সৌদি আরব ২০২৫ সালের হজ মৌসুমের শেষ নাগাদ ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া, মিশর, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, তিউনিসিয়া, ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান সহ ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য ওমরাহ, পারিবারিক ভ্রমণ এবং ব্যবসায়িক ভিসা প্রদান স্থগিত করেছে।
আসন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় অননুমোদিত প্রবেশ রোধ এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভিসা প্রদানে এই আকস্মিক স্থগিতাদেশ।
সৌদি কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছেন যে এই নিষেধাজ্ঞা একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা এবং লজিস্টিক দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য এটি নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালে একটি মর্মান্তিক ঘটনার পর যেখানে অতিরিক্ত ভিড় এবং প্রচণ্ড গরমে এক হাজারেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল। এই নতুন বিধিনিষেধ, যা ২০২৫ সালের জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সৌদি আরবের সবচেয়ে কঠোর ভিসা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে একটি।
এই পদক্ষেপ এশিয়া ও আফ্রিকার লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী এবং ভ্রমণকারীদের জন্য মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে, ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ পরিকল্পনা, ফ্লাইট বুকিং এবং ধর্মীয় তীর্থযাত্রা ব্যাহত করছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং কূটনৈতিক চ্যানেলের তথ্য অনুযায়ী, এই স্থগিতাদেশ একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা এবং হজ মৌসুমের শেষ পর্যন্ত এটি বহাল থাকবে।
যদিও এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হজযাত্রার সরবরাহ সহজতর করা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এটি ইতিমধ্যেই এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক অংশীদারদের ভ্রমণ পরিকল্পনা, ধর্মীয় প্রকল্প এবং পর্যটন রাজস্বে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ শিল্প এখন তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে, অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে সাম্প্রতিক বছরগুলির মধ্যে হজ-পূর্ববর্তী সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ বলে অভিহিত করছেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে এই সিদ্ধান্তের ফলে নিম্নলিখিত বিভাগগুলির ভিসা প্রভাবিত হবে: ওমরাহ ভিসা, ব্যবসায়িক ভিজিট ভিসা এবং পারিবারিক ভিজিট ভিসা।
এই স্থগিতাদেশগুলি হজ তামাত্তুতে অননুমোদিত অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে লড়াই করার বৃহত্তর পদক্ষেপের অংশ, বিশেষ করে যেখানে হজযাত্রীরা হজ ব্যবস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধন না করেই সফর বা ওমরাহ ভিসা ব্যবহার করে হজ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এখন পর্যন্ত, ১৩টি দেশকে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এবং আরও একটি দেশ এই তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে, যার নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি। অনুমোদিত তালিকার মধ্যে রয়েছে: মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, জর্ডান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, আলজেরিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন।
এই দেশগুলি সৌদি আরবে ধর্মীয় পর্যটনের সবচেয়ে বড় উৎসগুলির মধ্যে একটি, এবং তাদের জন্য ভিসা স্থগিত করার ফলে আঞ্চলিক ফ্লাইট, ভিসা প্রদান কেন্দ্র, ভ্রমণ সংস্থা এবং ধর্মীয় পর্যটন সংস্থাগুলির উপর প্রভাব পড়বে।
সৌদি কর্মকর্তারা ব্যাখ্যা করেছেন যে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, বরং জননিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য একটি প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে ২০২৪ সালের হজ বিপর্যয়ের পরে, যেখানে অতিরিক্ত ভিড় এবং তীব্র তাপের কারণে এক হাজারেরও বেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল।
তদন্তে দেখা গেছে যে এই তীর্থযাত্রীদের একটি বড় অংশ হজ ভিসা ছাড়াও দেশে প্রবেশ করেছিলেন, যা অবৈধ বা অনিয়ন্ত্রিত তীর্থযাত্রার আচরণ সম্পর্কে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছরের মানবিক সংকটের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে মোহাম্মদ বিন সালমান ২০২৫ সালে প্রবেশের অনুমতির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য অভিবাসন ও হজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো একটি নিরাপদ, দক্ষ এবং বৈধ হজ মৌসুম অনুষ্ঠিত করা।
প্রতিবেদন অনুসারে, তালিকাভুক্ত দেশগুলির জন্য ভিসা শুধুমাত্র ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ (২৪ ফারভার্ডিন) পর্যন্ত জারি করা হবে। ওই তারিখের পর, সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশ কার্যকর করা হবে এবং হজ্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের এই সময়কাল তাদের জন্য সীমিত সুযোগ যারা এখনও বৈধ ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে চান।
342/
Your Comment