‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বুধবার

২৪ এপ্রিল ২০২৪

৭:২১:০৪ PM
1453808

ইরানের তাবাস মরুভূমিতে আমেরিকার নজিরবিহীন বিপর্যয়ের কাহিনী

ইরানে শাহের স্বৈরাচারী শাসনের পতন এবং জনগণের ইসলামি বিপ্লব বিজয় লাভের ১৫ মাস পর ১৯৮০ সালের ২৫ এপ্রিল ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন বড় ধরনের সামরিক অভিযান ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। শাহ সরকারের আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত মার্কিন সরকারের ওই সামরিক অভিযানের নাম ছিল 'ঈগলের থাবা'। ইরানের তাবাস মরুভূমিতে আমেরিকা ওই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল এবং তাদের অভিযান ব্যর্থ হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ইরানের ওপর সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ওই ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর ইরানে মার্কিন দূতাবাস থেকে গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে যে ৫২ জন কূটনীতিককে আটক করে তেহরান, তাদের উদ্ধারের জন্য ওই সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিল আমেরিকা। কিন্তু তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক কেন্দ্রগুলোতে আক্রমণ করা এবং ইসলামি সরকারের পতন ঘটানো।  

প্রকৃতপক্ষে, কূটনীতিকদের আটকের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওই পদক্ষেপে হতভম্ভ হয়ে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা আটককৃতদের উদ্ধারের জন্য সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ইরানের কিছু অনুচরের সহযোগিতায় তাদের পছন্দমতো কাউকে ইরানের ক্ষমতায় বসানোর ইচ্ছা পোষন করেছিল।

ইরানে মার্কিন বাহিনীর অভিযান

পরিকল্পনা অনুসারে, ১৯৮০ সালের ২৪ এপ্রিলে সাতটি দৈত্যাকার সি-130 বিমান এবং আটটি হেলিকপ্টার ইরানের সীমান্তে প্রবেশ করেছিল। সঙ্গে করে তারা উন্নত সামরিক সরঞ্জাম যেমন জিপ, দ্রুতগামী মটর সাইকেলসহ অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র এনেছিল।

অভিযানে অংশ নেয়া মার্কিন সেনারা দক্ষিণ দিকের সীমান্ত থেকে ইরানের ভেতরে প্রবেশ করে এবং পশ্চিমা ঘেঁষা বনি সদরের সরকারের সাথে গোপন যোগসাজসের মাধ্যমে বিনা বাধায় তারা প্রায় একশত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাবাত খান তাবাসের কাছে একটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে।

এ অভিযান পরিচালনায় মার্কিন অনুচরদের সহযোগিতায় আগে থেকেই বিমান বিধ্বংসী সরঞ্জামগুলো সরানো হয়েছিল এবং বিশেষ বাহিনী যখন তাবাস মরুভূমিতে পৌঁছায় তখন ছিল মধ্যরাত।

আমেরিকার ব্যর্থ অভিযান এবং সেনা নিহত হওয়াসহ ধ্বংস হয় গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম

অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর পরিদর্শনে দেখা যায়- একটি হেলিকপ্টার এবং সি-১৩০ হারকিউলেস পরিবহন বিমান পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ধ্বংস হয়েছে এবং পাঁচটি হেলিকপ্টার ও গানশিপ বালির মধ্যে পড়ে রয়েছে। অভিযানে অংশ নেয় মার্কিন সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী এবং মেরিন কমান্ডোরা।

এরপর, বালির ঝড়ের কারণে আরও ২টি হেলিকপ্টার প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে আর অভিযানে নামতে পারেনি। ফলে, কার্টারের অনুমতি নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বন্ধ করা হয়। বালি ঝড়ের কবলে পড়ে সমস্ত পরিকল্পনা নস্যাত হয়ে যাওয়ায়, অনেক সরঞ্জাম ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এবং কিছু সেনা ইরানিদের হাতে বন্দী হওয়ায় বাকী মার্কিন সেনারা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর কমান্ড কাঠামো এতটাই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিল যে আটজন নিহত মার্কিন সেনার মৃতদেহ এবং হেলিকপ্টারে থাকা গোপন নথিপত্র ফেলে রেখেই তারা পালিয়ে গিয়েছিলে।

পরিণতি

তাবাসের পরাজয় ছিল আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের জন্য একটি বড় ধরনের চপেটাঘাত এবং হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের কেলেঙ্কারির কারণ হয়েছিল। আমেরিকা পাহলভি রাজতান্ত্রিক শাসনের পতন এবং মার্কিন গুপ্তচরদের গ্রেপ্তারের কারণে ইরানের জনগণকে শাস্তি দিতে চেয়েছিল; কিন্তু ফল হল উল্টো।

  গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, এ ঘটনায় ইরানের জনগণ আরও সতর্ক হয়ে উঠল এবং পশ্চিমা আধিপত্যবাদী শক্তির শত্রুতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। একইসাথে দেশের ভেতরে থেকে যারা পাশ্চাত্যের অনুচর হিসেবে কাজ করছিল তাদেরও চেহারা সবার সামনে স্পষ্ট হলো। ইরানে আটক জিম্মিদের উদ্ধার করার পর কার্টার প্রেসিডেন্ট পদে পুনঃনির্বাচিত হতে চেয়েছিলেন; কিন্তু এই সামরিক ব্যর্থতা এবং ইরানের বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনি(র) মার্কিন নির্বাচন পর্যন্ত গুপ্তচরদেরকে ইরানেই রাখার সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কার্টারকে ভোট দেয়নি এবং তিনি নির্বাচনে হেরে যান। পরে কার্টার এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন,

'আমার প্রেসিডেন্টকাল আমেরিকার সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্টকাল বলা যায়।  কারণ সে সময় ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছিল মার্কিন সরকার।#


342/