লেফটেন্যান্ট জেনারেল শহীদ কাসেম সোলায়মানির শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণ অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার বুদ্ধিজীবি এবং বিশেষজ্ঞরা কুয়ালালামপুরে পার্সটুডে'র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ওই মন্তব্য করেন।
তাঁরা বলেছেন: পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইএসআইএসসহ চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রণাঙ্গনে জেনারেল সোলায়মানির উপস্থিতির ঘটনা আজকের নিরাপত্তাহীন বিশ্বে এই উচ্চপদস্থ শহীদের চরিত্র একজন বীর এবং সন্ত্রাস দমনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
মালয়েশিয়ার ইসলামি বেসরকারি সংস্থার কাউন্সিলের প্রধান মোহাম্মদ আজমি আবদুল হামিদও শহীদ সোলেইমানির স্মৃতি অম্লান রাখার প্রয়োজনীয়তা ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে সাম্প্রতিক দিনগুলোর উত্থান-পতন বিবেচনায় তিনি বলেছেন: সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই শহীদের ভূমিকা ও অবস্থান সবার কাছেই আগের চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে গেছে।
মোহাম্মদ আজমি আবদুল হামিদ আরও বলেন: জেনারেল সোলায়মানি একজন আন্ত-আঞ্চলিক বীর সেনানায়ক হিসাবে, সিরিয়ায় কয়েক বছরব্যাপী যুদ্ধ চলাকালে, প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্বাসের শক্তি দিয়ে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের গড়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আইএসআইএসকে দমন করেছিলেন। যার ফলে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন ও ইসরাইলি ষড়যন্ত্র নস্যাত হয়ে যায়।
মালয়েশিয়ার ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলনের প্রধান আহমদ ফারুক মুসাও বলেছেন: আমেরিকা আসলে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্ররোচনায় শহীদ সোলেইমানিকে হত্যা করেছে।
আহমদ ফারুক মুসা আরও বলেন: শহীদ সোলায়মানিকে কাপুরুষোচিতভাবে হত্যা করার মাধ্যমে আমেরিকার দ্বিমুখি আচরণ ও চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। কারণ একদিকে, তারা আইএসআইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দাবি করেছিল, অন্যদিকে, তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একমাত্র যে বীর দাঁড়িয়েছিল তাকে হত্যা করেছে।
মালয়েশিয়ার ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলনের প্রধান আরও বলেন: এটি ছিল সম্পূর্ণ বে-আইনি একটি কাজ এবং আন্তর্জাতিক আইনেরও পরিপন্থী। কাসেম সোলায়মানিকে হত্যার ফলে এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। অপরদিকে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সহায়তায় এ অঞ্চলে আজ পর্যন্ত অস্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে।
মালয়েশিয়ার আমানা পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান রাজা কামাল বাহরাইন বলেছেন: সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে যুদ্ধক্ষেত্রে ইরানি উচ্চ পদস্থ জেনারেল শহীদ সোলায়মানির ভূমিকা আন্তর্জাতিক কৌশলগত দিক থেকে ছিল অসম্ভব দূরদর্শি ও অনন্য সাধারণ। তিনি আরও বলেন: এমনকি শত্রুরা এবং বিদ্বেষীরাও শহীদ সোলায়মানির এই বিশেষ ভূমিকা এবং বিশেষ অবস্থানের কথা বারবার স্বীকার করেছে।
রাজা কামাল বাহরাইন আরও বলেছেন: আইএসআইএসকে ধ্বংস করার পাশাপাশি প্রতিরোধ ফ্রন্টের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হিসাবে ইরাকের অনিবার্য পতন রোধ করার মতো একটি পদক্ষেপও শহীদ সোলায়মানির রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার আমানা পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান আরও বলেন: সন্ত্রাসবাদী চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ সোলায়মানির সক্রিয় ও কার্যকর উপস্থিতি বিশ্বে তার চরিত্রকে বীর এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীকে পরিনত করেছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাজ কাসেম সোলায়মানি, ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের কমান্ডার, ৩ জানুয়ারী, ২০২০ তারিখে, ইরাকি কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে সে দেশ ভ্রমণে যান। ওই সফরে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে আমেরিকার আগ্রাসী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর বিমান হামলায় তিনি শহীদ হন। ইরাকি পপুলার মোবিলাইজেশন বা 'আল-হাশদ আল-শাবি, ভাইস-চেয়ারম্যান আবু মাহদি আল-মুহান্দিসসহ তাঁর আরও ৮ জন সঙ্গী শহীদ হন।#
342/