‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
মঙ্গলবার

৩০ নভেম্বর ২০১০

৮:৩০:০০ PM
215281

মোবাহেলা; মহানবী (স.) এর আহলে বাইত (আ.) এর মহত্ত্ব প্রমাণের অন্যতম দলিল (১)

মোবাহেলা’র আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ / মোবাহেলার ঘটনার বিবরণ / নাজরানের শীর্ষস্থানীয় পাদ্রীর উদ্দেশ্যে মহানবী (স.) এর চিঠি / নাজরানের খ্রিষ্টানদের প্রতিক্রিয়া / মোবাহেলার আয়াত / মোবাহেলা সম্পর্কে নাজরানের ব্যক্তিত্বদের দৃষ্টিভঙ্গী / মোবাহেলার স্থানে কি ঘটেছিল / মোবাহেলার পরিণতি / মোবাহেলা; মহানবী (স.) এর দাওয়াতের সত্যতার দলিল স্বরূপ / আহলে বাইত (আ.) এর মাহাত্ত্ব প্রমাণের অন্যতম দলিল / আহলে বাইত (আ.) এর শানে দু’টি রেওয়ায়েত /

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা আবনার রিপোর্ট: জিলহজ্ব মাসের ২৪ তারিখ; এমন একদিন যেদিন নাজরানের খ্রিষ্টানরা হযরত মুহাম্মাদ (স.) কর্তৃক উপস্থাপিত দলিল না মেনে মোবাহেলায় সম্মতি দেয় এবং যেদিন আহলে বাইত (আ.) এর মাহাত্ত্ব ও তাৎপর্য সমগ্র বিশ্ববাসীর সম্মুখে প্রমাণিত হয়।

মোবাহেলার আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ:

মোবাহেলা (بَهل) শব্দ হতে সংগৃহীত হয়েছে, যা কোন কিছুকে মুক্ত করে দেয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মোবাহেলা অর্থ হচ্ছে পরস্পরের প্রতি অভিসম্পাত করা। মোবাহেলা এমন ভাবে অনুষ্ঠিত হয় যে, একদল ব্যক্তি ধর্মগত কোন বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার পর এক স্থানে সমবেত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়ায় রত হয়। অতঃপর তাঁর নিকট মিথ্যাবাদীদেরকে প্রতিপন্ন ও তাদেরকে শাস্তি দানের দাবী জানায়।

মোবাহেলার ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর মোবাহেলা ১০ম হিজরী’র ২৪শে জিলহজ্ব অনুষ্ঠিত হয়। মহানবী (স.) একটি পত্র প্রেরণ মারফত নাজরানের খ্রিষ্টানদেরকে ইসলাম ধর্মের প্রতি আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু নাজরানের অধিবাসীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে আদৌ প্রস্তুত ছিল না, এ কারণে তারা নিজেদের পক্ষ হতে একটি প্রতিনিধি দল মদিনায় প্রেরণ করে।

মহানবী (স.) তাদের সাথে কয়েকদিন আলোচনার পর যখন বুঝতে পারলেন যে, তারা তাদের একগুয়েমীতে অবশিষ্ট থাকবে এবং আদৌ সত্য বিষয়কে মানতে রাজী নয়, তখন মহান আল্লাহর নির্দেশে তাদেরকে ‘মোবাহেলা’র আহ্বান জানালেন। কিন্তু নাজরানের প্রতিনিধি দল মহানবী (স.) কে এবং তাঁর সাথে মোবাহেলায় অংশ নিতে আসা ব্যক্তিত্বদেরকে দেখার পর তারা মোবাহেলা হতে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসলামি শাসন ব্যবস্থার অধিনে নিজেদের ধর্মে অবশিষ্ট থাকার অনুমতি চাইলেন।

ভৌগলিক অবস্থান:

নাজরান অঞ্চলটি ৭০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। যা হেজাজ এবং ইয়েমেনের সীমান্তে অবস্থিত। ইসলামের প্রাথমিক যুগে হেজাজের মধ্যে এটাই ছিল একমাত্র খ্রিষ্টান অধ্যুষিত এলাকা। যে অঞ্চলের লোকজন বিভিন্ন কারণে মূর্তি পূজা হতে বিরত থেকে হযরত ঈসা মাসীহ (আ.) এর ধর্মকে গ্রহণ করেছিলেন।

ইসলামের প্রতি দাওয়াত:

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (স.) নিজেদের রেসালতের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশ ও ভূখণ্ডে পত্র অথবা প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। যাতে এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নিকট একত্ববাদের বাণী পৌঁছে দিতে পারেন। এরই ভিত্তিতে নাজারানের শীর্ষস্থানীয় পাদ্রী ‘আবু হারেসাহ’র নিকটও একটি পত্র প্রেরণ মারফত নাজরানের খ্রিষ্টানদেরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন।

নাজরানের পুরোহিত বরাবর লেখা মহানবী (স.) এর ঐতিহাসিক চিঠি:

মহানবী (স.) এর পক্ষ থেকে নাজরানের শীর্ষস্থানীয় পাদ্রী বরাবর যে চিঠি প্রেরিত হয়েছিল তা নিম্নরূপ:

“ইবরাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুব এর প্রভুর নামে,  (এ পত্র) আল্লাহর নবী মুহাম্মাদে’র পক্ষ থেকে নাজরানের শীর্ষস্থানীয় পাদ্রীর প্রতি। ইবরাহিম, ইসহাক ও ইবরাহিমের প্রভুর প্রশংসা করে আপনাদেরকে বান্দাদের উপাসনা হইতে আল্লাহর উপাসনার প্রতি আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনাদেরকে এই মর্মে আহ্বান জানাচ্ছি যে, আল্লাহর বান্দাদের অধীন হতে মুক্ত হয়ে মহান আল্লাহর অধীনে আসুন। যদি আমার এ আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনারা ইসলামি হুকুমতকে কর প্রদানে বাধ্য থাকবেন (যাতে এ করের বিনিময়ে আপনাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়)। অন্যথায় আপনাদের প্রতি আমি সতর্কবাণী উচ্চারণ করছি।

নাজরানের খ্রিষ্টানদের প্রতিক্রিয়া:

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর পত্র বহনকারী প্রতিনিধি দলটি উক্ত পত্রটি নাজরানের শীর্ষস্থানীয় পাদ্রীকে প্রদান করলে তিনি একটি কমিটি গঠন করে তাদের সাথে পরামর্শ শুরু করেন। তাদের মধ্যে একজন –যিনি অন্যদের তুলনায় ছিলে অধিক বুদ্ধিমান- বললো: আমরা আমাদের পূর্ববর্তীদের হতে বহুবার শুনেছি যে, নবুয়্যতী ধারা হযরত ইসহাক (আ.) এর বংশ হতে হযরত ইসমাঈলের বংশধারায় স্থানান্তরিত হবে। আর এটা অসম্ভব নয় যে মুহাম্মাদ –যিনি হযরত ইসমাঈল (আ.) এর সন্তান-ই হচ্ছেন সেই নবী।

অতএব, উক্ত পরামর্শ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হল যে, নাজরান বাসীদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল মদিনায় যেয়ে মুহাম্মাদ (স.) এর সাথে নিকট হতে সাক্ষাত করে তার নবুয়্যতের স্বপক্ষে দলিলাদি পর্যালোচনা করবে।

নাজরানের প্রতিনিধি দলের সাথে হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর কথোপকথন:

মদিনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনায় আল্লাহর রাসূল (স.) নাজরানের প্রতিনিধি দলকে একত্ববাদের উপাসনার প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু তার নিজেদের দাবীর উপর অনঢ় থেকে পিতা ব্যতীত হযরত ঈসা মসীহ (আ.) এর জন্মগ্রহণের বিষয়টিকে হযরত ঈসা (আ.) এর প্রভু হওয়ার স্বপক্ষে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে।

এমন সময় ওহীর ফেরেশতা হযরত জীবরাঈল (আ.) অবতীর্ণ হয়ে মহানবী (স.) এর নিকট এ বাণী পৌঁছালেন যে, ‘ নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসা’র দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মত, তাকে মহান আল্লাহ্ মাটি হতে সৃষ্টি করেছিলেন...’