‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : নিজস্ব প্রতিবেদক
রবিবার

২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

১১:৩৩:৪৫ AM
727133

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকায় বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

হলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা –আবনা- : ঢাকাস্থ ইরানি কালচারাল সেন্টারের উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে এ বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত ইরানি কালচারাল কাউন্সেলর জনাব সৈয়দ মুসা হুসাইনি। তিনি আগত অতিথি ও উপস্থিত মু’মিনীন-মু’মিনাতদের প্রতি এ দিবস উপলক্ষে মোবারকবাদ জ্ঞাপনের পর তাদেরকে স্বাগত জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন : ইসলামের আগমনের বহু শতাব্দি পার হয়ে গেলেও এখনো কাঙ্খিত ঐক্য অর্জিত হয়নি। ঐক্য অর্জনের লক্ষ্যে যথেষ্ট চেষ্টাও আমরা করিনা। বহু মুফাসসির, ফকিহ, গবেষক এবং… তৈরী হয়েছে কিন্তু ঐক্য অর্জিত হয়নি।

তিনি বলেন : যদি আমরা নিজেদের জীবনকে মহানবি (স.) এর ২৩ ও ৬৩ বছর জীবনীর সামনে রাখি তাহলে সমাধান খুঁজে পাব। ওহাবিয়্যাত, সালাফিয়্যাত এবং এর মত মতবাদের মাঝে কোন সমাধান নেই।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পরিচালক জনাব মোঃ শামিম আফজাল বলেন : আমরা মুসলমান, আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমরা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, আমাদের স্রষ্টা মহান আল্লাহ্।

তিনি বলেন : প্রতিদিন বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মসজিদে ৫ বার জামাতের নামায অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতি নামাযেই সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করা হয়। কিন্তু ক’জন সূরা ফাতিহার অর্থ বোঝে। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, এর ইতিহাস অনেক পুরোনো। জ্ঞানী ব্যক্তি ও জ্ঞানের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে চায় শত্রুরা।

তার সংযোজন : এ ষড়যন্ত্রের বর্তমান বাস্তবায়নকারী একদল নামধারী মুসলিম।

ইরানের শাহেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দাউদি মোকাদ্দাম তার বক্তব্যে বলেন: হকিকত হচ্ছে ইবাদত ও পবিত্র কুরআনকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা।

তিনি বলেন : শত্রুরা আমাদের ধারণার উর্ধ্বে চতুর। তারা অত্যন্ত সুসংগঠিতভাবে নিজেদের লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হয়।

তার সংযোজন : এ ঐক্য অর্জনের লক্ষ্যে আমার পরামর্শ হচ্ছে যার যার অবস্থান থেকে সমাজে ভূমিকা রাখা। আজ পবিত্র এ দিবসে আমরা পরস্পরের সাথে অঙ্গিকারাবদ্ধ হতে পারি যে, ঐক্য অর্জনের লক্ষ্যে আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাব। আর তখনই উপলব্ধি করতে পারবো যে, আমরা মহানবি (স.) এর প্রকৃত অনুসারী।

এ অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ঢাকায় নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মাননীয় রাষ্ট্রদূত জনাব হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন ড. আব্বাস ওয়ায়েজি দেহনাভি তার বক্তব্যে বলেন : মহানবি (স.) এর প্রথম উদ্দেশ্য ছিল মানব সমাজকে মানবতার শিক্ষা প্রদান করা।

ইসলাম আমাদেরকে এ শিক্ষা দেয় যে, যদি তোমার দরজায় কেউ এসে কড়া নাড়ে তাকে খেতে দাও, তাকে জিজ্ঞেস করো না কি তার ধর্ম কি তার জাত। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে সে মানুষ এবং মহান আল্লাহ্ তার মাঝে নিজের রুহ ফুঁকে দিয়েছেন।

তার সংযোজন : দ্বিতীয় বিষয়টি হল, মহানবি (স.) সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে আহবান জানিয়েছেন যে, এসো আমরা আমাদের সবার সাথে মেলে এমন বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেই। আমরা সকলে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখি এবং শুধু তাঁরই ইবাদত করি।

ড. আব্বাস ওয়ায়েজি দেহনাভি বলেন : তৃতীয় পর্যায়ে তিনি (স.) মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়েছেন, পবিত্র কুরআনে এসেছে : ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)।

তিনি বলেন : ইসলাম ধর্মকে আঁকড়ে ধরেই ইমাম খোমেনি (রহ.) ২৫০০ বছরের রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছিলেন। ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর ইসলামি ঐক্যের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

তার সংযোজন : সাধারণ মুসলমানদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও সারাদেশ ব্যাপী এ দিবস উপলক্ষে আনন্দ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এটা সত্যিই আনন্দের বিষয়। আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।

ইরানি রাষ্ট্রদূত বলেন : শেখ মুজিবর রহমান তার জীবদ্দশাতে ইসলামি ফাউন্ডেশন গঠন করেছিলেন। যা বর্তমানে সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন ইসলামি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে চলেছে সারা দেশে। আর এটাই অপর ইসলামি দেশসমূহের সাথে ঐক্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রফে. ড. আব্দুর রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান সমাপনী বক্তব্যে বলেন: মিলাদুন্নবী (স.) এর সমসময়ে ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে, এটা বিশেষ গুরুত্ববহ।

তিনি বলেন : ইরান ও বাংলাদেশ এ দু’টি দেশ শুধু রাজনৈতিক সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা নয়। বরং আমাদের দেশে যারা ইসলাম প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তাদের অধিকাংশই ছিলেন ইরানি।

তার সংযোজন : মুসলিম ঐক্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ববহ। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ না হতে পারি তবে শয়তানি শক্তিগুলো সে স্থান দখল করবে এবং মহান আল্লাহর ইবাদতের পরিবর্তে শয়তানের ইবাদতের প্রথা চালু করবে।

তিনি বলেন : মহানবি (স.) আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। এটা স্বয়ং মহান আল্লাহ্ বলেছেন। পার্থিব ও পরকালীন সফলতার জন্য মুসলমানরা যদি শুধু মহানবি (স.) এর সিরাতকে ফলো করে তবে সেটাই যথেষ্ঠ।

তার সংযোজন : বর্তমানে কাফেররা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, কিন্তু মুসলিম দেশসমূহ ফেতনার আগুনে পুড়ছে। শুধুমাত্র মুসলমানদের মাঝে মতভেদ, দ্বিমত ও বিচ্ছিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তিনি বলেন : মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর জীবনীতে এমন দর্শন লুকায়িত রয়েছে যার মাঝে আমাদের সকল সৌভাগ্য ও সফলতা নিহীত।

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে বিশেষ হামদ ও কবিতাও পরিবেশিত হয়।#