এই কারাগারের বন্দিদের নিয়ে হলিউডি ফিল্ম স্টাইলের নানা ছবি ও ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে যেগুলোর বেশিরভাগই জাল ও কৃত্রিম যাতে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও পশ্চিমাদের সন্ত্রাসী তৎপরতাগুলোর দিক থেকে বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে চলে যায় এবং অন্যদিকে ইহুদিবাদী দখলদার ইসরাইল নিশ্চিন্তে তার দখলদারি তৎপরতা চালিয়ে যায়।
'সিদনায়া' কারাগার কোথায়?
এই কারাগার দামেস্কের উত্তরাঞ্চলে ও দামেস্ক থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে। এটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। ত্রিমূখী ভবনের এই স্থাপনার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বন্দি ও বেসামরিক বন্দিদের বিভাগ ও সাদা-ভবন নামে খ্যাত কেবল সামরিক বন্দিদের কারাগার। পুলিশের তত্ত্বাবধানের পরিচালিত এই কারাগারে ২০১১ সালের ঘটনার পর থেকে বন্দিদের ওপর অনেক কঠোরতা করা হত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাবেক বন্দিদের কেউ কেউ বলেছেন যে তাদেরকে কয়েক মাস কোনো বিচার করা ছাড়াই বন্দি রাখা হয়েছিল।
২০১১ সালের আগেও সিরিয়ার রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হত বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো খবর দিলেও সিরিয়ার সরকার বিরোধীদের নানা ঘোষণা ও আন্তর্জাতিক নানা রিপোর্ট থেকে জানা যায় সিরিয়ার মূল কারাগারগুলোতে থাকা বিশেষ করে নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বন্দিদের ওপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড ও নির্যাতন বেড়ে গিয়েছিল।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জানিয়েছিল, সিদনায়া কারাগারে প্রায় ত্রিশ হাজার ব্যক্তি বন্দি রয়েছে। অথচ বেশি বাস্তব বা বেশি বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টগুলো অনুযায়ী সেখানে বন্দিদের সংখ্যা ছিল দশ থেকে বিশ হাজার। ২০১১ সাল থেকে সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু হওয়ার পর থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সিরিয়ায় এই কারাগারের প্রায় ৫ থেকে ১৩ হাজার বন্দিকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে বলে ২০১৭ সালে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
কল্প-কাহিনী প্রচারের নেপথ্যে
এই কারাগারে এমনসব বন্দিদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে যারা ছিল সন্ত্রাসী নানা গ্রুপের সদস্য তথা দায়েশ বা আইএস ও জেবহাতুন নুসরা যা এখন তাহরির আশ শাম নামে সক্রিয়। এইসব সন্ত্রাসী ২০১১ সাল থেকে সাধারণ বেসামরিক মানুষ ও অন্যদের ওপর অনেক নৃশংস নির্যাতন চালিয়েছে এবং সেইসব নৃশংসতার নানা ছবি ও ভিডিও গত এক দশক ধরে দেখেছেন অনেক মানুষ।
সিরিয়ায় সরকারের পতনের পর এখন নতুন সরকার গড়ার পালা। এই সম্ভাব্য নতুন সরকারের মধ্যে যাতে বেশি সুবিধার ভাগগুলো নেয়া যায় সে জন্যই কারাগারগুলোতে চলা কথিত নির্যাতনের বিষয়কে বেশি বড় করে তুলে ধরা হচ্ছে। একটি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে এ কারাগারের একটি রান্নাঘরের সঙ্গে একটি ভূগর্ভস্থ বিভাগ যুক্ত রয়েছে যা চলে গেছে লাল ভবন পর্যন্ত এবং এখানে মাটির নীচে দশ তলা ভবন পর্যন্ত ভবনে শত শত বন্দি আটক ছিল!কিন্তু সিভিল ডিফেন্স বা দমকল বাহিনীর কর্মীরা এমন কিছুই খুঁজে পাননি এবং এ ধরনের সেল থাকার বিষয়টিকে তারা মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছেন।
এই গুজবটিসহ আসাদের কারাগারে নির্যাতনের নানা কল্প-কাহিনী প্রচার করেছে আল আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেল। এই চ্যানেল দাবি করেছে যে আরও অন্তত ২০টি গোপন কারাগার রয়েছে যা এখনও চিহ্তি হয়নি যা সিরিয়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকারী গেরিলা গ্রুপগুলোও সত্য নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
আল আরাবিয়া এইসব দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ বা সূত্র দেখায়নি!
হঠাৎ কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটলে জনমত ক্ষমতাচ্যুত দলের নানা অপ্রকাশিত অপরাধ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয় এবং তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেভাবে ব্যাপক মাত্রায় এখন গুজব ও কল্প-কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে তা আসলে সুপরিকল্পিত প্রচার-অভিযান মাত্র।
দামেস্ক দখলকারী সন্ত্রাসীরা নিজেদের জিহাদি ও ইসলামপন্থী বলে দাবি করে, অথচ তারা সিরিয়ার ওপর ইসরাইলি হামলা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মৌখিক নিন্দা জানাতেও প্রস্তুত নয়। এমনকি ইসরাইলি সেনারা দামেস্কের খুব কাছে চলে আসা সত্ত্বেও তাদের নিন্দা করছে না এইসব কথিত মুজাহিদ গোষ্ঠী। আর তাদের এই দুর্বলতা ঢাকার জন্যই কিছু গুজব ও কল্প-কাহিনী প্রচার করা তাদের দৃষ্টিতে জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। #