‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
শনিবার

৯ আগস্ট ২০১৪

১:০৫:৫৬ AM
629836

যাকযাকির প্রচেষ্টায় শিয়া মাযহাব গ্রহণ করেছেন নাইজেরিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষ

হুজ্জাতুল ইসলাম ড. রাফিয়ী বলেছেন : হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন চক্রান্তের বিপরীতে ইমামগণ (আ.)-এর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল বিভিন্ন পথ অবলম্বনের মাধ্যমে শিয়া মাযহাবকে রক্ষা করা; কখনো সমঝোতার মাধ্যমে আবার কখনও তাকিয়্যাহ’র মাধ্যমে এ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত এক রেওয়ায়েতে কিছু কিছু শিয়া কর্তৃক তাকিয়্যাহ’র বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করা এবং বিশ্বস্ততা রক্ষা না করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।

আহলে বাইত বার্তা সংস্থা (আবনা) : বিশ্ব কুদস দিবসে নাইজেরিয়ায় ৩৩ শহীদের স্মরণে বিশেষ শোক অনুষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার (৭ই আগস্ট) হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.)-এর মাজার পরিচালনা পরিষদ, হাওযা ইলমিয়া কোমে’র আন্তর্জাতিক বিভাগ, আল-মুস্তাফা (স.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার (মাজমা) উদ্যোগে কোমের ঐতিহাসিক ‘আযাম’ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. নাসের রাফিয়ী বলেন : নাইজেরিয়ায় ফিলিস্তিন ও গাজার শহীদদের সমর্থনে রাস্তায় নামা মুসলমানদের মধ্যে ৩৩ জন নির্যাতিত অবস্থায় শাহাদাতের মাধ্যমে নিজেদের রক্ত দ্বারা ইসলামের বৃক্ষকে সেঁচ দান করেছেন।
আল-মুস্তাফা (স.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ক উচ্চতর পরিষদের এ সদস্য বলেন : শহীদদের মাঝে নাইজেরিয়ার বিশিষ্ট আলেম ‘হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন শাইখ ইব্রাহিম যাকযাকি’র –নাইজেরিয়ায় শিয়া সংস্কৃতির প্রসারের ক্ষেত্রে যার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে- ৩ পুত্র শহীদ হয়েছেন।
তিনি তার বক্তৃতার প্রথম অংশে বলেন : মহানবি (স.) এর ওফাতের পর ৭ম হিজরি পর্যন্ত শিয়া মাযহাবের বিরোধিতায় কোমর বেধেছিল বনি উমাইয়া ও বনি আব্বাস। সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতাই ছিল এ মাযহাবটির। পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে আজ এ মাযহাবটি হত প্রথম।
শিয়াদের দৃঢ় ও অবশিষ্ট থাকার রহস্যের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন : শিয়াদের অবশিষ্টতার প্রধান কারণ হচ্ছে ইমামগণ (আলাইহিমুস সালাম)-এর ন্যায় ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি; যাদের মত ব্যক্তিত্ব অন্য কোন মাযহাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। শত্রুরাও যাদের প্রশংসা করেছে এবং যাদের সম্পর্কে আয়াতে তাতহির অবতীর্ণ হয়েছে, যারা মাসুম ও নিষ্পাপ।
হাওযা ইলমিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট এ শিক্ষক বলেন : আয়াতুল্লাহ খুয়ী তার রেজাল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘আবু হানিফা তার এক গ্রন্থে লিখেছেন : যদি ইমাম সাদিক (আ.) না থাকতেন তবে জনগণ হজ্বের মাসআল-মাসায়েল সম্পর্কে জানতে পারতো না’। এছাড়া ইমাম সাদিক (আ.) এর মহত্ব ও মহানুভবতার বিষয়ে ইসলামি সকল মাযহাবেরই ঐকমত্য রয়েছে।
যদি বর্তমানে শিয়াদের উপর থেকে বিরোধিতার হাত গুটিয়ে নেয়া হয় এবং স্বাধীনভাবে শিয়াদেরকে তাদের মাযহাবের প্রসার ঘটাতে দেয়া হয় তবে মহান আল্লাহই জানেন যে, বহু সংখ্যক লোক শিয়া মাযহাব গ্রহণ করবেন। শিয়াদের টিকে থাকার দ্বিতীয় কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন : নাহজুল বালাগাহ, সাহিফায়ে সাজ্জাদিয়াসহ নিষ্পাপ ইমামগণ (আ.) থেকে বর্ণিত অন্যান্য হাদিসসমূহের বিদ্যমান হওয়া; যার নজীর অপর কোন মাযহাবেই মেলে না। শিয়া মাযহাবের শিক্ষা বুদ্ধিবৃত্তি ভিত্তিক ও সুগভীর। এমনকি প্রখ্যাত (সুন্নি) আলেম ‘ইবনে আবিল হাদিদ’ বলেন, আমি নাহজুল বালাগাহ’র ২২১ নং খোতবাটি হাজার বার পড়েছি। মুহাম্মাদ আবদুহ এ কথাটি অকপটে স্বীকার করেছেন যে, নাহজুল বালাগাহ’র একটি বাক্য আমাকে পরিত্রাণ দিয়েছে এবং এর কারণেই আমি নাহজুল বালাগাহ’র ব্যাখ্যা লেখার সিদ্ধান্ত নেই।
হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ী বলেন : শিয়া মাযহাবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সংশয়ের যৌক্তিক জবাব ও শিয়া মাযহাবের শিক্ষা প্রসার এ মাযহাবের অবশিষ্ট থাকার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, সুন্নি মাযহাবের এক আলেম কর্তৃক শিয়া মাযহাবকে অবজ্ঞা করে লেখা এক গ্রন্থের জবাবে আল্লামা তেহরানি শিয়া আলেমদের লেখা গ্রন্থসমূহের বিষয়ে ‘আয-যারিয়া’ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এছাড়া উলুমে ইসলামি তথা বিভিন্ন ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শিয়া আলেমদের ভূমিকার বিষয়ে সাইয়্যেদ হাসান সাদর ‘তা’সিসুশ শিয়া’ ও সাইয়্যেদ মুহসিন আমিন ‘আইয়ানুশ শিয়া’ গ্রন্থদ্বয় রচনা করেন।
শিয়া মাযহাবের অবশিষ্ট থাকার চতুর্থ কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে ড. রাফিয়ী বলেন : হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন চক্রান্তের বিপরীতে ইমামগণ (আ.)-এর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল বিভিন্ন পথ অবলম্বনের মাধ্যমে শিয়া মাযহাবকে রক্ষা করা; কখনো সমঝোতার মাধ্যমে আবার কখনও তাকিয়্যাহ’র মাধ্যমে এ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত এক রেওয়ায়েতে কিছু কিছু শিয়া কর্তৃক তাকিয়্যাহ’র বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করা এবং বিশ্বস্ততা রক্ষা না করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
আল-মুস্তাফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ক উচ্চতর বোর্ডের এ সদস্য বলেন : ইমামগণ (আ.) নিজেদের সাহাবী ও সাথীদেরকে অতিরঞ্জনমূলক সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতেন। তিনি বলেন, এক রেওয়ায়েতে ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : তিনটি দল আমাদের ক্ষতি করেছে; যারা আমাদের বিষয়ে অতিরঞ্জন (গুলু) করেছে, যারা আমাদের বিষয়কে অবজ্ঞা ও অবহেলা করেছে এবং যারা শত্রুদের মন্দ দিককে তুলে ধরে তাদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছে।
পঞ্চম কারণ হিসেবে তিনি মাহদাভিয়্যাত তথা বিদ্যমান ইমামের প্রতি শিয়াদের আকিদা পোষণের কথা উল্লেখ করেন।
বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে তিনি নাইজেরিয়ায় বিশ্ব কুদস দিবসে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার উপর আলোকপাত করে বলেন : নাইজেরিয়ায় বিশ্ব কুদস দিবসে শাইখ ইব্রাহিম যাকযাকি’র ৩ পুত্রসহ ৩৩ ব্যক্তি সরকারি বাহিনীর হামলায় শহীদ হয়েছেন।
তিনি হুজ্জাতুল ইসলাম শাইখ যাকযাকির বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন : শাইখ ইব্রাহিম যাকযাকির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তার একনিষ্ঠতা। যারা তাকে কাছ থেকে দেখেছেন তারা শাইখ যাকযাকিকে অত্যন্ত তাকওয়াবান ও মু’মিন ব্যক্তি বলে পরিচয় করেছেন। তিনি মহান আল্লাহর জন্য কথা বলেন। আর তাই যখন তিন সন্তানের শাহাদাতের সংবাদ তাকে দেওয়া হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন যে, আবা আব্দিল্লাহ (হুসাইন আ.)-এর উপর আরোপিত মুসিবতের সামনে এটা অতি নগন্য।
তিনি বলেন : শাইখ যাকযাকি খ্রিষ্টান ও সুন্নিসহ অন্যান্য অমুসলিম ফের্কাহ’র জনগণকেও সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন। এক কথায় শিয়া মুসলমানরা ছাড়াও সমাজের অন্যান্য মাযহাব ও ধর্মের লোক তার শরণাপন্ন হয়।
তিনি বলেন : কুদস দিবসে ৩ পুত্রের শাহাদাতের ঘটনায় শাইখ যাকযাকি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ও অনুত্তেজিত বক্তব্য রাখার মাধ্যমে নাইজেরিয়ায় পূনরায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পথ রুদ্ধ করেছেন। আর এ আচরণই হচ্ছে নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিয়া মাযহাবের প্রসার ও সাফল্যতার মূল কারণ।
উল্লেখ্য, এ অনুষ্ঠানে নাইজেরিয়ার ‘জারিয়া’ ট্রাজেডির বিষয়ে প্রকাশিত মাজমা’র বিশেষ পত্রিকা ‘গাঞ্জিনেহ’ উপস্থিতদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ৮ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এ বিশেষ সংখ্য উপস্থিত ওলামা ও সাধারণ জনগণের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়।#