‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : manobkantha
সোমবার

২ মে ২০১৬

৭:২১:০৯ AM
751399

ঢাকায় ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলন

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দু’একজন মানুষ হত্যা করে বাংলাদেশে কোনোদিনও আইএসআইএল'র মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

আবনা ডেস্ক : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দু’একজন মানুষ হত্যা করে বাংলাদেশে কোনোদিনও আইএসআইএল'র মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ যখন শান্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একটি মহলের সহ্য হচ্ছে না। এই অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করছে তারা। হত্যাসহ নানা অরাজকতা সৃষ্টি করে শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির মাধ্যমে সব ধর্মের লোকদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হাতে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জঙ্গিবাদ দমনে সচেতনতা তৈরির জন্য পুলিশের সাম্প্রতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক। এর আগেও আলেম ওলামাসহ বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে পুলিশ।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার পরও এ দেশের মানুষের নতি স্বীকার না করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো কিছু ঘটার সঙ্গে সঙ্গে বলা হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএল করেছে। যত হত্যা সব নাকি আইএসআইএল করেছে। এখন দু’একজন মানুষ হত্যা করে, তাদের আইএসআইএল মতামত এখানে প্রতিষ্ঠিত করবে- কোনোদিনও তা সম্ভব নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ঘটনায় আইএসআইএল'র সংশ্লিষ্টতা পাইনি। তাহলে আইএসআইএল আসে কোথা থেকে? মন্ত্রী বলেন আমাদের এই আলেম-ওলেমারা বসে আছেন, একজনও বলেন না যে তারা আইএসআইএল'র সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা তো একজন আলেম-ওলেমা... একটা মাদরাসা একটা মসজিদে আইএসআইএল'র অস্তিত্বের কথা শুনিনি।
তিনি বলেন, আগেও বলেছি, এখনো বলছি দেশে কোনো আইএসআইএল নেই। আমাদের এখানে কিছু ‘হোমগ্রোন’ জঙ্গি রয়েছে। তারা নানা ধরনের প্রচেষ্টা নানাভাবে চালিয়েছে। এখনো মাঝে মাঝে চালায়। তিনি বলেন, দু’একজন বিপথগামী আইএসআইএল মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, কিন্তু তা হবে না। দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র বানানো সম্ভব নয়। তাদের বলব এ ভ্রান্ত মতবাদ ছেড়ে সঠিক পথে ফিরে আসুন। এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। আমরা সব পেশার ও ধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া একটি মহলের সহ্য হচ্ছে না। তারা আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করছে। হত্যাসহ নানা ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করছে। দেশের শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। ইসলাম কখনো কোনোদিন খুন, হত্যা, লুটতরাজ, সন্ত্রাসে বিশ্বাসী ছিল না। অন্য যে কোনো ধর্মের মানুষও উস্কানি দেয় না। বাংলাদেশে মন্দিরে পূজা হচ্ছে, পাশেই মসজিদে আজান হচ্ছে, নামাজ হচ্ছে। প্যাগোডা কিংবা গির্জাতেও প্রার্থনা চলছে। কেউ কখনো বাধা দেয় না। এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি রয়েছে বলেই সম্ভব। কিন্তু যাদের এই ধর্মীয় সম্প্রীতি পছন্দ হচ্ছে না তারাই হত্যা খুনের মতো নানা ঘটনা ঘটিয়ে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ হত্যা-সহিংসতা পছন্দ করে না। বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা সর্বদা সচেষ্ট রয়েছেন। মানুষ মেরে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থমকে দেয়ার ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়া হবে না।
পঞ্চগড়ের মন্দিরে হামলা চালিয়ে পুরোহিত হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার জঙ্গিরা তাদের ‘ভুল বুঝতে পেরেছে’ দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আগে মানুষ পুড়িয়ে, বাস পুড়িয়ে, শ্রমিক হত্যার একটা প্রচেষ্টা চলছিল। এখন হঠাৎ করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের অগ্রাযাত্রাকে থমকে দেয়ার জন্য এই প্রচেষ্টা। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে তিনি এই ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলন বিভাগীয় এবং পর্যায়ক্রমে জেলা-উপজেলা শহরে আয়োজন করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধে ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, ধর্মীয় উগ্রতা কিংবা জঙ্গিবাদের কথা বলে সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা চলছে। সেখানে জঙ্গিবাদ মোকাবিলার নামে উল্টো সংঘাতময় পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশেও একই প্রয়াস চলছে। কথিত জঙ্গিবাদের নামে, আইএসআইএল'র নামে খুন ও হামলা করা হচ্ছে। এসব নির্মূলে সহযোগিতা করতে কিছু বিদেশি অতিথি মায়াকান্না করছেন। মায়ের চেয়ে যেন মাসির দরদ বেশি। তারা আমাদের দেশে আইএসআইএল প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু তা হতে দেয়া হবে না। কিছু মানুষ ধর্মের নামে নাশকতা-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ইসলামের নামে মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান রয়েছে। ধর্মের শত্রুদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের মদতে ষড়যন্ত্র চলছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ইদানীং বিশ্বে রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত ফায়দা হাসিলের জন্য ধর্মের অপব্যবহার হচ্ছে, যা হিংসা, বিদ্বেষ, বিশৃঙ্খলা ও উগ্রবাদের প্রসার ঘটাচ্ছে। এই উগ্রবাদের কারণে সারা বিশ্ব বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে। আর বিশ্বায়নের আবহে বাংলাদেশের মাটিতেও উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উগ্রবাদের কারণে মনুষ্যত্ববোধ যাতে বিপন্ন না হয়, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতা, উদারতা ও আস্থার পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়- সে বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। দেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে উগ্রপন্থা ও ধর্মীয় গোড়ামির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান সবার প্রতি।
শোলাকিয়া জাতীয় ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ইসলামের নামে অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এদেশের মানুষ সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদ পছন্দ করে না। ইসলাম উদার-শান্তির ধর্ম। জঙ্গিরা ইসলামের বড় শত্রু। আলেমরা জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। সন্ত্রাস, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আলেম সমাজ সোচ্চার রয়েছে। তাই এসব জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে এবং সবাইকে সচেতন করতে কমন ফতোয়া দেয়ার জন্য এক লাখ আলেম-ওলামার স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৭৬ হাজার আলেম-ওলামা স্বাক্ষর করেছেন। স্বাক্ষর সংগ্রহ শেষ হলে জাতীয়ভাবে তার ঘোষণা করা হবে।
খুলনা ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ ইব্রাহীম খলিল রাজভি বলেন, হাজার বছর ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতিতে এদেশের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করছে। সম্প্রতি একটি গোষ্ঠী দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ঢাকা আর্চ বিশপের সিএমপি আর্চ বিশপ পেট্রিক ডি রোজারিও বলেন, সব ধর্মের মানুষ পাপে পতিত। পাপ স্বীকার না করলে পরিত্রাণ মিলবে না। তাই সম্প্রীতি ও শান্তির বাণী প্রচার করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। সর্বোপরি দেশের অগ্রযাত্রায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ইসকন সভাপতি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ বলেন, দেশের অগ্রযাত্রায় যারা ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সবার মাঝে দেশপ্রেম ও সম্প্রীতি ছড়িয়ে দিতে হবে। জঙ্গি দমনে শান্তির বাণী প্রচারের মাধ্যমে পুলিশ যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে।
আইজিপি একেএম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার গোয়েন্দা) শেখ মারুফ হাসান। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তেজগাঁওয়ের মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রাজ্জাক; বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক বড়–য়া, ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ওবাইদুর রহমান খান নদভী, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি ভদন্ত সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরো; রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ, ইসলামি বক্তা মাওলানা আতাউল্লাহ ও গোলাম মাওলা নকশিবান্দি প্রমুখ।#