‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র :
সোমবার

২১ এপ্রিল ২০১৪

২:০৮:৫৩ AM
603759

জগতের আলো ফাতিমা জাহরা (সা.আ.)'র অলৌকিক শ্রেষ্ঠত্ব

১৪৪৩ চন্দ্র বছর আগে এই দিনে (বিশে জমাদিউসসানি) জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী ও বেহেশতি নারীকুলের নেত্রী তথা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা জাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)।

 বার্তা সংস্থা আবনা : ১৪৪৩ চন্দ্র বছর আগে এই দিনে (বিশে জমাদিউসসানি) জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী ও বেহেশতি নারীকুলের নেত্রী তথা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা জাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা)। 
নারী ও মা দিবস হিসেবে আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে এই পবিত্র দিবস।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পুত্র সন্তানগণ শৈশবেই ইন্তিকাল করায় মক্কার কাফিররা যখন মহানবী (সা.)-কে আবতার বা নির্বংশ বলে বিদ্রূপ করতো তখন মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেন হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.)। পবিত্র কুরআনে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে 'কাওসার' হিসেবে যার অর্থ মহত্ত্ব আর নেয়ামতের চির-প্রবহমান ঝর্ণা। কন্যা সন্তান যে পুরুষের বংশধর এবং বরকত, প্রাচুর্য ও সম্মানের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে ফাতিমা (সা.)'র মাধ্যমে আল্লাহ তা মানবজাতিকে দেখিয়ে দিয়েছেন। এর আগে জাহেলি যুগে নারীর তেমন কোনো মর্যাদা ছিল না। আরবদের অনেকেই কন্যা সন্তান জন্ম নিলে রাগে-দুঃখে তাকে অসম্মানের উৎস বলে মনে করে জীবন্ত কবর দিত।
ফাতিমা জাহরা (সা. আ.)'র 'ফাতিমা' শব্দের অর্থ পাপ বা মন্দের দহনকারী, আর 'জাহরা' শব্দের অর্থ আলোকোজ্জ্বল। বলা হয় তিনি বিচার দিবসে বিশ্বনবী (সা.) ও তার পবিত্র বংশ বা আহলে বাইতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পাপী উম্মতের মুক্তির জন্য শাফায়াত বা সুপারিশ করবেন।
খোদাভীরুতা, আত্মত্যাগ, বাগ্মিতা ও সাহিত্য-প্রতিভাসহ সমস্ত মানবীয় মহৎ গুণে পূর্ণতার অধিকারী এই মহীয়সী নারীর আলোকোজ্জ্বল অস্তিত্ব কেবল নারী জাতি নয় গোটা মানব জাতির জন্যই চিরন্তন গৌরবের উৎস।
ফাতিমা জাহরা (সা. আ.)-কে দেখলে বিশ্বনবী (সা.) বসা অবস্থায় থাকলে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে সালাম করতেন। তিনি তাঁর বংশধারা রক্ষাকারী একমাত্র এই কন্যার মর্যাদা প্রসঙ্গে বলেছেন, যা ফাতিমাকে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয় এবং যা আমাকে কষ্ট দেয় তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়। বিশ্বনবী (সা.)'র বিপদ ও দুঃখ বেদনায় মাতৃসুলভ সেবার জন্য ফাতিমা (সা.আ.)-কে বলা হত উম্মে আবিহা বা নিজ পিতার মাতা।
ফাতিমা(সা.আ.)'র পর বিশ্বের তিনজন শ্রেষ্ঠ নারী হলেন তাঁরই মা হযরত খাদিজা (সা.আ.), হযরত মারিয়াম (সা. আ.) ও ফেরাউনের স্ত্রী তথা মুসা নবী (আ.)'র পালক-মাতা বিবি আসিয়া (সা. আ.)। এই তিন মহীয়সী নারীও ফাতিমা (সা.আ.)'র জন্য গর্ব অনুভব করতেন।
হযরত খাদিজা (সা. আ.) নিজের গর্ভে থাকাকালে কন্যা ফাতিমা (সা. আ.)'র সঙ্গে কথা বলেছেন বলে বর্ণনা রয়েছে।
জগত-বিখ্যাত ইমাম হযরত হাসান ও হুসাইন (আ.) এবং মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদী (আ.)সহ আহলে বাইতের পবিত্র ধারার নয় জন ইমাম ছিলেন তাঁরই বংশধর। এই নয় জন ইমামের দৃষ্টিতে ফাতিমা জাহরা (সা. আ.) ছিলেন তাঁদেরও আদর্শ। এই মহান ইমামগণই প্রকৃত ইসলাম বা মুহাম্মাদী ইসলামকে সংরক্ষণ করেছেন মানবজাতির জন্য।
আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র গৌরবময় সংগ্রামী মিশনও হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.)'র আত্মত্যাগের কাছে চির-ঋণী।
আর এইসব বর্ণনা থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর উচ্চ মর্যাদাও ফুটে উঠছে।
হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.)'র নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ মিশরের আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয়।
হযরত ফাতিমা (সা. আ.)-'র নুরানি ও আধ্যাত্মিক (আলোকিত অবয়ব) উপস্থিতি দেখেছিলেন এখন থেকে প্রায় ৯৭ বছর আগে পর্তুগালের ফাতিমা শহরের তিন শিশু। বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যায়। পর্তুগালের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনার জন্য দেখুন রেডিও তেহরানের "১৯১৭ সালে পর্তুগালে মা মেরি, না ফাতিমা (সা.) এসেছিলেন?"শীর্ষক সংবাদ।
ফাতিমা জাহার (সা.আ.) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন বিশ্বনবী (সা.)'র চিরবিদায়ের মাত্র ৭৫ দিন পর। রাসূল (সা.)'র বিয়োগ-ব্যথায় অত্যন্ত ব্যথিত নবী-নন্দিনীকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন ওহীর ফেরেশতা হযরত জিবরাইল (আ.)। মাসহাফই ফাতিমা' নামে খ্যাত গ্রন্থটির সমস্ত তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে জিবরাইল ফেরেশতার সঙ্গে ফাতিমা (সা. আ.)'র কথোপকথনের মাধ্যমে যা লিখে গেছেন হযরত আলী (আ.)।
ফাতিমা সিদ্দিকা (সা. আ.) ঐশী পন্থায় অনেক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তিনি নিজের মৃত্যু কবে হবে এবং তাঁর দুই প্রিয় সন্তান হাসান ও হুসাইন (আ.) কিভাবে মারা যাবেন সেই তথ্যসহ ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অনেক খবর রাখতেন। হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন তিনি। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত ফাতিমা (সা.আ.)'র কাছ থেকে।
ফাদাক ও মানজিল শীর্ষক তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে। বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ আলী, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদেরকে মানুষের জন্য হুজ্জাত বা দলিল করেছেন এবং তাঁরা হল জ্ঞানের দরজা।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আজ পালিত হচ্ছে নারী ও মা দিবস। ইরানে পালিত হচ্ছে নারী সপ্তাহ। আলোচনা-সভা, কবিতা পাঠ, মিষ্টি বিতরণ এবং বিয়ের অনুষ্ঠান এই দিনের বিশেষ কিছু কর্মসূচি। উল্লেখ্য, এই দিনটি ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (র.)'রও জন্ম বার্ষিকী। তিনিও ছিলেন বিশ্বনবী (সা.) তথা হযরত ফাতিমা (সা. আ.)'র বংশধর।
গোটা মানব জাতির গর্ব ও বিশেষ করে নারী জাতির উচ্চতর সম্মান ও চিরন্তন মুক্তির প্রতীক ফাতিমা জাহার (সা.আ.)'র জন্মদিন উপলক্ষে রেডিও তেহরানের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাচ্ছি শুভেচ্ছা এবং এই মহীয়সী নারীর ওপর অশেষ সালাম ও দরুদ।

সূত্র : আইআরআইবি