‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
রবিবার

১৪ এপ্রিল ২০২৪

৭:৫২:১২ PM
1451333

আমিয়া মামলা: আর্জেন্টিনার বিচার ব্যবস্থায় ইসরাইলের অনুপ্রবেশের গল্প এবং ইরানবিরোধী প্রচারণা

১৯৯৪ সালের ২২ জুন আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে ইহুদি মালিকানাধীন একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৮৫ জন নিহত এবং ৩০০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছিল। এই ঘটনার কয়েক বছর পর ইহিুদিবাদী ইসরাইলের প্রচেষ্টায় ইরানের বিরুদ্ধে অনেক সাক্ষ্য প্রমান পেশ করা হয়। পরে এগুলো আর্জেন্টিনায় স্পষ্টভাবে জাল এবং মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়।

ইসরাইল-আর্জেন্টিনা দ্বিপাক্ষিক অ্যাসোসিয়েশন (এএমআইএ) এবং ইসরাইল-আর্জেন্টিনা অ্যাসোসিয়েশন (দয়া) নামে দুটি কেন্দ্রে বিস্ফোরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইহুদিবাদী কর্তৃপক্ষ এই বিস্ফোরণের জন্য ইরানকে দায়ী করে এবং তারপরে বুয়েনস আইরেসে ইরানি দূতাবাসের সামনে অসংখ্য বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে।

ইহুদি বিচারক:

মামলাটি আর্জেন্টিনার ফেডারেল বিচারক জুয়ান হোসে গ্যালিয়ানোর কাছে পাঠানো  হয়েছিল, কিন্তু ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে জাল মামলা তৈরি করা, মামলার সাক্ষীদের ঘুষ দেওয়া এবং তার অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপের কারণে গ্যালিয়ানকে ২০০৫ সালের ৩ আগস্ট আর্জেন্টিনার সুপ্রিম কাউন্সিল অফ জাজেসের আদেশে বরখাস্ত করা হয় এবং বিচার করার জন্য তার লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

বিচারক গ্যালিয়ানোকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে এটা স্পষ্টভাবে দেখায় যে এএমআইএ মামলার ১১ বছর ধরে কাজ করার সময় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এবং ইরানি নাগরিকদের বিরুদ্ধে তিনি যে সমস্ত অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন তা সবই ভুয়া এবং মিথ্যায় ভরপুর ছিল।

জুয়ান হোসে গ্যালিয়ানো মামলাটি পরীক্ষা করার সময় বিস্ফোরণের ঘটনায় ইরানের জড়িত থাকার উপর ভিত্তি করে কিছু লোককে তার পক্ষে ছদ্মবেশী ভোট দিতে বাধ্য করেছিলেন যাদের মধ্যে আমিয়া মামলার একজন আসামী এবং কিছু ইরান বিরোধী ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

গ্যালিয়ানো চারজন নির্দোষ আর্জেন্টাইন অফিসারকে এএমআইএ মামলায় ৮ থেকে ১০  বছরের জন্য জেলে রাখার পাশাপাশি আর্জেন্টিনার গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে চুরি করা গাড়ির ডিলারকে ৪ লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন যাতে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দেন যে তিনি ইরানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য লেবানন ভিত্তিক ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর কিছু সদস্যকে একটি গাড়ি দিয়েছিলেন।

এছাড়া আর্জেন্টিনার এই বিচারক ২০০৩ সালে বুয়েনস আইরেসে নিযুক্ত ইরানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হাদি সোলেমানপুরসহ 8 ইরানি কূটনীতিকদের গ্রেপ্তারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক আদেশ  জারি করেছিলেন।  যার ফলে একই বছর ২১ আগস্ট ইংল্যান্ডের ডারহামে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু বিচারক গ্যালিয়ানো কর্তৃক উপস্থাপিত নথিগুলো ব্রিটিশ বিচার বিভাগ দ্বারা গৃহীত না হওয়ায় তিনি ১২ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন এবং অবশেষে ১৩ নভেম্বর ২০০৩ তারিখে ব্রিটিশ আদালত আমিয়া মামলায় ইরানের রাষ্ট্রদূতকে নির্দোষ হিসেবে চূড়ান্ত রায় জারি করে এবং পরে  আর্জেন্টিনায় এই  মামলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।

ইন্টারপোলের সদস্যরা ইরানের পক্ষে ভোট দিয়েছেন

২০০৫ সালে অক্টোবরে ইন্টারপোলের বার্ষিক সাধারন সভায় এর সভাপতি ঘোষণা করে যে আর্জেন্টিনার বিচারক আমিয়া মামলার তদন্তে অসদাচরণ করেছেন এবং এই বিস্ফোরণে কিছু ইরানি নাগরিকের জড়িত থাকার বিষয়ে সমস্ত অভিযোগ কার্যকরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই অধিবেশনে ১০০টি ইন্টারপোলের সদস্য দেশের মধ্যে ৯৫টি দেশ ইরানের পক্ষে ভোট দেয়। তা সত্ত্বেও এই বিষয়টি নিয়ে আর্জেন্টিনা সরকারের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের রাজনৈতিক চাপ অনেকের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ে।

আমিয়া মামলায় নির্ভরযোগ্য নথি পেশে ব্যর্থতা

যদিও  আমিয়া মামলাটি বিশ্বে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে এবং এই মামলায় কয়েক দফায় বিচারক বদল হলেও সংশ্লিষ্ট সব আদালতে ইরানের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ বা নথি হাজির করা সম্ভব হয় নি।

আর্জেন্টিনায় ইহুদিবাদীদের উচ্চ প্রভাব

জেনারেল ভাহিদি যিনি ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে তার চাকরি শেষ করার পরে কৌশলগত প্রতিরক্ষা কেন্দ্রের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি তারাজ ম্যাগাজিনের সাথে একটি সাক্ষাত্কারে এই মামলাটি কীভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন।

তিনি মনে করেন,  আর্জেন্টিনা যখনই ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চেয়েছে এবং যখনই ইসরায়েল তার শিশু হত্যা ও অপরাধের কারণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপে পড়েছে তখনই ইহুদিবাদী এই অবৈধ শাসক গোষ্ঠী মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি যখন আর্জেন্টিনা ঘোষণা করেছিল যে তারা ইসরাইলের কাছে নথি চেয়েছিল।  কিন্তু তাদের কাছে কিছুই ছিল না এবং যেহেতু আমিয়ার আগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরেকটি বিস্ফোরণ হয়েছিল আর্জেন্টিনা জিজ্ঞাসা করেছিল কেন তারা সেটি তদন্ত করছে না। অবশ্য ইহুদিবাদীদের এই মিথ্যা মামলা পৃথিবীর কেউ মেনে নেয়নি। ইহুদিবাদীরা আর্জেন্টিনায় উচ্চ মাত্রায় রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করেছে।#


342/