‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বৃহস্পতিবার

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

৫:৩৭:৫৭ AM
856900

ইমাম হুসাইনের (আ) সেই চিঠি: সাহায্যের জন্য ৯০ জনের প্রচেষ্টা ও সংঘাত

১৩৭৮ চন্দ্রবছর আগে ৬১ হিজরির ৬ মহররম কারবালার ময়দানে সত্য ও মিথ্যার উভয় শিবিরই সেনা-শক্তি জোরদারে সচেষ্ট হয় নিজ নিজ সমর্থকদের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে।

আবনা ডেস্কঃ ১৩৭৮ চন্দ্রবছর আগে ৬১ হিজরির ৬ মহররম কারবালার ময়দানে সত্য ও মিথ্যার উভয় শিবিরই সেনা-শক্তি জোরদারে সচেষ্ট হয় নিজ নিজ সমর্থকদের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে।
তবে কুফার জনগণ কার্যত ইমাম হুসাইন (আ.)’র কালজয়ী বিপ্লবের বিপক্ষে তথা মিথ্যার পক্ষে ঝুঁকে পড়েছিল। তৎকালীন আরব কবি ফারাজদাকের ভাষায়; তাদের (কুফাবাসীদের বেশিরভাগেরই) অন্তর ছিল ইমামের পক্ষে কিন্তু তাদের তরবারি ছিল ইমামের বিপক্ষে!
ইমামের একনিষ্ঠ সমর্থক ও বৃদ্ধ সঙ্গী হযরত হাবিব বিন মাজাহের আল আসাদি (রা.) এই দিন তাঁর প্রিয় নেতার অনুমতি নিয়ে সাহায্যকারী আনার আশায় রাতের আঁধারে বনি আসাদ গোত্রের কাছে যান। বনি আসাদ গোত্রের অনেকেই সাহায্যের প্রস্তাবে সাড়া দেন এবং তাদের ৯০ জন ইমাম হুসাইন (আ.)'র পক্ষে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন ও ইমাম শিবিরের দিকে রওনা হন।
কিন্তু ওমর সাদের গুপ্তচররা এ খবর সাদের কাছে পাঠালে সে ৪০০ ব্যক্তিকে পাঠায় যাতে ওই ৯০ জন ইমাম শিবিরে যোগ দিতে না পারেন। ফলে তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায় এবং বনি আসাদ গোত্রের অনেকেই শহীদ ও আহত হন। অনেকেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। হাবিব এই ঘটনার কথা ইমামের কাছে তুলে ধরলে তিনি বলেন:

لاحولَولاقوّةَالاّبالله
লা হাওলা ওয়ালা কুউআতা ইল্লাহ বিল্লাহ।
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কারো কোনো শক্তি নেই।
হযরত হাবিব বিন মাজাহের (রা.) ছিলেন বিশ্বনবীর (সা) সাহাবি এবং হযরত আলীর (আ) সঙ্গী ও ইমাম হুসাইন (আ)'র শৈশবের বন্ধু। নবী-পরিবারের প্রতি গভীর ভালবাসার টানে তিনি নিজেকে এই পরিবারের 'গোলাম' বলে ঘোষণা করতে গর্ব অনুভব করতেন। আশুরার দিন তিনি ছিলেন ইমামের ক্ষুদ্র বাহিনীর অন্যতম সেনাপতি।
ষষ্ঠ মহররম থেকে কুফার কামারদের ব্যবসা রমরমা হয়ে ওঠে। রাসূল (সা.)’র কলিজার টুকরা এবং হযরত আলী (আ.) ও ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহার নয়নের আলোর রক্ত ঝরানোর জন্য লোহার তীর, বর্শা ও তলোয়ার কেনার এবং সেগুলোকে ধারালো করে বিষ মাখানোর ধুম পড়ে যায়। কোনো কোনো তীর ছিল তিন শাখা-বিশিষ্ট।
এই দিনে ইয়াজিদের পক্ষে বহু সেনা কারবালায় জড়ো হয়। একই দিনে ইবনে জিয়াদ ওমর সাদের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে লেখা ছিল: আমি সামরিক দিক থেকে তোমাকে সুসজ্জিত করেছি। পদাতিক সেনা থেকে শুরু করে ঘোড়-সওয়ার- সবই তোমাকে দেয়া হয়েছে। তুমি জেনে রাখ, প্রত্যেক দিন ও রাত তোমার তৎপরতা সম্পর্কে আমার কাছে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে (গুপ্তচরদের মাধ্যমে)।
একই দিনে অর্থাৎ ৬১ হিজরির ৬ মহররম ইমাম হুসাইন (আ) তাঁর অন্যতম সৎভাই মুহাম্মাদ আল হানাফিয়্যা ও মদিনায় বিশ্বনবীর (সা) আহলে বাইতের অনুরাগীদের কাছে একটি সংক্ষিপ্ত চিঠি পাঠান।
ওই চিঠিতে তিনি জোর দিয়ে লিখেছেন যে, ‘যারা আমার সঙ্গে যোগ দেবেন (কারবালায়) তারা অবশ্যই শহীদ হবেন, আর যারা যোগ দেবে না, তারা বিজয়ী হবে না।’
এ চিঠি থেকে বোঝা যায় ইমাম জানতেন যে, ইয়াজিদি-শাসনের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবস্থান নেয়ার কারণে তিনি ও তাঁর অনুগত সঙ্গীরা শহীদ হবেন। এ চিঠির দ্বিতীয় বার্তা হল যাদের ঈমান দুর্বল বা নড়বড়ে এবং যারা আমার সঙ্গী হয়েছে দুনিয়ার কিছু পাওয়ার আশায়- তারা এখনই আমার শিবির ছেড়ে চলে যাও। ইমাম এ জন্যই মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশে সফর শুরু করার পর থেকে নানা সময়ে নিজ কাফেলার সঙ্গীদেরকে বলেছেন যে আমি তোমাদের কাছ থেকে পাওয়া আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা বা বাইয়াতের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নিচ্ছি, তোমরা স্বাধীন, ইচ্ছে করলেই কোনো দ্বিধা ছাড়াই আমাকে ত্যাগ করতে পার।
মদিনা থেকে মক্কা হয়ে ইরাক অভিমুখে ইমাম হুসাইন (আ)'র সফরের শুরুর দিকে কয়েক হাজার মুসলমান ইমামের কাফেলার সঙ্গী হয়েছিল। কিন্তু যখন এটা স্পষ্ট হয় যে, ইমামের এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে পার্থিব কোনো স্বার্থ হাসিল করা যাবে না তখন দলে দলে বহু মুসলমান ইমামকে ছেড়ে চলে যায়।
এ চিঠির তৃতীয় বার্তা হল, যারা ইমামকে শহীদ করবে ও তাঁর সন্তানদের এবং পরিবারের নারীদের বন্দি করবে তারা যত বিজয়-উল্লাস বা উৎসবই করুক না কেন তাদের ভাগ্যে বিজয় নেই। যেমনটি ইতিহাসে দেখা গেছে নবী-পরিবারের সদস্য এবং তাঁদের পক্ষের বীর যোদ্ধাদের প্রায় প্রত্যেক ঘাতকই খুবই শিগগিরই কঠোর ও অপমানজনক শাস্তি পেয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। যেমন, ইয়াজিদ বাহিনীর অন্যতম কমান্ডার ওমর সা’দ, শিমার ও কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ও দামেস্কের তথাকথিত খলিফা ইয়াজিদ ইহকালেই কঠোর শাস্তি পেয়েছিল।
এ চিঠির চতুর্থ বার্তা এটাও হতে পারে যে, কারবালার শহীদদের নিষ্পাপ রক্তের বদলা নেয়ার জন্য বিশ্বনবীর (সা) আহলে বাইতের অনুরাগীরা বার বার যেসব গণ-জাগরণ ঘটিয়েছেন তাতে সাফল্যের মাত্রা একই ধরনের ছিল না এবং সেসব কেবল অস্ত্র বা তরবারির জোরেই সংঘটিত হয়নি। অর্থাৎ কেবল অস্ত্র বা তরবারি দিয়ে পূর্ণ বিজয় অর্জন সম্ভব নয়।
এ চিঠির অন্যতম অন্যতম তাৎপর্য এটাও হতে পারে যে, যুগে যুগে যারা ইমাম হুসাইনের (আ) মতই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন তারা হয় শহীদ বা গাজি তথা বিজয়ী হবেন, অন্যদিকে যারা রুখে দাঁড়াবেন না বা আপোষ করবেন তারা হবেন লাঞ্ছিত ও অপমানিত এবং জালিম শক্তিগুলো কখনও প্রকৃত বিজয় অর্জন করতে পারবে না।#