‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : নিজস্ব প্রতিবেদক
বুধবার

১৯ আগস্ট ২০১৫

১১:৩৪:৫২ PM
706792

সাক্ষাতকার;

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ইরাক জেনারেল সোলায়মানীর কাছে ঋণী : আম্মার হাকিম

সৈয়দ আম্মার হাকিম বলেছেন : এ বিষয়টি কারো অজানা নয় যে, যদি জেনারেল সুলায়মানী এবং তার সহযোগীদের পরামর্শ না থাকত তবে ইরাকের বর্তমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে পর্যায়ে রয়েছে সে পর্যায়ে পৌঁছুত না।

হলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা -বনা- : সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় ইরাক যে সমস্যার সম্মুখীন ছিল সে কথা উল্লেখ করে ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল অব ইরাকের চেয়ারম্যান বলেন : আপনারা সবাই অবগত যে, ইরাক বিগত ১০ বছর যাবত বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের যেমন : আবু মুসয়াব যারকাভির গ্রুপ। তার মৃত্যুর পর আবু উমার বাগদাদী যে গ্রুপের দায়িত্বভার গ্রহণ করে- হামলার শিকার।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সৈয়দ আম্মার হাকিম বলেন, এ সকল সন্ত্রাসী গ্রুপের জন্ম ও পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শুধু শিয়ারাই। কেননা তারা শিয়াদেরকে রাফেজী বলতো। যে কোন নতুন সন্ত্রাসী দলের জন্ম ইরাকে হত আগের গ্রুপগুলোর চেয়ে অধিক সহিংসতা প্রদর্শনের চেষ্টা করতো তারা।

আবনা প্রতিবেদককে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন : ইরাকের সার্বিক পরিস্থিতি এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের বিষয়টি স্বয়ং মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতির পরও উন্নতির মুখ দেখেনি। তারা পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি।

ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল অব ইরাকের চেয়ারম্যান প্রধান মার্কিন সৈন্যদের ইরাক ছাড়ার পর ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন : মার্কিন বাহিনী ইরাক ছাড়ার পর যখন ইরাক নতুন সেনাবাহিনী গঠন শুরু করে, ঠিক এ সময়টিকে আলকায়দা ইরাকে প্রবেশের জন্য বেছে নেয় এবং ইরাকে প্রবেশ করে। অবশ্য কিছু কিছু ইরাকি রাজনীতিবিদদের দূর্বলতাও এর জন্য দায়ী।

তিনি বলেন : সন্ত্রাসী এ গ্রুপটি ইরাক সরকার ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি এবং ‘ইরাক সরকার সুন্নি প্রধান এলাকাগুলোর সমস্যা নিরসনে যত্নবান নয়’ এ শীর্ষক গুজব ছড়িয়ে ইরাকে প্রবেশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ফেলে।

তিনি বলেন : এটা কিভাবে সম্ভব যে, কোন ষড়যন্ত্র ছাড়াই আইএসআইএলের মাত্র ৩০০ সন্ত্রাসীর ভয়ে ৯০০০০ ইরাকি সৈন্য পালিয়ে যাবে? সেটাও আবার সকল সামরিক সরঞ্জাম ফেলে!?

ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল অব ইরাকের চেয়ারম্যান বলেন : যদি আরো সূক্ষ্মভাবে বলতে চাই তাহলে বলতে হয় যে, সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো রাতে ছিল আইএসআইএলের নিয়ন্ত্রণে এবং দিনে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছুদিন পার হতে না হতেই মসুল শহর হাতছাড়া হয়ে যায়। এ বিষয়ক তদন্ত কমিটির রিপোর্টের অপেক্ষায় আমরা রয়েছি, কিন্তু এর পাশাপাশি সামরিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে আমাদের দূর্বলতাগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে।

ইরাকে জিহাদে কিফায়ী সংক্রান্ত ফতওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন : সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশের পর থেকে ইরাকের অবস্থা দিনের পর দিন শোচনীয় রূপ ধারণ করছিল এমন সময় আয়াতুল্লাহ আল-উজমা সৈয়দ আলী সিস্তানির ফতওয়া এবং স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর যা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গঠিত হয়েছিল- সাহসিকতা ও বীরত্বে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করে।

আইএসআইএল বিরোধী জোট সন্ত্রাসী এ গ্রুপের পথরোধ করতে পেরেছে কি না? -এ শীর্ষক প্রশ্নের জবাবে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন হাকিম বলেন : এ জোট সফল হয়নি। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন থেকেই যায় যে, কিভাবে সম্ভব, ৬৪টি দেশ তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও আইএসআইএলের মত ক্ষুদ্র একটি সন্ত্রাসী বাহিনীকে রুখতে পারেনি?!

সৈয়দ আম্মার হাকিমের সংযোজন : তালেবান ও আলকায়দার মত জঙ্গি গ্রুপের উপস্থিতি থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে তা থেকে বলা যায় যে, মধ্যপ্রাচ্যে আইএসআইএল ছিল ট্রাম কার্ডের ন্যায়। অতএব, কিভাবে তারা তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী এ গ্রুপটিকে নিজের হাতেই ধ্বংস করতে পারে?!

তিনি সিরিয় সন্ত্রাসীদের অর্থ উপার্জনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন : আইএসআইএল এ সকল দেশের সহযোগিতায় বিশ্ব বাজারে তেল বিক্রি করছে। কিভাবে সম্ভব যে, কোনরূপ সহযোগিতা ছাড়াই বিশ্ব বাজারে এত সহজে তেল বিক্রি করবে আইএসআইএলের মত সন্ত্রাসী দল?!

তিনি বলেন : জোটের উচিত যেভাবে আমরা চাই সেভাবে কাজ করা, তাদের মন যেমন চায় তেমনভাবে নয়।

ইরাকের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাগদাদের প্রতি তেহরানের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন : নিঃসন্দেহে এ কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের প্রথম সহযোগী ছিল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। মারজাগণের ফতওয়া ও জেনারেল কাসেম সুলায়মানির নেতৃত্বে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সহযোগিতা ইরাকের পরিস্থিতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

এ বিষয়টি কারো অজানা নয় যে, যদি জেনারেল সুলায়মানী এবং তার সহযোগীদের পরামর্শ না থাকত তবে ইরাকের বর্তমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে পর্যায়ে রয়েছে সে পর্যায়ে পৌঁছুত না।

ইয়েমেনের নিরীহ জনগণের উপর স্বৈরাচারী সৌদি আরবের আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে সৈয়দ আম্মার হাকিম বলেন : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘জাতিগুলোই বিজয়ী হবে’।

তার সংযোজন : এ অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় স্বয়ং জনগণই। এর জন্য অবশ্যই রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে। যদি সৌদি আরব ইয়েমেনকে সাহায্য করতে চায় তবে তাদের উচিত, উত্তম ও মানবিক আচরণের মাধ্যমে এ দেশকে সাহায্য করা, আগ্রাসন ও হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে নয়।#