‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : ABNA
সোমবার

১৮ জুলাই ২০১৬

১:১২:১৪ AM
766479

কাশ্মীর উত্তেজনায় নিহত ৪৫, আহত ৩০০০

বিভিন্ন দেশে দায়েশ সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলা ও সেসব দেশের সৈন্যদের সাথে দায়েশের সংঘর্ষের খবরাখবর নিয়ে বিশ্ব যখন ব্যস্ত, ঠিক তখন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় হতাহত হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ জনগণ।

হলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা –আবনা-: কাশ্মীর উত্তেজনায় ৯ দিনে ৪৫ জন নিহত এবং ৩০০০ ব্যক্তি আহত হয়েছে। প্রকাশিত পত্রিকা জব্দ করার পাশাপাশি নতুন প্রকাশের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ।

নিরাপত্তা বাহিনী গত শনিবার কাশ্মীর টাইমস, গ্রেটার কাশ্মীর, কাশ্মীর ইমেজেস এবং রাইজিং কাশ্মীর নামের কয়েকটি সংবাদপত্র কার্যালয়ে অভিযান চালায়। কয়েকটি পত্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ তাদের কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া সংবাদপত্রের দোকান থেকে পত্রিকার কপি নিয়ে গেছে।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, গতকাল (শনিবার) পুলিশ স্থানীয় পত্রিকা অফিসে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার কপি জব্দ করে। এমনকি আগামীকাল (আজ) সোমবার পর্যন্ত পত্রিকা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং পত্রিকা অফিসের অনেক কর্মীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারি এই পদক্ষেপকে গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরা ও বল প্রয়োগ’উল্লেখ করে এর নিন্দা জানান পত্রিকার সম্পাদকেরা।

ইংরেজি দৈনিক কাশ্মীর রিডার গতকাল রোববার তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, সরকার কাশ্মীরে স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রকাশনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাই প্রতিষ্ঠানটি এই সংকটের মুহূর্তে পাঠকদের তাদের সঙ্গে থাকতে অনুরোধ জানায়।

শ্রীনগরভিত্তিক পত্রিকা রাইজিং কাশ্মীরের সম্পাদক সুজায়াত বুখারি বলেন, সরকারি এক কর্মকর্তা মৌখিকভাবে এ নিষেধাজ্ঞার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের ছাপাখানায় গত শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে অভিযান চালায় পুলিশ।

বুখারি এই নিষেধাজ্ঞাকে প্রেস ইমার্জেন্সিউল্লেখ করে বলেন:২০০৮ এবং ২০১০ সালের সহিংস বিক্ষোভের সময়ও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তখনো কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পত্রিকা প্রকাশ না করতে বলা হলো। সরকার চায় না মানুষ এখানকার পরিস্থিতি জানুক। আমরা অনলাইনে প্রকাশ করব, কিন্তু সেখানেও ইন্টারনেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা।

উপত্যকার সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা গ্রেটার কাশ্মীরের প্রকাশক রশিদ মাকদোমি বলেন, ‘রাত তখন দুইটা। ছাপাখানায় অভিযান চালানো হয়... পুলিশ আমাদের ছাপা বন্ধ করতে বলে আমাদের ছাপার কাজে ব্যবহৃত প্লেট নিয়ে নেয়। উর্দু ভাষায় প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা উজমার এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কপি ছাপানো হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ আমাদের তিনজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে এবং ছাপানো কপিগুলো নিয়ে যায়।তবে সকালে আটক কর্মীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

কেটি প্রেসের মালিক রাজা মহিউদ্দিন বলেন, তাঁর ছাপাখানায়ও অভিযান চালানো হয়েছে। এই ছাপাখানায় প্রায় আটটি পত্রিকা ছাপা হয়। তখন ছাপা হয়ে গেছে, এমন হাজার হাজার কপি ও প্রিন্টিং প্লেট নিয়ে যায় পুলিশ।

লাল চকের হকাররা জানান, পুলিশ তাঁদের পত্রিকা বিলি করতে দেয়নি এবং তাঁদের কাছ থেকে সব কপি নিয়ে যায়।

গতকাল সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা সেন্সরশিপ বন্ধ কর’, ‘আমরা বাক স্বাধীনতা চাই’ এমন বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে শ্রীনগরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এদিকে গত শনিবার রাত থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ। টেলিভিশনে প্রচারিত এ বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে শংকিত যে, নিহত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হলে জনগণের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ আরো ব্যাপক আকার ধারণ করবে।

হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা বুরহান ওয়ানি পুলিশের গুলিতে নিহত হলে এই উত্তেজনা শুরু হয়৷ গত ৮ই জুলাই থেকে নিরাপত্ত বাহিনী ও কাশ্মীরী যোদ্ধাদের মাঝে গোলাগুলির মাধ্যমে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ জনতা কিছু কিছু পুলিশ চেকপয়েন্টের উপর হামলা চালিয়ে তাদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সামরিক ক্যাম্পগুলোকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে। এ অঞ্চলে প্রায় ৫ লক্ষ ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।

Kashmirobserver এর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ নাগাদ কাশ্মীর সংঘর্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ৩ হাজারেরও বেশী লোক আহত হয়েছে।

এ সকল ঘটনায় আহত বেশিরভাগ লোকেরা চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। বলা হচ্ছে, পুলিশের শর্টগানের গুলিতে এ সকল ব্যক্তিরা তাদের দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছে। সংঘর্ষস্থল থেকে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশেরও সুযোগ দিচ্ছে না সরকার। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েব সাইটগুলো নিয়ন্ত্রণ করার কারণে অনলাইনেও প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রেরণ বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ভারত নিরাপত্তা বাহিনী গত সপ্তাহের শুক্রবার জম্মু-কাশমিরের ‘আনান্তাগ’ এলাকার একটি মসজিদে জুমআর নামাযে ‘বোরহান ওয়ানি’র অংশগ্রহণের তথ্য পেয়ে ঐ অঞ্চলকে ঘিরে ফেলে এবং দু’জন সহযোগীসহ ওয়ানিকে হত্যা করে।

ইতিপূর্বে হিজবুল মুজাহিদীনের এ জনপ্রিয় নেতাকে হত্যার জন্য পুলিশ ১৫ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান, পাকিস্তান ও জাতিসংঘসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কাশ্মীরের জনগণের উপর ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও কাশ্মীরে মুসলমানদের উপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবী জানিয়েছে।#শীর্ষনিউজ