয়া হয়েছে:

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِیمِ الر ۚ کِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَیْکَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَی النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَیٰ صِرَاطِ الْعَزِیزِ الْحَمِیدِ

সূরা ইব্রাহিমের ১ নম্বর আয়াতের গবেষণামূলক অনুবাদ

“এই কিতাব, আমি এটা আপনার প্রতি নাযিল করেছি যাতে আপনি মানুষদেরকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে বের করে আনতে পারেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, তাঁর পথে যিনি পরাক্রমশালী, সর্বপ্রশংসিত।” আলোর উপকারিতা হলো পথ আলোকিত করা, আর অন্ধকারের অপকারিতা হলো, মানুষ জানে না কি করবে আর কোথায় যাবে!

যেকোনো শস্যের দানা বা বীজ মাটির নীচে যেখানে থাকে সেখানে রয়েছে নিকষ কালো অন্ধকার। যা এই বীজগুলিকে জীবন্ত করে তোলে এবং সমস্ত অন্ধকার ও সংকীর্ণতার হৃদয় থেকে বের করে আনে এবং উজ্জ্বল স্থানে পৌঁছে দেয় তা হলো আকাশ থেকে বর্ষিত বৃষ্টির ফোঁটা।

মানুষের জীবনও সেই বীজেরই মতো যারা একইরকমভাবে এই মাটির জগতের অন্ধকারে বন্দি। আর কুরআনের আয়াতগুলো সেই বৃষ্টির ফোঁটাস্বরূপ যা ঐশী জ্ঞানের সাগর থেকে উঠে এসে নবীজির হৃদয়ে নাজিল হয় মানুষের অস্তিত্বের বীজে প্রাণ সঞ্চার করতে এবং অজ্ঞতা, অবিশ্বাস, অত্যাচার, দুর্নীতি ও পাপের অন্ধকার থেকে বের করে আলোর জগতে অর্থাৎ জ্ঞানের আলো, ঈমানের আলো, ন্যায়ের আলো ও ঐক্যের আলোয় নিয়ে আসতে।

কেন এই পৃথিবীতে নবী পাঠাতে হবে? কেন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো একজন ঐশী দূত মানবজাতিকে হেদায়েত করার দায়িত্ব নিয়ে ধুলির ধরায় আবির্ভূত হন? মানুষের নিজের পক্ষেই কি এ কাজ করা সম্ভব নয়? মানুষের জ্ঞান এবং মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি কি যথেষ্ট নয়? তাহলে নবী কেন? কেন অদৃশ্যের বাণী নিয়ে একজন বার্তাবাহকের আর্বিভাব ঘটতে হবে?

আমি নবুওয়াতের দর্শন নিয়ে বেশি কথা বলি না। তবে এক কথায় যা ব্যক্ত করতে চাই তা হলো, মানুষের ইন্দ্রিয়, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি এবং মানুষের প্রজ্ঞা মানুষকে সঠিক পথের দিশা ও মুক্তি দিতে যথেষ্ট নয়।

মানুষের ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি তাকে সঠিক পথে চলতে বাধা দেয়।  [কিন্তু মানুষের প্রয়োজন] একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, একটি শক্তিশালী এবং গভীর নির্দেশিকা যা তাকে ইন্দ্রীয়পূজা থেকে মুক্তি দেবে। এই হেদায়েত বা নির্দেশকা কি আপনার ইন্দ্রিয় সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে? এটা কি আপনার প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যায়? সে কি যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিকে পাথর দিয়ে আঘাত করে? মোটেই না।

সে আসে বুদ্ধিবৃত্তিকে পথ দেখাতে, বুদ্ধিকে লালন করতে এবং ধূলির নীচে চাপা পড়ে থাকা বুদ্ধিবৃত্তিকে বের করে আনতে।

মানুষ বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হোক, উপলব্ধি করতে শিখুক তা ফেরাউনরা পছন্দ করে না।  কারণ মানুষ সবকিছু বুঝতে শিখলে ফেরাউনদের অস্তিত্ব ধূলিস্যাত হয়ে যাবে।

তাহলে ধর্ম কিসের জন্য আসে? বুদ্ধিবৃত্তিকে পথ দেখাতে। বুদ্ধিবৃত্তি যখন আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয় তখন এটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে যখন লোভের সংযোগ ঘটে তখন সে ঠিকমতো দেখতে পায় না। যখন সে প্রবৃত্তি দ্বারা তাড়িত হয় তখন সে সঠিক বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে না। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিকে আবেগ, লোভ, প্রবৃত্তি, ভয়, শঙ্কা থেকে মুক্তি দিতেই ধর্মের আবির্ভাব ঘটে। ধর্ম মানুষের সুস্থ বুদ্ধিবৃত্তিকে শক্তিশালী করে যাতে সে সবকিছু সঠিকভাবে দেখতে পায়।#