‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : parstoday
শুক্রবার

২৫ মে ২০১৮

৫:৪৪:৩৫ PM
894940

ঈমান আনার কারণে প্রশান্তি অর্জন করেছি: সুইডিশ নওমুসলিম উলফ কার্লসন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুন্দর শিল্পকর্মের প্রতি মানুষের আকর্ষণ প্রাকৃতিক। কখনও কখনও সুন্দর জিনিষের প্রতি আকর্ষণের অনুভূতিই হয়ে ওঠে শিল্পকর্মের উৎস।

আবনা ডেস্কঃ 'নও-মুসলিমদের আত্মকথা'- শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনার এ পর্বে সুইডিশ নও-মুসলিম ' উলফ কার্লসন'-এর মুসলমান হওয়ার কাহিনী এবং ইসলাম সম্পর্কে তাঁর কিছু বক্তব্য ও চিন্তাধারা তুলে ধরা হলো।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুন্দর শিল্পকর্মের প্রতি মানুষের আকর্ষণ প্রাকৃতিক। কখনও কখনও সুন্দর জিনিষের প্রতি আকর্ষণের অনুভূতিই হয়ে ওঠে শিল্পকর্মের উৎস। তাই শিল্প হচ্ছে মানুষের ভিন্ন এক চোখ এবং এই চোখ দিয়ে বিশ্ব জগতের বাস্তবতার এক বিপুল অংশ দেখা যায়। পবিত্র কুরআন প্রাকৃতিক ও অনুভবযোগ্য নানা বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনার আহ্বান জানায় এবং এর মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়গুলো উপলব্ধি করা যায়।
কিন্তু আধুনিক যান্ত্রিকতাময় জীবন মানুষকে প্রায়ই চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে রাখে। বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন: যারা বিশ্বের পরিবর্তনশীল নানা অবস্থা থেকে শিক্ষা নেয় না তারা মানুষের মধ্যে সবচেয়ে অসচেতন।
উলফ কার্লসন সুইডেনের নও-মুসলিম। স্রস্টা ও ধর্মীয় বিষয়ে তার কোনো বিশ্বাস ছিল না। কিন্তু সব সময়ই নিজের ভেতরকার কি যেন নেই তা উপলব্ধি করতেন এবং হারানো সেই জিনিষ বা বিষয় খুঁজে বেড়াতেন। তিনি আশপাশের বিস্ময়কর নানা বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন। কার্লসন এ প্রসঙ্গে বলেছেন:
'স্রষ্টা বা আল্লাহ সম্পর্কে আমার কোনো বিশ্বাস ছিল না। এসব বিষয় ছিল আমার কাছে বিজাতীয় ও অচেনা বিষয়। একদিন এক জঙ্গলময় পার্কে কিছু ছবি তুলছিলাম। আশপাশের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে নানা ভাবনা চিন্তা শুরু করি। মনে হল বিশাল ও বৃহত্তম এক উৎস আমার মালিক এবং সৃষ্টিকূলের মধ্যে আমি তার এক ক্ষুদ্র সৃষ্টি। আমি নিশ্চিত হলাম যে এতসব সৌন্দর্য ও বিস্ময়ের কোনো স্রষ্টা নেই তা হতে পারে না। ফলে আমি আমার স্রষ্টা কে তা নিয়ে গবেষণা শুরু করলাম যাতে আমার অস্তিত্বের বাস্তবতা বুঝতে পারি।'
কার্লসন নিজে ধর্মকর্ম না করলেও তার পরিবার খ্রিস্ট ধর্মের চর্চা করত। এই ধর্ম তার নানা প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারত না। ফলে তিনি অন্যান্য ধর্মের মধ্যে এইসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার জন্য অনুসন্ধান শুরু করেন। কার্লসন এ প্রসঙ্গে বলেছেন: ঠিক কত সময় ধরে সত্যের অনুসন্ধান করেছি তা হুহহু মনে নেই। তবে এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে, খ্রিস্ট ধর্ম আমার চাহিদাগুলোর জবাব দিতে সক্ষম নয়। স্রস্টা ও মানুষের মধ্যে এতসব মধ্যস্থতাকারী রয়েছেন --এমন দাবির প্রতি বিশ্বাস আনতে পারিনি। এ ছাড়া এক ব্যক্তি একদিকে অর্ধেক খোদা ও অর্ধেক মানুষ – এমন দাবিও আমার কাছে খুবই অদ্ভুত ঠেকেছে।'
খ্রিস্ট ধর্মের ব্যাপারে হতাশ সুইডেনের নাগরিক 'উলফ কার্লসন' আরো বলেছেন, 'এ অবস্থায় আমি খ্রিস্ট ধর্ম ছাড়া অন্যান্য ধর্ম নিয়ে গবেষণা শুরু করি। নানা ধর্মের সঙ্গে পরিচিত হলাম। কিন্তু কোনো ধর্মই আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে পারেনি। বরং আমার মধ্যে নতুন নতুন প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে লাগল যতক্ষণ না আমি ইন্টারনেটে একজনকে খুঁজে পেলাম যিনি মুসলমান হয়েছেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস যেন আমার হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলছিল এবং তা ছিল আমার জন্য এক বিশাল বিস্ময়। ইসলাম ও এর শিক্ষাগুলোর ওপর তার এত দখল ও দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে এই ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা করা আমার জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠল।'
পবিত্র কুরআন সৃষ্টি জগতের নানা বিস্ময় ও বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার বা গবেষণার আহ্বান জানায়। 'উলফ কার্লসন'ও সিদ্ধান্ত নিলেন কুরআন নিয়ে গবেষণা করার। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন : 'পবিত্র কুরআন ও এর ব্যাখ্যা বা তাফসির অধ্যয়ন প্রতি দিনই আমার জন্য ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ ও মাধুর্যের উৎস হয়ে উঠছিল। অনুভব করলাম যে আমার অন্তরে জেগে-ওঠা সমস্ত প্রশ্ন ও অস্পষ্ট ধারণাগুলোর জবাব পাওয়া যাবে কুরআনের মধ্যে। ফলে ইসলামের দিকে আরো প্রবলভাবে আকৃষ্ট হচ্ছিলাম। পবিত্র কুরআনে যেসব যুক্তি ও প্রমাণ দেয়া হয়েছে এবং যেসব বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা তাতে রয়েছে সেসব আমার মধ্যে এ বিশ্বাস সৃষ্টি করল যে কোনো মানুষ এমন বই রচনা করতে সক্ষম নন, বরং এসব আল্লাহরই বাণী। ফলে আল্লাহর অস্তিত্ব যে আছে সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত হলাম এবং পুরোপুরি এটাও মেনে নিলাম যে মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। আর এই বিশ্বাসে পৌছার পরই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলাম।'
সুইডেনের নাগরিক উলফ কার্লসন মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর জীবনের এই নতুন পথের কঠোরতা নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 'যখন মুসলমান হতে চাইলাম তখন ভয় আমাকে ঘিরে ধরল। মুসলমানদের সম্পর্কে খুব কম তথ্যই জানতাম। সব সময়ই দ্বিধান্বিত চিত্তে ও ঘৃণার দৃষ্টি নিয়ে ধার্মিকদের দেখতাম। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে আমার অনুভূতি ও চিন্তার অনুসরণ করতে না জানি কি ঘটনা ঘটে! উদ্বিগ্ন ছিলাম ভবিষ্যত নিয়েও।'
কার্লসন এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন: আমি এমন এক সমাজে জীবন যাপন করতাম যেখানে মুসলমানের সংখ্যা খুবই কম বা সেখানে কোনো মুসলমানই ছিলেন না। এক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করলে সেখানে একদল মুসলমানের দেখা পেতাম। অবশ্যই প্রয়োজন হলেই মুসলমানদের কাছে যাওয়া যাবে এমন অবস্থাও ছিল না। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও ইসলাম এবং এর শিক্ষাগুলো অধ্যয়নের আকর্ষণ আমাকে প্রতি মুহূর্তে এ ধর্মের দিকে আসার আহ্বান জানাচ্ছিল। তাই আল্লাহর ওপর ভরসা করে মুসলমান হয়ে যাই। মহান আল্লাহও আমাকে প্রতি মুহূর্তে সহায়তা করেছেন এবং সব কঠোরতা তিনি দূর করে দিয়েছেন।
সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ ধর্ম হিসেবে ইসলামকে গ্রহণের পর নিজ অনুভূতি প্রসঙ্গে সুইডেনের নাগরিক কার্লসন বলেছেন,
'আমি এখন খুবই খুশি ও আগের সেই উদ্বেগ ও হৃদয়ের ধুক-ধুকানি নেই। ঈমান আনার কারণে ও আল্লাহর সুরক্ষার কারণে প্রশান্তি অর্জন করেছি। বন্ধুরা বলছেন, আমি খুবই প্রশান্তময় ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করছি এবং বিশেষ নম্রতা ও প্রশান্তি পেয়েছি।'
তিনি আরো বলেছেন: মোট কথা ইসলাম আমার সার্বিক দিকের বিপুল উন্নতি ঘটিয়েছে। সম্ভবত এ জন্য যে আমার অনুসন্ধান ও গবেষণা শেষ পর্যন্ত প্রশান্তির মাধ্যমে শেষ হয়েছে। আমার অতীতের সঙ্গে এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য যা মুসলমান হওয়ার মাধ্যমে অর্জন করেছি আমি। #