‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Daily Jugantor
শুক্রবার

২৫ জুলাই ২০১৪

৩:৩৮:১৯ AM
626545

গাজায় এবার জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রে হামলা

এবার জাতিসংঘের জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রে হামলা চালালো ইসরাইল। বৃহস্পতিবার ইসরাইলি সেনাদের বর্বর এ হামলায় ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় ২০০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

আবনা : এবার জাতিসংঘের জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রে হামলা চালালো ইসরাইল। বৃহস্পতিবার ইসরাইলি সেনাদের বর্বর এ হামলায় ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় ২০০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় ইসরাইলি হামলার স্বাধীন তদন্ত করবে সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে সংস্থাটির মানবাধিকার কাউন্সিলে ইসরাইলের ‘যুদ্ধাপরাধ’ তদন্ত বিষয়ক একটি খসড়া প্রস্তাবে ২৯টি দেশ স্বাধীন তদন্তের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। যুদ্ধবিরতি ইস্যু নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য সফরে আছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। যদিও মুন ও কেরির যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। এতে গত ১৭ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৭শ’। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার ফিলিস্তিনি। আল মেজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের চেয়ে শিশুরাই বেশি নিহত হয়েছে। আল-জাজিরা, বিবিসি ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এসব তথ্য দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার গাজান সিটির বেইত হানুনে জাতিসংঘের একটি স্কুলে হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। যেখানে গাজা থেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে আসা অসহায় ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইসরাইলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ওই স্কুলগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। গাজার আল-জাজিরা প্রতিনিধি নিকোল জোহানস্টন জানিয়েছেন, বেইত হানুনে জাতিসংঘের স্কুলটিকে বৃহস্পতিবারই জরুরিভিত্তিতে আশ্রয় কেন্দ্রে রূপ দেয়া হয়েছিল। সেখানে ইসরাইলি সেনাদের বোমা হামলায় ২০ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হয়েছেন। গাজায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান রবার্ট টার্নার বলেন, ইসরাইল এ হামলার আগে কোনো সতর্ক বার্তাও দেয়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ইসরাইলি ট্যাংকের গোলার আঘাতে ১৬ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ছয় সদস্য রয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। এভাবে পরবর্তী আরও হামলায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
স্বাধীন তদন্ত বিষয়ে ভোটাভুটি : গাজায় ইসরাইলি হামলার স্বাধীন তদন্ত শুরু করতে বুধবার ভোটগ্রহণ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান নাভি পিল্লাই কাউন্সিলের এক জরুরি বৈঠকে গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে এমন সতর্ক করার কয়েক ঘণ্টা পর জেনেভায় এই ভোটগ্রহণ করা হয়। ফিলিস্তিনের আহ্বানে একটি খসড়া প্রস্তাবের আওতায় কাউন্সিলের ৪৭ সদস্য এই ভোটে অংশ নেন। ভোটাভুটিতে পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় ছিল জাতিসংঘ। ২৯টি দেশ ভোট দিয়েছে স্বাধীন তদন্তের পক্ষে। ১৭টি দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল, যার বেশিরভাগই ইউরোপীয় ইউনিয়নের। স্বাধীন তদন্তের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে স্বাধীন তদন্তের সিদ্ধান্তকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছে।
হামাস নেতা খালেদ মেশাল বলেছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে তার যোদ্ধারা এগিয়ে আছে। গাজায় বসবাসকারী ১৮ লাখ ফিলিস্তিনির ওপর থেকে ইসরাইলকে তাদের আরোপিত প্রতিবন্ধকতা শিথিল করতে হবে এমন শর্ত উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তিনি মানবিক কারণে যুদ্ধবিরতিতে সমর্থন জানিয়েছেন।
আল মেজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গাজায় ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের চেয়ে শিশুরাই বেশি নিহত হয়েছে। ওই পরিসংখ্যানে ১৩২ শিশুর বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় নিহত শিশুদের মধ্যে একই পরিবারের ১৮ জন শিশু নিহত হওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে ২০ জুলাই। তাদের মধ্যে একজন ছয় মাস বয়সী শিশু এবং দুজন দুই বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। পরদিন ২১ জুলাই অপর একটি হামলায় একই পরিবারের পাঁচ শিশু নিহত হয়েছে।
যেভাবে ইসরাইলি হামলার শুরু : ইসরাইলি তিন কিশোরকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৮ জুলাই থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। হামাসই ওই ঘটনা ঘটায় বলে দাবি করে ইসরাইল। তবে হামাস তা অস্বীকার করে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামে এ হামলা শুরু করে ইসরাইল। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বরে গাজায় অভিযান চালায় ইসরাইল। তখন ৮ দিনের মাথায় মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের শুরু। এরপর থেকে নিয়মিত রক্ত ঝরলেও আজও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।#