ইতমার বেনগাভিরসহ নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভার কোনো কোনো সদস্য যখন হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ-বিরতি সমঝোতার কঠোর বিরোধিতা করেছে ও এমনকি ইসরাইলের ঘরোয়া নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী বেনগাভির এরিমধ্যে পদত্যাগও করেছেন তখন ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিঅন সায়ার স্বীকার করেছেন যে এই যুদ্ধের মাধ্যমে তারা কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেননি এবং বাধ্য হয়েই এই সমঝোতা যেতে হয়েছে।
পার্সটুডের রিপোর্ট অনুযায়ী সিএনএন-এর বিশ্লেষক মাইক ক্র্যোভার লিখেছেন, গাজায় যুদ্ধ-বিরতির সমঝোতা ইসরাইল অনুমোদন করেছে এমন ধারণা যেন আপনাদের বোকা না বানায়: ইসরাইলি রাজনীতিতে চলছে এখন গভীর মতবিরোধ যা এই যুদ্ধ-বিরতি অব্যাহত রাখাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
এই বিশ্লেষণে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে নেতানিয়াহু এখন যুদ্ধ-বিরতি মেনে নিলেও গত বছরের অর্থাৎ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ ধরনেরই এক সমঝোতা প্রসঙ্গে বলেছেন, 'আমরা হামাসের কোনো একটি অলীক দাবির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হইনি। আমি এন্টোনি ব্লিংকেনকে (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছি যে আমরা পরিপূর্ণ বিজয়ের প্রায় কাছাকাছি রয়েছি'। আর এ অবস্থান থেকেই বোঝা যায় ইসরাইল এমন সময় বর্তমান যুদ্ধ-বিরতি অনুমোদন করেছে যখন গাজায় ইসরাইলের ঘোষিত একটি লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি দখলদার এই সরকার।
সিএনএন-এর এই বিশ্লেষক বলেছেন, নেতানিয়াহু প্রস্তাবিত যুদ্ধ-বিরতির যে দিকটি সম্পর্কে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তা হল কয়েক ধাপে ইসরাইলি সেনাদের পর্যায়ক্রমিক প্রত্যাহার ও শত শত ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি। এসবই হচ্ছে ঠিক সেইসব শর্ত যা নেতানিয়াহু এখন মেনে নিয়েছেন। হামাস যদিও দুর্বল হয়েছে কিন্তু নেতানিয়াহুর ঘোষিত সেই 'পরিপূর্ণ বিজয়' যার ওয়াদা তিনি বহু আগে দিয়েছিলেন তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। আর এ অবস্থায় হঠাৎ করে ইসরাইলের এই পিছু হটার ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে নেতানিয়াহুর জোট-সরকারের উগ্র শরিকরা।
ইতমার বেনগাভিরসহ নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভার কোনো কোনো সদস্য হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ-বিরতি সমঝোতার কঠোর বিরোধিতা করেছে ও এমনকি ইসরাইলের ঘরোয়া নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী বেনগাভির এরিমধ্যে পদত্যাগও করেছেন। বেনগাভির বলেছেন, এই সমঝোতা বিপর্যয়কর। এই সমঝোতা কার্যকর করা হলে নেতানিয়াহুর জোট-সরকার থেকে বেনগাভির-এর দল 'জিয়ুশ পাওয়ার' বা 'ইহুদি-শক্তি' বেরিয়ে যাবে। অবশ্য এতেই নেতানিয়াহু সরকারের পতন ঘটবে না।
কিন্তু ইসরাইলি অর্থমন্ত্রী স্মোতরিচও যদি নেতানিয়াহুর জোট সরকার থেকে সরে আসে তাহলে এই সরকারের পতন ঘটতে পারে। উগ্র জাতীয়তাবাদী এই নেতা দেখতে চান যে যুদ্ধ-বিরতির এই সমঝোতার ফলে গাজায় স্থায়ী শান্তি যেন ফিরে না আসে। ৪২ দিনের যুদ্ধ-বিরতি শেষ হলে ও হামাসের হাত থেকে ৩৩ জন ইসরাইলি বন্দি মুক্তি পাওয়ার পরই ইসরাইল যেন আবারও যুদ্ধ শুরু করে- এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান স্মোতরিচ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলে থাকা ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র প্রতিরোধকামী ইসলামী রাজনৈতিক দল হামাস এবং তাদের মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের অন্তত এক হাজার যোদ্ধা। তাদের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়; সেই সঙ্গে ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা। আকস্মিক এই হামলার পর ওইদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ অভিযানে গত ১৫ মাসে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রায় ৬০ শতাংশই নারী ও শিশু। এক পর্যায়ে কিছু ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেয় হামাস ও বিনিময়ে ইসরাইলও বহু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল #
342/