১১ এপ্রিল ২০২৫ - ১৯:১৩
Source: Parstoday
ইরান কেন তেহরান-ওয়াশিংটন আলোচনা থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বাদ দিল?

একজন ইরানি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইরানের সাথে আলোচনার জন্য মার্কিন চিঠির জবাব পাঠানোর ক্ষেত্রে আবুধাবির প্রতি ইরানের অবিশ্বাসের গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। আর তা হচ্ছে ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ কিছুদিন আগে একটি সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে তেহরানে আসেন এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচির সাথে সাক্ষাত ও আলোচনা করেন। এই সাক্ষাতের সময়, গারগাশ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লেখা একটি চিঠি পৌঁছে দেন যা বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনেয়ির কাছে পাঠানো হয়েছিল। "খবর অনলাইন" ওয়েবসাইটের উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ রসুল সালিমি তার এক বিশ্লেষণে লিখেছেন: "আমিরাতের মাধ্যমে ট্রাম্পের চিঠির জবাব পাঠাতে ইরান অস্বীকৃতি জানানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে একটি হল ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এই দেশের প্রতি অনাস্থা।" সংযুক্ত আরব আমিরাত পূর্বে আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইসরাইলের সাথে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। তেহরানের মনে করে, আমিরাতের এই পদক্ষেপের অর্থ ছিল এই অঞ্চলে ইরানের প্রধান শত্রুর সাথে হাত মেলানো এবং এই সম্পর্কের অর্থ হল আবুধাবি তেহরানের জন্য নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হতে পারে না।

মধ্যস্থতাকারী হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অবিশ্বাস করার কারণ অনভিজ্ঞতা

সালিমি আরও বলেন: ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতার দীর্ঘ ও সফল ইতিহাস রয়েছে ওমানের। কিন্তু, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই ক্ষেত্রে খুব বেশি অভিজ্ঞতা নেই এবং তারা কূটনৈতিক মধ্যস্থতার চেয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে বেশি পরিচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত সম্ভবত ওয়াশিংটনের সাথে আবুধাবির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে, ইরানের সাথে তাদের অবস্থানের কারণে নয়। প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানের সাথে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেশি জড়িত, বিশেষ করে তিনটি দ্বীপ (তুম্বে বুজুর্গ, তুম্বে কুচেক এবং বু মুসা) নিয়ে।

দেশীয় রাজনৈতিক এবং কৌশলগত বিবেচনা

এই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, ট্রাম্পের চিঠির জবাব সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমে না দেয়ার পেছনে ইরানের সিদ্ধান্তের কারণ অভ্যন্তরীণ। ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হুমকি এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা থাকায় ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ কোনও দেশের সাথে যেকোনো সহযোগিতা ইরানের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সমালোচনার জন্ম দিতে পারে।

ওমানের নিরপেক্ষতা এবং স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি

বিশ্লেষণে বলা হয়েছে: সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপরীতে, ওমান একটি নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িত হওয়া এড়িয়ে চলে। দেশটি কেবল ইরানের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখেনি বরং আব্রাহাম চুক্তির মতো ইরান-বিরোধী জোটে যোগ দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই নিরপেক্ষতা হরমুজ প্রণালীতে ওমানের ভৌগোলিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে যেখানে যা কিনা ইরান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের যুক্তি হলো, উত্তেজনা কমাতে ওমানের একটি শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে যা কিনা তাদের কূটনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে।

ইরানের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক আস্থা

সালিমি আরও বলেন: "ইরান-ওমান সম্পর্ক ইসলামিক বিপ্লবের আগে থেকেই ছিল এবং নিষেধাজ্ঞার সময়কালেও তা বজায় ছিল।" ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ওমান নিরপেক্ষ ছিল এবং আরব দেশগুলির সাথে তেহরানের সম্পর্ক উন্নত করতে দেশটি সহায়তা করেছিল। এই পারস্পরিক আস্থার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ওমান ইরানের আস্থা অর্জন করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রসুল সালিমি বলেন: "সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবর্তে ওমানকে বেছে নেওয়া ইরানের পরোক্ষ কূটনীতিতে নিজের স্বাধীনতা বজায় রাখার কৌশলের অংশ।" এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে, ইরান দেখিয়েছে যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্রদের পছন্দের মাধ্যম বা চ্যানেলগুলো গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নয়।#

342/

Your Comment

You are replying to: .
captcha