ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইহুদিবাদী ইসরাইলের কাপুরুষোচিত গুপ্তহত্যার শিকার হয়ে আজ (বুধবার) সকালে ইরানের রাজধানী তেহরানে শহীদ হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু পর এ নিয়ে হামাসের দুইজন শীর্ষ পর্যায়ে নেতা ইসরাইলি গুপ্ত হত্যার স্বীকার হলেন।
শহীদ দুই হামাস নেতা হলেন ইসমাইল হানিয়া ও সালেহ আল-আরুরি যিনি লেবাননে অবস্থান করছিলেন।
ইসমাইল হানিয়া ১৯৬২ সালে গাজা উপত্যকার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন এবং গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে ১৯৮৭ সালে গ্র্যাজুয়েট হন। ইসরাইল অধিকৃত আশকেলন শহর থেকে তার মা-বাবা আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন।
ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কয়েক বছরের রাজনৈতিক তৎপরতার পর ১৯৯৭ সালে হামাসের অন্যতম শীর্ষনেতা হিসেবে নিযুক্ত হন হানিয়া। এর ধারাবাহিকতায় তিনি এক পর্যায়ে হামাসের প্রধান নির্বাচিত হন।
১৯৯৭ সালে ইহুদিবাদী ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ইসমাইল হানিয়া হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমদ ইয়াসিনের কার্যালয়ের প্রধান নিযুক্ত হন। শেখ ইয়াসিনের সঙ্গে ইসমাইল হানিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ও দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় হানিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এজন্য তাকে কয়েকবার ইসরাইলের কারাগারে যেতে হয়েছে। এছাড়া, ইহুদিবাদীদের বহু গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা থেকে তিনি বেঁচে গেছেন। ২০০৩ সালে তাকে বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা করার চেষ্টা করে দখলদার ইসরাইল।
২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই নির্বাচনে হামাস রাজনৈতিক দল হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। বিজয়ের মধ্য দিয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হন কিন্তু ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ২০০৭ সালে হামাসের সরকার ভেঙে দেন। ২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ইসমাইল হানিয়া গাজা উপত্যকায় হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৭ সালের ৬ই মে তিনি ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন এবং হামাস নেতা খালেদ মাশআলের জায়গায় দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের ভেতরে প্রতিরোধ যোদ্ধারা অভিযান চালানোর পর হানিয়া তার রাজনৈতিক দপ্তরকে ফিলিস্তিনি আন্দোলনগুলোকে রক্ষার কাজে বিশেষভাবে ব্যবহার করেন। ফিলিস্তিনিদের অভিযানের পর ইসমাইল হানিয়া বলেছিলেন, “আমরা বহুবার তোমাদেরকে সতর্ক করেছি যে, ফিলিস্তিনি জনগণ ৭৫ বছর ধরে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে অথচ তোমরা আমাদের জনগণের অধিকারকে অস্বীকার করে চলেছ।”
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসমাইল হানিয়ার পরিবারের ১৪ সদস্য শহীদ হয়েছেন যার মধ্যে রয়েছেন তার তিন ছেলে ও ৮০ বছর বয়সী বোন। গত নভেম্বরে তার এক নাতনি এবং নাতি ইসরাইল হামলায় শহীদ হন। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের ৩১ জুলাই ইসমাইল হানিয়া নিজেও বর্বর ইহুদিবাদী ইসরাইলের গুপ্ত হত্যার শিকার হলেন এবং এর মধ্যদিয়ে শেষ হলো তার বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবন।
342/