‘আহলে বাইত বার্তা সংস্থা’

সূত্র : Parstoday
বুধবার

৩১ অক্টোবর ২০১৮

৩:৪৯:১০ PM
914893

মহানবীর নাতির চেহলামই এখন বিশ্বের বৃহত্তম বার্ষিক ধর্মীয়-সমাবেশ : ফ্রান্স24 টিভি

আজ ঐতিহাসিক বিশে সফর তথা ইমাম হুসাইন (আ)'র শাহাদাতের চেহলাম-বার্ষিকী বা আরবাঈন। বেশ কয়েক বছর ধরে এ মহান দিবস উদযাপনের জন্য কারবালামুখি বিশ্বের কোটি কোটি শোকার্ত মানুষের পদযাত্রা ও চেহলামের শোক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বা শীর্ষস্থানীয় বার্ষিক ঘটনা হিসেবে লক্ষণীয়।

আবনা ডেস্কঃ আজ ঐতিহাসিক বিশে সফর তথা ইমাম হুসাইন (আ)'র শাহাদাতের চেহলাম-বার্ষিকী বা আরবাঈন। বেশ কয়েক বছর ধরে এ মহান দিবস উদযাপনের জন্য কারবালামুখি বিশ্বের কোটি কোটি শোকার্ত মানুষের পদযাত্রা ও চেহলামের শোক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বা শীর্ষস্থানীয় বার্ষিক ঘটনা হিসেবে লক্ষণীয়।
কিন্তু তথ্য-সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত ও পাশ্চাত্যের নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের বড় বড় সংবাদ-মাধ্যম বা গণমাধ্যমগুলোয় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ মহান দিবস উদযাপনের ব্যাপক বিস্তৃতি ও পরিসর পশ্চিমা শক্তিগুলোর এই নিষেধাজ্ঞাকে অকার্যকর করে দিচ্ছে। ফলে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোও এখন বিশ্বের বৃহত্তম এই সমাবেশের বাস্তবতা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে।
ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর টেলিভিশন চ্যানেল এক প্রতিবেদনে মহানবীর নাতির শাহাদাতের চেহলাম-বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পদযাত্রার কথা তুলে ধরে এ সংক্রান্ত নানা অনুষ্ঠানকে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান বলে উল্লেখ করেছে। শিয়া ও সুন্নি নির্বিশেষে কয়েক মিলিয়ন মুসলমান এ উপলক্ষে কারবালা শহরে হাজির হয়েছে বলে টেলিভিশনটি উল্লেখ করেছে।
উল্লেখ, ইমাম-প্রেমিক কোটি কোটি মুসলমানের থাকা ও খাওয়াসহ বিনামূল্যে নানা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে মূলত ইরাকি জনগণের পক্ষ থেকেই।
আজ হতে ১৩৭৯ বছর আগে ৬১ হিজরিতে খোদাদ্রোহী ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার স্বৈরশাসনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করায় ও ইয়াজিদ-বিরোধী গণ-জাগরণ সৃষ্টির চেষ্টা চালানোর দায়ে মহানবীর (সা) কনিষ্ঠ এই নাতি এবং তার পরিবার-পরিজনসহ প্রায় ১০০ জন সঙ্গীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল পানি-অবরোধসহ এক অসম যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে বীর-বিক্রমে প্রতিরোধ চালিয়ে ইমাম হুসাইন (আ) ও তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শাহাদত বরণ করেন।
ইয়াজিদ-প্রশাসনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কেড়ে নিয়েছিল ইমামের দুধের শিশুসহ নবী-পরিবারের অনেক সদস্যের জীবন এবং নবী-পরিবারকে বন্দি অবস্থায় নেয়া হয় দামেস্কে। এর আগে ইমাম শিবিরের তাঁবুগুলোতে আগুন দিয়ে লুট-তরাজ চালানো হয় এবং শহীদদের লাশগুলোকে দলিত-মথিত করা হয় ঘোড়া চালিয়ে! শাহাদাতের আগে সর্ব-সাধারণের প্রতি ইমামের সর্বশেষ আহ্বান ছিল: আল্লাহর পথে কেউ কি আমাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত?
উমাইয়া রাজবংশ চেয়েছিল বিশ্বনবীর (সা) আহলে বাইত এবং নবী-বংশের নাম চিরতরে মুছে যাক। কিন্তু ঘটনা হয়েছিল বুমেরাং। আজও ইমাম হুসাইন তথা নবী-বংশ হয়ে আছেন সবচেয়ে জীবন্ত ও জনপ্রিয়। অন্যদিকে ইয়াজিদ ও তার দল-বল এবং মদদদাতারা হয়ে আছেন সবচেয়ে ধিক্কৃত ও কলঙ্কিত।
বিশ্বনবীর আহলে বাইতের প্রধান অনুসারী তথা শিয়া মুসলমানদের ব্যাপারে বলা হয় যে তাদের মেহরাব রক্ত-রঞ্জিত মেহরাব! তাদের রক্ত-রঞ্জিত আদর্শ ও উত্থান আজ অন্য মুসলমানদেরকে ও এমনকি অমুসলমানদেরকেও আকৃষ্ট করছে ইমাম হুসাইনের ন্যায়বিচারকামী ও জুলুম-বিরোধী সংগ্রামী আদর্শের কল্যাণে। ফলে ইমামের চেহলাম হয়ে উঠছে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য, ইসলামী শক্তি ও বিশ্ব-ইসলামী জাগরণের অনন্য সোপানরূপে।
প্রায় ১০০টি দেশ ও জাতির সম্মিলন-কেন্দ্র হয়ে পড়েছে ইমাম হুসাইনের (আ) চেহলাম। ইমাম হুসাইনের আত্মত্যাগের আদর্শকে ঘিরে মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জাগরণ নতুন কোনো ঘটনা না হলেও তার এমন ব্যাপকতা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। এই বিশেষ দিকের কথা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক ঘটনা-প্রবাহের প্রখ্যাত বিশ্লেষক জনাব রুইওয়ারান বলেছেন, এ মহাসম্মেলন শান্তি ও স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত এবং মুসলমানদের শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদির শাসন-ব্যবস্থার নানা মূল্যবোধ ও নতুন সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টাকে তুলে ধরছে। সাম্রাজ্যবাদের প্রতিরোধকামী অক্ষের শক্তি হিসেবে ইরান ও ইরাক অঞ্চলে এভাবে জোরদার হচ্ছে আত্মত্যাগের সংস্কৃতি।
রুইওয়ারানের মতে আরবাঈন প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোর সাংস্কৃতিক অক্ষ। পবিত্র হজ থেকে মুসলমানরা যে শক্তি পেতে পারত তা সৌদি বাধার কারণে সম্ভব না হওয়ায় মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আরবাঈন সেই শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে বিশ্বের বিপ্লবী মুসলমানদেরকে। এভাবে আরবাঈন ইসলামী সভ্যতার এবং ন্যায় ও মুক্তি প্রতিষ্ঠার চালিকা-শক্তি হয়ে পড়ায় পাশ্চাত্য তার প্রচারকে রুখে দিতে চায় বলে এই বিশ্লেষক মনে করছেন।
অন্য কথায় আশুরার চিরন্তন শিক্ষাই প্রতিফলিত হচ্ছে আরবাঈনে যা সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক, মানবীয় ও অন্য অনেক জরুরি ক্ষেত্রে ইসলাম আর মুসলমানদেরকে দিয়েছে অনন্য শক্তি।#