‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বুধবার

২৬ জুন ২০২৪

৩:৫৪:২৪ PM
1467856

ইয়েমেনিরা কিভাবে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী আইজেনহাওয়ারকে পালাতে বাধ্য করেছে?

পার্সটুডে- মার্কিন সরকার এখনও ফিলিস্তিনের আলআকসা তুফান নামক অভিযানের পরিণতিতে জড়িয়ে আছে। গাজা থেকে পরিচালিত হামাস ও ইসলামী জিহাদের ওই অভিযানের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বিমানবাহী রণতরী আইজেনহাওয়ার ছুটে এসেছিল লোহিত সাগরে। কিন্তু এখন এ অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

ইয়েমেনিরা  মার্কিন বিমানবাহী বিশাল রণতরী 'ইউএসএস আইজেনহাওয়ার'-এর ওপর হামলা করেছে বলে খবর প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই বিশাল সাগর-দানবের ওপর ইয়েমেনি হামলার খবরকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে পেন্টাগন। কিন্তু ইয়েমেনিরা এই খবরের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করলে পেন্টাগনের বিশেষজ্ঞরা ইজ্জত বাঁচানোর জন্য ঘোষণা করেন যে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লোহিত সাগরে এই রণতরীর মিশন শেষ করা হয়েছে! 

এই ঘটনার পর অনেক মার্কিন সংবাদ-মাধ্যম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলেছে যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি পাশ্চাত্যের অস্ত্র সাহায্য অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও ইসরাইলের অবস্থা এখনও নাজুক ও তা দৃশ্যমান এবং বিখ্যাত মার্কিন রণতরীর এখনও সেখানে থাকা উচিত। কিন্তু ইয়েমেনিদের নতুন হামলার পর অস্টিন ঘোষণা করেন যে আইজেনহাওয়ারের পিছু হটা দরকার এবং সম্ভবত 'থিওডোর রুজভেল্ট' রণতরী সেখানে যাবে।

আইজেনহাওয়ারের পিছু হটা কেন গুরুত্বপূর্ণ? ইউএসএস ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিমিৎজ শ্রেণীর দশটি বড় রণতরীর অন্যতম যা মার্কিন নৌবাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহুর অন্যতম বা গোটা মার্কিন নৌবাহিনীর অন্যতম প্রধান পেশি-শক্তি। পারমানবিক-শক্তি চালিত এই রণতরী চালু করা হয়েছিল ১৯৭৭ সালর ১৮ অক্টোবর। ৩৩৩ মিটার দীর্ঘ এই জাহাজের ওজন ১১৪ হাজার টন। এটি সবচেয়ে শক্তিশালী রাডার-ব্যবস্থা ও ন্যাভিগেশন সহায়ক যন্ত্রপাতিতে সুসজিজ্জত। এর নৌ-কর্মী বা ক্রু ও মেরিন সেনার মোট সংখ্যা ৫ হাজার ৬৮০। এই রণতরী সাবমেরিনগুলোর সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে সেসবের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে সক্ষম এবং আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য 'স্পেরো' ক্ষেপণাস্ত্রের নৌ ও স্থল সংস্করণেরও অধিকারী। এতে রয়েছে ১০০'রও বেশি জঙ্গি বিমান ও হেলিকপ্টার যেগুলো এই বিশাল জাহাজ থেকে উড্ডয়ন করতে সক্ষম।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামাসের নজিরবিহীন হামলায় দখলদার ইসরাইল বিপর্যস্ত হলে এ অঞ্চলে পাঠানো হয় আইজেনহাওয়ার। জ্বালানী পরিবহনের নিরাপত্তার কথা বলে এ অঞ্চলে আসলেও আসলে এর মূল লক্ষ্য ছিল ইসরাইলের আশপাশে একটি ভাসমান বিমানঘাঁটি হিসেবে কাজ করা যাতে কখনও দরকার হলে এর যুদ্ধ-বিমানগুলো খুব অল্প সময়ে নানা ধরনের অভিযান চালাতে পারে। কিন্তু ইয়েমেনিদের উপর্যুপরি হামলার মুখে বিমানবাহী রণতরী আইজেনহাওয়ার এমন সময় লোহিত সাগর ছেড়ে চলে যাচ্ছে যখন কৌশলগত এই অঞ্চল ছাড়তে এ রণতরীর বাধ্য হওয়াটা মার্কিন সরকারের জন্য মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না। বিশেষ করে লেবাননের হিজবুল্লাহর হাতে ইসরাইল যখন ব্যাপক মার খাচ্ছে ও ইসরাইলি মন্ত্রীসভার এ সংক্রান্ত উদ্বেগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে তখন আইজেনহাওয়ারের পলায়নের ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষার ইতিহাসে এক যুগান্তরকারী ঘটনা। ইসরাইলের এই কঠিন সময়ে তাকে সহায়তা দিতে আইজেনহাওয়ারের ব্যর্থতার গ্লানি তেলআবিব ও ওয়াশিংটনের জন্য হজম করা বেশ কঠিন হলেও বাস্তবতা হল এ রণতরী ইয়েমেনের ও হিজবুল্লাহর শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতগুলো খেতে থাকলে জো-বাইডেনের নির্বাচনী আশাভরসার তরী এগিয়ে চলাও হয়ে পড়ত অত্যন্ত শোচনীয় ও জটিল অবস্থার শিকার। 

লোহিত সাগর বেশ কয়েকটি সাগরের ও সাগর পথের সংযোগ-পথ হিসেবে বিভিন্ন পণ্য বিশেষ করে জ্বালানী পরিবহনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক দিক থেকেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এ সাগরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও মার্কিন সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরব, ইহুদিবাদী ইসরাইল ও মিশরের নিরাপত্তা রক্ষা ও ইয়েমেনের বিপ্লবীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্যও এ অঞ্চলে মার্কিন হস্তক্ষেপ জরুরি। আঞ্চলিক মার্কিন সামরিক কমান্ড কেন্দ্রের এতদিনের বক্তব্য অনুযায়ী আইজেনহাওয়ারের উপস্থিতি ছাড়া এইসব বিষয় তত্ত্বাবধান করা সম্ভব নয়। কিন্তু আজ বিশ্ববাসী স্পষ্টভাবে দেখছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে নিজের ঘাটিগুলোরই নিরাপত্তা রক্ষায় অক্ষম। আর এটাও নতুন বিশ্ব-পরিস্থিতির এক স্মরণীয় দিক। 

গাজায় আট মাসেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়েও নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরাইল কেবল বেসামরিক ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু এবং নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারেনি। ফলে ইসরাইল ও তার প্রধান সহযোগী মার্কিন সরকার উভয়ই এক কৌশলগত অচলাবস্থার শিকার। ইহুদি লবিগুলোর চাপ ও নির্বাচনী আর রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে মার্কিন সরকার নেতানিয়াহুর ওপর তেমন চাপও দিতে পারছে না। ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে লেবানন, ইরাক, ইয়েমেন ও সিরিয়ার প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এই শক্তিগুলো ইসরাইলকে তার অপরাধযজ্ঞের যথাযথ শাস্তি দিতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। 

গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ ও প্রায় এক লাখ ব্যক্তি আহত হয়েছে যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। আহত হয়েছে প্রায় এক লাখ। #